অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে অভিনন্দন

এবারের এইচএসসিতে মা-ছেলে একসাথে পাস

ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য চেষ্টার কাছে বয়স যে হার মানে তার প্রমাণ দিলেন এক মা। নিজ সন্তানের সঙ্গে মা পরীক্ষা দিয়ে এ বছর এইচএসসি পাস করেছেন। রেজাল্টও ভালো করেছেন। পেয়েছেন জিপিএ ৩.৭৮। অন্যদিকে, তারই ছেলে পেয়েছে জিপিএ ৪.২৫।

সাংসারিক নানা ব্যস্ততার মাঝেও এমন সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার মেদিলা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মাহাবুবুল আলমের স্ত্রী লিমা আক্তার (৪০)। তিনি উপজেলার শহীদ স্মৃতি মহিলা কলেজের কারিগরি শাখা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৭৮ পেয়ে পাস করেছেন।

অপরদিকে, তার একমাত্র ছেলে শাহ আলম (১৭) উপজেলার বাটাজোর ডিগ্রি কলেজ থেকে অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৪.২৫। মা-ছেলে একসঙ্গে পাস করায় পরিবারসহ এলাকার সকল মানুষ খুশিতে আটখানা।

লিমা আক্তারের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভালুকার উথুরা গ্রামের নুরুল হক মন্ডলের ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে লিমা আক্তার সবার বড়। ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে উথুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। ফলে তার লেখাপড়া থেমে যায়। কিন্তু ভেতরে থেকে যায় লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা।

এদিকে, বিয়ের পরের বছর তিনি মা হন। তার স্বামী কিছু দিন পর একটি এনজিওতে চাকরি নিয়ে টাঙ্গাইলে চলে যান। ওই সময় সংসারের কাজ, শ্বাশুড়িকে দেখাশুনা আর সন্তানের লালন-পালনের পাসাপাসি অবসরে পড়ালেখা করতেন লিমা আক্তার। একপর্যায়ে পাসের বাড়ির সপ্তম, অষ্টম, নবম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের বই এনে নিজে নিজেই বাড়িতে পড়াশুনা করা শুরু করেন।

এরপর ২০০৩ সালে বাড়ির পাসে মেদিলা মুসাফির মঞ্জিল দাখিল মাদরাসায় ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ২০০৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে জিপিএ ২.৫৫ পেয়ে পাস করেন। বিয়ের দীর্ঘ দিন পরও মাদসায় পড়ার সময় লিমা আক্তারকে আশপাসের লোকজন বিদ্রুপ ও হাসি-ঠাট্টা করতো। তবুও থেমে থাকেননি লিমা। কিন্তু পরবর্তীতে নানা সাংসারিক কাজে তার লেখাপড়া আবারও থেমে যায়। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১২ সালে তিনি আবারও উপজেলা বান্ধিয়া গ্রামে স্মৃতি মহিলা কলেজের কারিগরি শাখায় ভর্তি হন।

লিমা ১২ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে প্রতিদিনই কলেজে যেতেন। কলেজের অন্যান্য ছাত্রীরা লিমাকে নানী বলে ডাকতো। সব শিক্ষক তাকে সবসময় উৎসাহ দিতেন। পরে ২০১৪ সালে লিমা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজি বিষয় বাদে সব বিষয়ে পাস করেন। পরে এই বছর তিনি ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে পাস করে এইচএসসিতে কৃতকার্য হন।

অন্যদিকে, তার ছেলে শাহ আলম বাটাজোর ডিগ্রি কলেজের বাণিজ্য শাখা হতে এইচএসসি পাস করে।

৪০ বছর বয়সী লিমার এইচএসসি পাসের ব্যাপারে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। আমার ইচ্ছাশক্তির কারণে এ রকম একটা অসাধ্য কাজ করতে পেরেছি। আমার পরিবার আমাকে সব সময় সাহস দিয়েছে। এ জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’

এ খবরে এলাকার সাধারণ মানুষ খুশি। আনন্দ বিরাজ করছে লিমার কলেজেও।

মায়ের এরূপ অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে অভিনন্দন আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম পরিবারের। আওয়ার নিউজ বিডি মনে করে, সমাজের সকলের সচেতনতা ও অনুপ্রেরণা-ই পারে সুপ্ত প্রতিভাকে যেকোন সময় জাগ্রত করতে।



মন্তব্য চালু নেই