এবার আসছে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিবার লীগ’

জাতীয় প্রেসক্লাব, ডিআরইউ বা ডিপ্লোমা প্রকোশলী ই্নস্টিটিউশনে প্রায়ই কিছু সংগঠনের সেমিনার আয়োজিত হতে দেখা যায়, যাদের অনুষ্ঠানের প্রধান ও বিশেষ অতিথির আসনে বসেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্দিষ্ট কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। সংগঠনগুলোর নামের সঙ্গে থাকে ‘আওয়ামী’ কিংবা ‘লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধু’ কিংবা ‘নৌকা’, ‘স্বাধীনতা’ কিংবা ‘জননেত্রী’ শব্দ। রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘দোকান’ বলে পরিচিতি পাওয়া এসব সংগঠনের তালিকায় এবার যোগ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিবার লীগ’।খবর ঢাকাটাইমসের।

এসব সংগঠন নিয়ে বিব্রত খোদ ক্ষমতাসীন দল। কারণ এসব আয়োজকদের উদ্দেশ্য থাকে সরকারের ওই কর্তাব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক করা, যাকে ব্যবহার করে নানা অপরাধ, অপকর্মে লিপ্ত হয় তারা। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বলে এসব অনুষ্ঠানে নেতাদের যেতে নিষেধ করা আছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের।

কিন্তু এসব থোড়াই আমলে নেন সংগঠনগুলোর সুযোগসন্ধানীরা। দিনে দিনে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ‘দোকান’। শিগগিরই আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিবার লীগ’ নামের সংগঠনটি এরই সর্বশেষ সংযোজন।

আগামী সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম।

তার দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের আনুষ্ঠানিক কার‌্যক্রম শুরু করবেন। চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কিছু জায়গায় ইতিমধ্যে কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিবার লীগের সভাপতির একটি ভিজিটিং কার্ড এই প্রতিবেদকের চোখে পড়ে। কার্ডটির এক পাশে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও শেখ রাসেলের ছবি। অন্য পাশে শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। মাঝখানে লেখা- ‘আবুল কাশেম (মুক্তিযোদ্ধা), সভাপতি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিবার লীগ’। দুটি মোবাইল ফোনের নম্বরও দেয়া আছে। আর নিচে কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়ের ঠিকানা লেখা হয়েছে-‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা-১০০০’। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়ের ঠিকানা।

বর্তমানে কার‌্যালয়টি নির্মাণাধীন থাকায় ১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর একটি ভবন ব্যবহার করা হচ্ছে। আবুল কাশেমের দাবি, অস্থায়ী কার‌্যালয়ে ছাত্রলীগের অফিসের পাশের রুমটি আপাতত তাদের দেয়া হয়েছে।

নিজের সংগঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি তিন মাস ধরে কাজ করতেছি। আগামী সপ্তাহে আশা করি ঢাকায় প্রেসক্লাব বা কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে বিষয়টি জানাব। তবে আমার সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের আপার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে ফেসবুকে প্রতিদিন কথা হয়। আমাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন। তিনিই আমাকে সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।’

‘তোফায়েল ভাই (বাণিজ্যমন্ত্রী), শাজাহান ভাই (নৌ-পরিবহণমন্ত্রী), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি আপার সঙ্গে প্রতিদিন ফেসবুকে কথা হয়। দিনে সবাই ব্যস্ত থাকেন, তাই রাতে কথা বলি।’ বলেন আবুল কাশেম।

নিজের ফেসবুক আইডি কোনটা- জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, ‘আবুল কাশেম নামে আছে। দেখেন আপা, জয় আর আমার ছবি আছে। যে নম্বর দিয়ে খুলছি সেটা কারো কাছে নাই। তাই আপনি না-ও পেতে পারেন।’

নিজের পেশা ও রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার বাড়ি ফেনী। এখন আসলে ব্যবসা করি। কিন্তু খুব ভালো না অবস্থা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি যুদ্ধের সময় ডেপুটি কমান্ডার ছিলাম। পরে পল্লী বিদ্যুতে চাকরি করি। চাকরি করা অবস্থায় কুয়েতে যাই। সেখানে ছিলাম সাত বছর। পরে ইরাক যুদ্ধের সময় দেশে আসলেও আর বিদেশে যাইনি। আমার আবার বিদেশ ভালো লাগে না।’

তিনি বলেন, ‘৯৮ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে আছি। ছাত্র থাকাকালে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। জয়নাল হাজারী ভাই আমার এক বছরের সিনিয়র।’

এদিকে নতুন এই সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। এরা দলের নাম বিক্রি করে অপকর্ম করে। তাই এদের ব্যাপারে আমাদের নতুন করে কিছু বলার নেই।’

এমন ‘দোকান’ সংগঠন আছে আরেক প্রধান দল বিএনপিরও। তবে ক্ষমতায় যখন যে দল থাকে, তাদের পরিচয় ধারণ করা দোকানের পসরা বসে বেশি।



মন্তব্য চালু নেই