এক রান্নাঘর থেকে প্রস্তুত হয় ১২ কোটি মানুষের খাবার!

আজ নয় বছর বয়সী খুশির স্বপ্ন দেখতে কোনো বাধা নেই। স্বপ্নের গন্ডি পেরিয়ে সেই স্বপ্নকে কিভাবে বাস্তবে রূপ দেয়া যায় তাও আজ খুশির জানা। স্কুলে শিক্ষাগ্রহনের মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যত নিজেই গড়ে নেবার প্রত্যয়ে খুশির মতো অনেক শিশু এখন ভারতের বুকে বেড়ে উঠছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাত্র কয়েক বছর আগেও এই শিশুদের স্রেফ একবেলা খাবারের জন্যও সারাটা দিন অপেক্ষা করতে হতো। স্কুলে গেলে বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতে সময় দিতে পারবে না বলে অধিকাংশ শিশুদেরই বাবা তাদের সন্তানদের স্কুলে দিতেন না। কিন্তু আজ এমন সময় এসেছে, যখন দুবেলা খাবারের উছিলায় খুশিরা স্কুলে যাচ্ছে এবং নিজেদের স্বপ্ন বির্নিমানের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

‘যদি একটি পরিবারের কোনো শিশু শিক্ষিত হতে পারে তাহলে সে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে। আর তখন সে তার গোটা পরিবারটিকেই পাল্টে দিতে পারে।’ কথাগুলো বলছিলেন অক্ষয়পাত্র ফাউন্ডেশনের একজন প্রকল্প পরিচালক শ্রী রঘুপতি। এই রঘুপতির সঙ্গেই শুরু হয় অক্ষয়পাত্র ফাউন্ডেশনে আমাদের ঘুরে দেখা। আমরা যখন অক্ষয়পাত্র ফাউন্ডেশনের রান্নাঘরে প্রবেশ করি তখন হাজার হাজার চাপাতি, বিশাল সব কড়াই ভর্তি সবজি, ডাল এবং মিষ্টান্ন সতর্কতার সহিত তৈরি হচ্ছিল। বিশ্বে একমাত্র এই একটিই রান্নাঘর যেখানে প্রতিদিন ১২ কোটি মানুষের জন্য খাবার রান্না করা হয়। শুধু দুপুরের খাবার হিসেবেই প্রতিদিন এই রান্নাঘর থেকে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য খাবার সরবরাহ করা হয়।

২০০০ সাল থেকে স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় অক্ষয়পাত্র ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য এই দুপুর বেলার খাবার কার্যক্রম আরও বড় করতে শুরু করে। ফাউন্ডেশনটির আওতাভুক্ত স্কুলগুলোতে অন্যান্য স্কুলের তুলনায় শিক্ষার্থীর হার প্রায় বিশ শতাংশ বেশি। অবশ্য আমাদের খুশির স্কুলের অধ্যক্ষ সুষমা আগরওয়ার মুখেই শোনা যায়, ‘এই স্কুলের শিশুরা মূলত গরীব পরিবারগুলো থেকে এসেছে। তাদের খাবারের চাহিদা না মেটায় পড়ালেখা করা তাদের জন্য অতটা সহজসাধ্য ছিল না। আর তারা স্কুলে শিক্ষাগ্রহন করতে না পারলে তাদের স্বপ্নগুলোও পূরণ হবে না।’ যদিও সুষমার মুখেই শোনা যায়, কিভাবে ফাউন্ডেশনটি স্কুলটির শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা পালন করেছে। সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সহায়তা করতে এগিয়ে এসে ফাউন্ডেশনটি আজ হাজারও শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

অক্ষয়পাত্র ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য যে খাবার সরবরাহ করে সেটা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই পাঠানো হয়। কারণ গরীব পরিবারের ওই শিশুরা তিনবেলা যে খাবার খায় তার মধ্যে স্কুলের এই খাবারটিই তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে। আগে যেখানে স্কুলে শিশুদের পড়তে আসার হার খুব কম ছিল, এখন সেখানে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। হয়তোবা এই শিক্ষার্থীরা একবেলা ভালো খাবারের জন্যই স্কুলে আসছে, কিন্তু এই স্কুলে আসার ফলে তাদের পড়ালেখাটাও যে হচ্ছে সেটা সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আগের মতো এখন আর শিক্ষার্থীরা স্কুলজীবন শেষ হওয়ার আগেই পড়ালেখা বন্ধ করে দিচ্ছে না এবং পিতা-মাতাও আগ্রহী হয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন।

খুশির স্বপ্ন হলো একজন সৎ পুলিশ হওয়া। তার পরিবারের মতে, খুশি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সে। খুশির পরিবার মাত্র একটি ঘরের মধ্যে বসবাস করে। অনেক সময়ও এমন দিন আসে যখন সপ্তাহের পর সপ্তাহ খুশির বাবার হাতে কোনো কাজ থাকে না। অন্যান্য সময় হলে খুশির সেসময় স্কুলে যাওয়া হয় না, কিন্তু আজ অক্ষয়পাত্র ফাউন্ডেশন হওয়ার কারণে খুশিকে অন্তত স্কুল বন্ধ দিতে হচ্ছে না। তবে আশার কথা হলো, খুশি শুধু আজ একাই নয় তার দুই ভাইও স্কুলে যাচ্ছে। খুশির মা সুমন দেবী যেমনটা বললেন আমাদের, ‘আমি চাই শিক্ষাগ্রহনের ভেতর দিয়ে তারা সামনের দিনে ভালো জীবনযাপন করুক। পড়ালেখা করলে তারা নিজেদের জীবন নিজেরাই গুছিয়ে নিতে পারবে এবং নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে।’



মন্তব্য চালু নেই