এবার মুজাহিদের আপিল শুনানি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের আপিল শুনানি যেকোনো দিন শুরু হবে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ মুজাহিদের আপিলটি শুনবেন। বেঞ্চের বাকি তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলোর মধ্যে মুজাহিদের আপিলটি সবার আগে শুরু হওয়ার কথা। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল এ মামলাটি শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকায় এসেছিল।

কী আছে মুজাহিদের ভাগ্যে? মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, আমৃত্য কারাদণ্ড, মেয়াদভিত্তিক সাজা নাকি খালাস? আপিল শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায়েই তা নির্ধারিত হবে।

এর আগে ১১ এপ্রিল রাতে চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

তারও আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে জামায়াতের আরেক নেতা কাদের মোল্লা ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১৩ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন মুজাহিদ।

ওই বছরের ১৭ জুলাই মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত রাষ্ট্রপক্ষের ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়।

প্রথম অভিযোগ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসির আদেশ হয় এই জামায়াত নেতার। এ ছাড়া সপ্তম অভিযোগ ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায়ও মুজাহিদকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়।

পঞ্চম অভিযোগ- সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলাযোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, শহীদজননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমী, বদিউজ্জামান, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরোনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন।

তৃতীয় অভিযোগ- ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় মুজাহিদকে।

তবে দ্বিতীয় অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হিন্দু গ্রামে গণহত্যা এবং চতুর্থ অভিযোগে আলফাডাঙ্গার আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও তাতে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে না পারায়, ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ দুই অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি ফরিদপুরের খাবাসপুরে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের জন্ম। ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক পাসের পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন এবং উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র থাকাকালেই জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তাকে সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

স্বাধীনতার পর মুজাহিদ জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ১৯৮২ সালে কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য হন। ২০০০ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পান মুজাহিদ। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহানের মামলাও আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই