এবার মেয়েদের হোস্টেলেও সতর্কতা

সম্প্রতি দেশে জঙ্গি হামলা এবং কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধানের পর ছাত্রী হোস্টেল নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে মালিকদের। ইতিমধ্যেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত এসব হোস্টেল মালিকরা।

তবে বিভিন্ন ঘটনায় বাড়ির মালিকদের পুলিশি হেফাজতে নেয়ার পর নতুন করে ভাবছেন হোস্টেল মালিকরা। হোস্টেলে থাকা মেয়েদের জাতীয় পরিচয়পত্র, স্থায়ী ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করতে আসা মেয়েদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি এবং স্থায়ী ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

রাজধানী ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডের মুক্তি হোস্টেলের মালিক আবদুল মুত্তালিব মধু। চার বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী মিলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে হোস্টেল ব্যবসা করছেন। পঞ্চাশ সিটের এই হোস্টেলে উঠতে প্রাথমিকভাবে একটি ফরম পূরণ করতে হতো। পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন মুত্তালিব।

তবে দেশের বর্তমান জঙ্গি সমস্যার কথা মাথায় রেখে নিজেদের এবং হোস্টেলের মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নতুন পদ্ধতি শুরু করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমদিকে এত কাগজপত্র জমা নেইনি। কিন্তু এখন জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড, স্থায়ী ঠিকানা এসব কিছু ভর্তির সময় নিয়ে রাখি।

এছাড়াও হোস্টেলে থাকাকালীন সময়ে লোকাল গার্ডিয়ান যারা দেখা করতে আসবে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জমা নেই। যেন আমার হোস্টেলের মেয়েদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রয়োজনে জমা দিতে পারি।

মুত্তালিব বলেন, প্রথম দিকে ভেবেছিলাম ব্যাচেলর যারা ভাড়া দেয় তাদেরই সমস্যা। কিন্তু এখন দেখছি বিভিন্ন জায়গায় মেয়েরাও ধরা পড়ছে। আমার মেঝো মেয়ে ইডেনে পড়ে। শুনেছি সেখানেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে কয়জন মেয়েকে আটক করছে। তাই চেষ্টা করছি নিজেদের জন্য এবং হোস্টেলে থাকা মেয়েদের জন্য সাধ্যমতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে।

হোস্টেলে বাড়তি কাগজপত্র জমা দেয়ার ব্যাপারে আপত্তি নেই এখানে থাকা মেয়েদেরও। মুক্তি হোস্টেলের কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

এতে করে আশপাশের মেয়েদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকবে। পরবর্তীতে যেন মালিক কিংবা ছাত্রী কারো কোনো অসুবিধা না হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারজানা শবনম বলেন, প্রায় দুই বছর থাকছি এখানে। আশা করছি কোনো সমস্যা না হলে পড়ালেখা শেষ হলেই এখান থেকে বের হব। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটু শঙ্কিত সবাই।

যে কারণে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য হোস্টেল মালিকরা নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমরাও সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তার চেষ্টা করছি। উইজডম হোস্টেলের মালিক নাসরিন জেরিন বলেন, পুলিশের ভাড়াটিয়া ফরম পেয়েছি। কিন্তু এখনও সেগুলো জমা দেয়া হয়নি। মেয়েরা পূরণ করে দিলেই জমা দেব।

ব্যক্তিমালিকানাধীন হোস্টেল ছাড়াও মহিলা কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হলগুলোতে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ইডেন মহিলা কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

অফিসিয়াল নোটিস ছাড়া ছাত্রীদের গার্ডিয়ানদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আর মেয়েদের হলগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট হলের ছাত্রী ছাড়া অন্য হলের কিংবা কলেজের কোনো ছাত্রীকে হলে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।

আয়েশা সিদ্দিকা হলের মাস্টার্সের ছাত্রী আসমা-উল-হুসনা বলেন, গুলশান এবং কল্যাণপুরে জঙ্গি ঘটনার পর থেকেই হলগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিজেদের বন্ধুদের চাইলেই হলে থাকতে দেয়া যেত। এখন আর সেই সুযোগ নেই। আমাদের হলগুলোতে নেতারা নিজ উদ্যোগে রাতের বেলায় তল্লাশি অভিযান করেন।

আসমা বলেন, এখন তো কলেজে পরিচয়পত্র ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। অনেক সময়ই নিজেদের পরিচিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা কলেজে এসে গল্প করতো, সময় কাটাতো। নিরাপত্তার কারণে এখন আর সেই সুযোগ নেই। তবে আমরাও নিজ নিজ জায়গায় সচেতন থাকি যেন কলেজছাত্রীরা কোনো ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ কাজে জড়াতে না পারে।

সুফিয়া হলের ছাত্রী শামীমা সুলতানা বলেন, কলেজে এর আগে এমন নিরাপত্তা আমি দেখিনি। হলগুলোতেও নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কয়েক দিন আগে সন্দেহভাজন পাঁচ ছাত্রীকে আটক করার খবরে সবার মধ্যেই একটা অস্থিরতা কাজ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে অন্য ছাত্রীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। নিরাপত্তার কারণেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান গেটে থাকা নিরাপত্তাকর্মী। সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী কারিমা সুলতানা বলেন, হলের ভেতরে বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।

এছাড়াও কোনো ধরনের সন্দেহভাজন কিছু মনে হলেই হল সুপার কিংবা নেতাদের অবগত করার আদেশ দেয়া হয়েছে। রিমা জানান, হলের ভেতর অন্য বন্ধুদের আনা যায় না। তবে সবাই নতুন এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন।

তবে দুই একজন মেয়ে যারা একটু বেশি পর্দা করেন তাদের দিকে নজর রাখার খবর শোনা গেছে। এরই মধ্যে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা এবং হলের কোনো মেয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছে কি-না সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে আছেন কর্তৃপক্ষ।-এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই