এক বোনের এই অসাধারণ লেখাটি বদলে দিতে পারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি

এক বোনের লেখা এই অসাধারণ লেখাটি হয়তো বদলে দিতে পারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। কিভাবে একজন বাবা মায়ের মতো হতে পারে তাও দেখিয়েছে ঐ বোনটি। প্রতিবাদ, প্রতিবাদী আর না-কে হ্যাঁ করার দুঃসাহসিক মনোবলে গড়ে ওঠা বোনটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে অনেক কিছুই।

আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

“জ্ঞান হবার পর দেখেছি আব্বু হুইল চেয়ার ঠেলে আম্মুকে কখনো হসপিটালে, কখনো বেড়াতে, কখনো বাতরুমে নিয়ে যাচ্ছে ।
আমার বয়স যখন সাত আর সাজিদের (আমার ছোট ভাই) চার তখন আম্মু মারা গেল । আমার এতটুকু মনে আছে আব্বু আমাদের দুজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল ।
এর পর থেকে আমাদের সম্পূর্ণ পৃথিবীটা আব্বুময়।
মরিয়ম খালার কাজ ছিল শুধু রান্না করা আর ঘর গোছান । আমাদের স্কুলের জন্য রেডি করা থেকে শুরু করে গোসল খাওয়া সব আব্বুই করত।
ক্লাস সেভেনে যখন প্রথম ঋতুস্রাব হল, আমি কমন রুমে বসে বসে কাঁদছিলাম । ক্লাস মিস আব্বু কে ডেকে পাঠাল ।
আব্বু এসেই হাসি মুখে বলল,
– আমার রাজকুমারী কাঁদছে কেন? তুই না অনেক সাহসী মেয়ে?
কিছুই তো হয়নি রে ।
পুরোটা রাস্তায় আমি আব্বু কে জড়িয়ে কাঁদলাম । আব্বু শুধু হাসছিল আর বলছিল দুর বোকা মেয়ে, কিচ্ছু হয়নি । বাসায় চল তারপর বলছি ।
এরপর প্রতিমাসেই আব্বু মনে করে নিজেই ন্যাপকিন কিনে আনত।
ক্লাস নাইনে যে দিন প্রথম প্রেম পত্র পেলাম,
সেদিন আমি আব্বু দুজনেই চিঠিটা পড়ে বের করেছিলাম, মোট নয়টা বানান ভুল !
আব্বু মুচকি হেসে বলেছিল,
এক কাজ কর ভুল বানাগুলো শুদ্ধ করে একটা উত্তর লিখে দে,
কলেজে নবীন বরণে প্রথম শাড়ি পরেছিলাম ।
আব্বুই কুচি ঠিক করে দিয়েছিল । যদিও কুচি না বলে, দলা বলাই ভাল। কিন্তু সেই শাড়ি পরে আমার আনন্দের সীমা ছিল না ।
আমার আব্বু আমাকে শিখিয়েছে প্রতিবাদ করতে,
না, কে সরাসরি না বলতে ।
আব্বু কোন দিন আমাকে বলেনি ,
মেয়েদের এটা করা ঠিক না ।
সব সময় বলেছে, মানুষের এটা করা ঠিক না ।
ন্যায় অন্যায়ের যে ছেলে ভার্সন, মেয়ে ভার্সন হয়, এটা আমরা দুই ভাই বোন এখনো জানি না ।
এই হল আমার বাবা !
বাবা যে ‘মা’ হতে পারে না, এই কথাটা একেবারেই মিথ্যে।
আমি জানি সাজিদ বড় হয়ে , আমার বাবার মত চমৎকার মা হবে । আমিও আমার বাবার মত চমৎকার মা বাবা দুটোই হব ।

সম্পাদনায় : আবু রায়হান মিকাঈল



মন্তব্য চালু নেই