এবার রসুনের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়াবে
হঠাৎ রসুনের বাজারে দামের উল্লম্ফন। পণ্যটির দাম এখন আকাশছোঁয়া। নানা অজুহাতে বাড়ছে রসুনের দাম। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে রসুনের দাম পাইকারি বাজারে ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং খুচরা বাজারে বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
রাজধানীর খুচরা বাজারে সঙ্গে পাইকারি বাজারের বিস্তর ব্যবধানসহ আকাশছোঁয়া দামে রসুন বিক্রি করতে দেখা গেছে। সরকার দ্রুত পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রসুনের দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার রাতে রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, কাপ্তানবাজারসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় এবং দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। অথচ গত শুক্রবার এসব বাজারে আমদানি করা প্রতিকেজি রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকায় এবং দেশি রসুন ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ দু’দিনের ব্যবধানে দেশের খুচরা বাজারে আমদানি করা প্রতিকেজি রসুনের দাম ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং দেশি রসুন ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।
রাজধানীর শ্যামবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রোববার প্রতিকেজি আমদানি করা রসুন ২০৫-২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে আমদানি করা রসুন নেই বলে জানিয়েছেন তারা। তবে প্রত্যেক আড়তে দেশি রসুনের ভরপুর মজুদ দেখা গেছে।
পাইকাররা আরও জানিয়েছেন, মাঝে দু’একদিন আমদানি জটিলতার কারণে রসুনের দাম বাড়ে। পাইকারি বাজারে সামান্য বাড়লেও খুচরা বাজারে ভোক্তাদের নিকট চড়া দামে রসুন বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। তাই খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, পাইকারি বাজারে রসুনের দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু দামের বিস্তর ফারাকের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, পাইকারি বাজার থেকে রসুন কিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক খরচ হয়। তা যোগ করে হিসাব করলে একটু বাড়তি দামেই পণ্য বিক্রি করতে হয়।
পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরার পার্থক্য
আমদানি করা প্রতিকেজি রসুন পাইকারি বাজারে রোববার বিক্রি হয়েছে ২০৫ থেকে ২১০ টাকায় অথচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। অর্থাৎ ক্রয়মূল্যের চেয়ে মুনাফা করছে ৫৫-৭০ টাকা।
কাপ্তান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ফরিদপুর ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী হাজী জামাল উদ্দিন বলেছেন, ‘হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে রসুনের দাম বেড়ে যায়। শনিবার বাজারে রসুনের জন্য গেলে চড়া দাম চায় পাইকাররা। পরে চড়া দামেই রসুন এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
শ্যামবাজারের পাইকার মেসার্স সুরমা বাণিজ্যালয়ের সত্বাধিকারী স্বপন রায় বলেন, ‘রসুনের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে সম্পর্ক হচ্ছে আমদানিকারকদের। আমরা পণ্য বিক্রি করলে আমদানিকারকরা আমাদের একটি কমিশন দেয়।’ তবে দু’একদিন ধরে বাজারে রসুনের ক্রাইসিস রয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হিসাব মতে, রোববার আমদানি করা রসুন ২৫০ টাকা থেকে ২৭০ টাকায় এবং দেশি রসুন ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ শুক্রবার আমদানি করা রসুন ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় এবং দেশী রসুন ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সংস্থাটির হিসেব মতে, দুদিনের ব্যবধানে আমদানি করা প্রতিকেজি রসুনের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং দেশি রসুনের দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।
গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। গত এক মাস আগে দেশি রসুন ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১৭৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে কী কারণে দাম বেড়েছে সে সম্পর্কে টিসিবি জানায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানের আগেই রসুনসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবারের রমজানে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যদি এভাবে দাম বাড়তে থাকে তাহলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই শিগগিরই সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
মন্তব্য চালু নেই