এখনও এক্সপি ব্যবহার করতে চাইলে

সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম ‘উইন্ডোজ এক্সপির’ দিন শেষ। এ বিষয়ে আর আপডেট প্রকাশ করবে না মাইক্রোসফট। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক্সপির অনলাইন সাপোর্টও। ১৩ বছরের পথচলা শেষ হলেও বিশ্বের ২৮ভাগ কম্পিউটারে এখনও চলছে উইন্ডোজ এক্সপি যেগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। তবে, পার্থক্য একটাই। ইন্টারনেট থাকলেও আর সাপোর্ট পাওয়া যাবে না মাইক্রোসফট থেকে।

উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারকারীদের সম্ভাব্য সমস্যা আর তার সমাধান নিয়ে ম্যাশএবলে প্রকাশিত খবর নিয়ে আজকের প্রতিবেদন –

১. ডাউনলোড করুন সর্বশেষ এক্সপি আপডেট

৮ এপ্রিল উইন্ডোজ এক্সপির সর্বশেষ আপডেট প্রকাশ করে মাইক্রোসফট। ডাউনলোড করে নিন লেটেস্ট সিকিউরিটি আপডেট। কারণ এটাই মাইক্রোসফটের সর্বশেষ আপডেট ইস্যু। তবে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ডাচ সরকার মাইক্রোসফটের সঙ্গে নিয়মিত সাপোর্টের জন্য চুক্তি করেছে। দাপ্তরিক কাজে মাইক্রোসফট তাদেরকে নিয়মিত সেবা দেবে বলে জানা গেছে।

২. সক্রিয় করুণ এন্টিভাইরাস ও এন্টি ম্যালওয়্যার টুলস

উইন্ডোজ এক্সপির জন্য ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিনামূল্যে এন্টি-ম্যালওয়্যার আপডেট দেবে মাইক্রোসফট। যদি পুরনো ভার্সনের ম্যাকাফি কিংবা ক্যাসপারস্কি ভাইরাস গার্ড ব্যবহার করেন তবে তা আপডেট করে নিন। কারণ পুরনো ভার্সনের সিকিউরিটি অ্যপ্লিকেশন সাইবার নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়।

৩. ব্যবহার করুন ফায়ারফক্স অথবা ক্রোম

আপনাকে যদি উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করতেই হয় তবে নিশ্চিত হয়ে নিন, আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারটি আপডেট আছে কি না। ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে অধিকাংশ ব্যবহারকারী ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয়।

এমনকি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের লেটেস্ট ভার্সনেও উইন্ডোজ এক্সপিতে আপডেটেড নয়। আপনি যদি এখনও উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করেন তবে আপনি সম্ভবত আইই-৮ ব্যবহার করছেন। যেটি অন্তত দুই ভার্সনের চেয়েও পুরনো।

মজিলা ফায়ারফক্স ও গুগল ক্রোমের পক্ষ থেকে জানা গেছে তারা আগামী দিনগুলোতে এক্সপি সাপোর্ট দেবে।

৪. শুরু করুন আপগ্রেড

উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারের মূল কারণ ৩টি।

আপনার ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ ২০০৭ সালের পুরনো। যেখানে এখনও এক্সপি চলে।

পরিবর্তন সহজে চান না। এছাড়া আপগ্রেড করতে খরচও করতে হয়।

কিছু সুনির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন আছে যেগুলো শুধু এক্সপিতে কাজ করে।

সাইবার নিরাপত্তার ব্যাপারে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার আর নিরাপদ নয়। কারণ এটি অনেক পুরনো অপারেটিং সিস্টেম। তাছাড়া সাইবার আক্রমণকারীরা একে আক্রমণের টুল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। নিরাপত্তার কারণেই এটি ব্যবহার বাদ দেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা। তাই ব্যবহার শুরু করুন নতুন অপারেটিং সিস্টেম।

