এবার টার্গেট ঢাকা!

সরকার বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে রাজধানীর বাইরে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সামর্থ নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও অভিযোগের কাঠগড়ায় রয়েছে দলটির ঢাকা মহানগর শাখা। তবে আসছে জানুয়ারিতে ঢাকা কাঁপাতে প্রস্তুতি চলছে দলের সবচেয়ে ‘গুরুত্বপূর্ন’ এই শাখাটিতে।

সংগঠনের একটি সূত্র মতে, রাজধানী ঢাকাকেই আন্দোলনের প্রধান টার্গেট করে একের পর এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে দলের হাইকমান্ডের ‘বিশেষ নির্দেশনায়’ ঢাকা মহানগর কমিটি পূনর্গঠনের কাজও দ্রুত শেষ করে আনা হয়েছে।

এমনটিই বলেছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে এদেশের জনগণ একটা বড় ধরনের আন্দোলন দ্রুতই প্রত্যাশা করছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি তাদের সেই প্রত্যাশা পূরন করতে সক্ষম হবে। একারণে মহানগর কমিটি পূনর্গঠনের কাজও অনেক দূর এগিয়েছে।’

তবে ঠিক কত শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কৌশলগত কারনেই আমরা এই বিষয়টি বলতে চাচ্ছিনা। তবে খুব শিগগিরই বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে জানানো হবে।’ তার ভাষায়, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো চ্যালেঞ্জে হারি নাই। এবারও হারবো না। কথা কম, কাজ বেশি।’

আন্দোলন পরিকল্পনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান টার্গেট এবার ঢাকা। প্রায় প্রতিটি জনসভায়ই তিনি ভবিষ্যতে ঢাকার আন্দোলন নিয়ে তার প্রত্যাশার কথা বলেছেন। এবার সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ খালি থাকবে না বলে ছাত্র কনভেনশনে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। গুলি, বন্দুক, কাঁদানে গ্যাস উপেক্ষা করে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বানও জানান বিএনপি প্রধান।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসেই সরকার বিরোধী আন্দোলনের ছক নিয়ে এগোবে দলটি। এ লক্ষে ৫জানুয়ারিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে ওইদিন ঢাকায় বড় ধরনের জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসলে হরতাল কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের মাঠে প্রবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।

একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি নির্বাচনের পন্থা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বের করার আহ্বান জানিয়ে স্বল্পমেয়াদি আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। এতে সরকার সাড়া না দিলে লাগাতার কঠোর আন্দোলনে যাবে বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে অতীতের মতো আন্দালনে দীর্ঘসূত্রিতার পরিবর্তে কম সময়ের মধ্যে কার্যকর ফল চায় দলটি।

সূত্রের দাবি, চুড়ান্ত আন্দোলনের কৌশল নিয়ে কোনো প্রস্তাব থাকলে তা লিখিত আকারে জানাতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এছাড়া সরকারকে সংলাপে বসাতে আন্দোলনের পাশাপাশি চাপ অব্যাহত রাখতে চলবে কূটনৈতিক তৎপরতা। সেজন্য আন্দোলনে যাতে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন থাকে সে ব্যাপারেও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির ‘কূটনীতিক মিত্রগুলো’ থেকে ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এদিকে আন্দোলনের আগে দল পূনর্গঠনের ক্ষেত্রে অঙ্গ সংগঠনগুলোতে আপাতত হাত দিচ্ছে না বিএনপি। জানা গেছে, ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষনার পর সৃষ্ট অস্থিরতার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের নতুন কমিটি আন্দোলনে আগে আর হচ্ছেনা।

খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ৫জানুয়ারির নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে শুধু ঢাকার আন্দোলনের ব্যর্থতার কারনেই ফল ঘরে তুলতে পারেনি বিএনপি। তাই এবার আন্দোলনে ঢাকাকে প্রধান টার্গেট করে আন্দোলনের রূপরেখা সাজাচ্ছে বিএনপি প্রধান।

এ লক্ষ্যে মহানগর নেতাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিরতিতে একের পর এক বৈঠক করছেন তিনি। নিজেই মহানগর নিয়ে বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন, কমিটি দেওয়ার বিষয়ে দেখভালো করেছেন। সেজন্য কমিটির কাজও দ্রুত প্রায় ৭০ ভাগ শেষ করে আনা হয়েছে। সর্বশেষ রোববার রাতে ঢাকা মহানগরের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন তিনি।

যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও মহানগর নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।

তবে এসব বৈঠকের বিষয়বস্তু রাখা হচ্ছে গোপনে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুরে শরিকদলের মহানগর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মির্জা আব্বাস। সেখানে জোটের ঢাকা মহানগরের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে আন্দোলনের জন্য জোটের মিত্রদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া চান ভবিষ্যত আন্দোলনে ঢাকা অচলের জন্য এর আশপাশের জেলাগুলো গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখুক। সেজন্য ঢাকা পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে শেষ মুহুর্তে জনসভা করছেন তিনি। রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জের পর আগামী ২৭ ডিসেম্বর তার গাজীপুরে জনসভা করার কথা রয়েছে। এই সমাবেশের পরেই জানুয়ারি থেকে একদফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে যাবেন খালেদা জিয়া। ওই সমাবেশে দিক নির্দেশনামুলক বক্তব্য রাখতে পারেন বলে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকায় অতীতের আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি হবে না জানিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভবিষ্যতে ঢাকায় জোরদার আন্দোলনের প্রতয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাীকার করতে দ্বিধা নেই সারা দেশে যেভাবে আন্দোলন হয়েছে তার ক্ষুদ্র অংশও ঢাকায় হলে সরকার দাড়াতে পারতো না। এটি কারো একার নয়, সবার দোষ রয়েছে। তবে এবার সারাদেশে আন্দোলন না হলেও ঢাকায় আন্দোলন হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন যে বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পূরণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মহানগর পূনর্গঠনের কাছ ভালো এগিয়েছে। সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছি। এবার ঢাকায় নেতাকর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে নামবেন।’



মন্তব্য চালু নেই