অবরোধ, হরতাল, বিক্ষোভ কর্মসূচির পর সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে
এবার আসছে অসহযোগ আন্দোলন
টানা অবরোধ-হরতালে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে মানুষ। এছাড়া নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের অভাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে এসব লাগাতার কর্মসূচি ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসছে। আর এসবের কার্যকারিতা নিয়ে তো প্রশ্ন আছেই।
সর্বশেষ গতকাল শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ২০ দল। কিন্তু সে অর্থে দেশের কোথাও বিক্ষোভ হয়নি। এখানেওখানে ঝটিকা মিছিলের পর নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে গেছে।
এবার নতুন কর্মসূচি নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে তাদের। তবে যেহেতু জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি নির্ধারণের সুযোগ না থাকায় খালেদা জিয়া একাই সিদ্ধান্ত দেবেন সেহেতু তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। তবে জোট নেতারাসহ অনেকের ধারণা, এবার শেষ চেষ্টা হিসেবে অসহযোগের ঘোষণাই দেবেন নেত্রী। এর আগেও তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
বেশ কয়েকদিন ধরে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমানের কাছে রোববার বিকেলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমি ঠিক বলতে পারবো না, আমার ধারণা নেই। আর এখন তো আর আলোচনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় না। সুতরাং আমি আর কী বলবো।’
দুনিয়াজুড়ে যে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ঝড় উঠেছে তার প্রভাব চলমান আন্দোলনে পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। আমরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা আমাদের গর্বের ধন। আমাদের এখানে গণতন্ত্র নেই, জানমালের নিরাপত্তা নেই। এ পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। জাতির মধ্যে নতুন আশা তৈরি হয়েছে। আমি মনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শান্তির পক্ষে, অহিংসার পক্ষে সহিংসতার বিপক্ষে প্রভাব ফেলতে পারে।’
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, টানা অবরোধ কর্মসূচি যখন ঝিমিয়ে আসছিল তখনই ৭২ ঘণ্টার হরতাল দেয় ২০ দল। এরপর থেকে দফায় দফায় হরতাল চলছে। এমনকি হরতালের কারণে চলতি এসএসসি সমমানের পরীক্ষা বারবার পেছাতে হচ্ছে। অবরোধের পর হরতালেও সাধারণ মানুষের সাড়া না থাকায় এবং সর্বশেষ বিক্ষোভ কর্মসূচিও সফল না হওয়ায় এবার নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। কিন্তু ঠিক কোনো কর্মসূচিটা এই মুহূর্তে কার্যকর হবে ভেবে ঠিক করতে পারছেন না নেতারা।
তাছাড়া গত ৫ জানুয়ারি টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পরই ২০ দলের আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়েছে। পেট্রোলবোমা নামক মারণাস্ত্রে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩০ জনের বেশি। আর সারা দেশে বোমাসহ নানা সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৮০ জনের বেশি।
সাধারণ মানুষের প্রাণহানিকর এই কর্মসূচি দেশে বিদেশে সমালোচিত হচ্ছে। যদিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এইসব সহিংসতার সঙ্গে নিজেদের নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করছে। উপরন্তু ক্ষমতাসীন দল পরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকাণ্ডের দায় তাদের ওপর চাপাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। কিন্তু যেহেতু ২০ দলের কর্মসূচিতেই এসব কর্মকাণ্ড ঘটছে সেহেতু তারা যে এই প্রাণহানির দায় এড়াতে পারে না এ ব্যাপারে সবাই একমত। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ঢাকায় সব বিদেশি মিশন এসব সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে।
এ কারণে হরতাল-অবরোধে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়া যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে তাতে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।
এদিকে রোববার হাইকোর্ট হরতাল-অবরোধের নামে যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নৈরাজ্য প্রতিরোধে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটটা শুধু রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি রীতিমতো ধ্বংসাত্মক সহিংসতার দিকে গেছে এবং একপক্ষ আরেক পক্ষকে বিনাশ করার যুদ্ধে নেমেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার বাসনায় বিএনপি ব্যাপক প্রাণহানিতেই তাদের অবস্থান থেকে সরে আসছে না। অপরদিকে সরকার বিরোধীদের দমনে প্রশাসনকে খোলাখুলিভাবে সম্পৃক্ত করছে।
হরতাল-অবরোধে প্রাণহানিতে বিদেশিদের কাছে সমালোচিত এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা এবং এ কারণে বিক্ষোভ দিলেও তা ব্যর্থ হওয়ায় নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আর সেদিক থেকে অসহযোগ ঘোষণার সম্ভাবনাই বেশি।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতিক) নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, ‘অসহযোগের কর্মসূচি আসতেও পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মাননীয় জোট নেত্রী দেবেন। এ মুহূর্তে আমরা এটা নিয়ে আর কিছু বলতে পারছি না। কারণ রাজনৈতিকভাবে যোগাযোগের অসুবিধার কারণে এটিই মনে করি মাননীয় জোট নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’
ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রভাব বিএনপি জোটের আন্দোলনে পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ তো বাংলাদেশে হচ্ছে না। আমি আপনি সবাই সমর্থক। আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য দোয়া করবো। সময় থাকলে অন্য দলের ভালো খেলা দেখবো। বিশ্বকাপের সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ বাংলামেইল
মন্তব্য চালু নেই