৫. বেছে নিন নতুন অপারেটিং সিস্টেম

যদি আপনার কম্পিউটারে উইন্ডোজ ৮.১ সাপোর্ট না করে আপনি ২০০ ডলারে এটি আপগ্রেড করতে পারেন। তবে, ২০০ ডলার সফটওয়্যারের পেছনে খরচ না করে একটি নতুন কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ কেনা হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

আপনার পুরনো কম্পিউটারটি বাদ দিতে না চাইলেও ব্যবহার করতে পারেন ভিন্ন কোনো অপারেটিং সিস্টেম। ভাবছেন ম্যাক কম্পিউটার কিনবেন? সেটা ব্যয়বহুল বটে। তবে এক্সপিতে কাজ করার আনন্দ সেখানে না-ও পেতে পারেন। এ জন্য ব্যবহার করতে পারেন লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম। যেটি নতুন কিংবা পুরনো যে কোনো মেশিনে দিব্যি ব্যবহার করতে পারেন কোনো সমস্যা ছাড়াই। লিনাক্সের একটি ভার্সন লিনাক্স মিন্ট, যেটি উইন্ডোজ এক্সপির আদলে তৈরি।

এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন উবুন্ত। তবে ব্রাউজারের ক্ষেত্রে গুগল ক্রোম ব্যবহারকে নিরাপদ বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা।

৬. ব্যাক আপ ও মাইগ্রেইট করুন আপনার ডেটা

উইন্ডোজ এক্সপিকে বিদায় জানানো আগে আপনার ডেটাগুলোর ব্যাক আপ রাখা জরুরি। এ জন্য ব্যবহার করতে পারেন ‘পিসি মুভারএক্সপ্রেস’। বিনামূল্যে অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে পার্সোনাল ফাইলগুলোকে উইন্ডোজ সেভেন কিংবা পরবর্তী ভার্সনে রূপান্তর করা যাবে।

‘উইন্ডোজ মাইগ্রেশন এসিসট্যান্ট’ ব্যবহার করেও কম্পিউটারে থাকা ব্যক্তিগত তথ্যগুলোকে ম্যাক কম্পিউটার কিংবা অন্যকোনো অপারেটিং সিস্টেমে রূপান্তর করা যাবে। এতে একই তথ্য বিভিন্ন মেশিনে ব্যবহার করা যাবে।

৭. ব্যবহার করুন ভার্চুয়াল মেশিন

উইন্ডোজ এক্সপি চলে ভার্চুয়াল মেশিনে। এমন অনেক অ্যাপ্লিকেশন থাকতে পারে যেগুলো উইন্ডোজ ৮.১ এর নিচে কোনো মেশিনে কাজ করবে না। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রোগ্রাম চালাতে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করতেই হয় তবে, ব্যবহার করতে পারেন ভার্চুয়ালবক্স, ভিএমওয়্যার ভিউশন অথবা প্যারালাল ডেস্কটপ। ভার্চুয়ালবক্স বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় এবং এটি উইন্ডোজ, লিনাক্স ও এস এক্স এ ব্যবহার করা যায়।

৮. পরিবর্তন কঠিন, তবে অতি প্রয়োজনীয়

উইন্ডোজ এক্সপি ছাড়তে চান না এমন লোকের সংখ্যা অনেক। এ নিয়ে তাদের ক্ষোভও আছে। এটা এক্সপির সাফল্যের প্রমাণও বটে।

কখনও কখনও পরিবর্তন জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। কম্পিউটার টিভি সেট মাইক্রোওয়েভ কিংবা রেফ্রিজারেটরের মতো নয়। কারণ এগুলোতে আপডেট প্রয়োজন হয় না। ১০ বছর পুরনো হলেও এ জিনিসগুলো আপডেট ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। হয়ত কোনো একদিন কম্পিউটারও এরকম পর্যায়ে পৌঁছুবে। কিন্ত এখন আপডেট ভার্সন থাকা দরকার। যদি আপনি আপনার তথ্য নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে চান তবে এটা আপনার নিরাপত্তার জন্যই জরুরি।



মন্তব্য করুন