রহস্যময় এক গাড়ি: অসংখ্য মৃত্যু ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক

এর আগে আমরা রহস্যময় এক দ্বীপ সম্পর্কে জেনেছি। এই লেকটি যেই কিনেন সেই মারা যান। রহস্যময় এই দ্বীপের মতো রহস্যময় একটি গাড়ি রয়েছে। অদ্ভুত এই গাড়িটির মালিক যেই হয়েছেন সেই অল্প কিছুদিনের মধ্যে মারা গিয়েছেন। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে এই ধরনের ঘটনা কারোরই বিশ্বাস করার কথা নয়। তারপরও অতীত থেকে যতদূর জানা যায় তা হলো –

ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯ শতকের শুরুর দিকে। অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আক উয়ুক ফার্দিনান্দের জন্য একটি গাড়ি তৈরি করা হয়। গাড়িটিতে যেদিন প্রথম যুবরাজ ওঠেন সেদিনই তিনি এবং তার স্ত্রী আততায়ীর গুলিতে মারা যান।

এই ঘটনার জন্য অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার মধ্যে যুদ্ধও হয়। সময়টা ছিল ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই। অস্ট্রিয়া সরকারের পক্ষে ঘোষনা করলেন,ফাইভবি দলের সেনা অধিনায়ক পোতারেক । তিনি সারাজিত গভর্নর এর কাছ থেকে গাড়িটি কিনে নেন । দুর্ভাগ্যবশত তিনি যুদ্ধে পরাজিত হন এবং মৃত্যু বরন করেন ।

প্রথম দুটি ঘটনাকে স্বাভাবিক মনে করে সামনের দিকে এগুলো পাওয়া যায় আরও ভয়ংকর তথ্য। এরপর ১৯১৫ সালে প্রদান করা হয় এক ক্যাপ্টেনকে। তিনি ছিলেন ফাইভ-বি সেনাদলের ক্যাপ্টেন। এই গাড়িটির মালিকানা লাভের পর তিনি পৃথিবীতে বেঁচে থাকেন মাত্র ৯ দিন। এই গাড়িতে চড়ে যাওয়ার পথে দুজন যাত্রী সহ তিনি মারা যান।

mysterious-car-pic2

এরপর ৩ বছর গাড়িটি অব্যবহৃত অবস্থাতেই পড়ে ছিল। ১৯১৮ সালে যুগোস্লাভের গভর্নর অস্ট্রিয়া সফরে এসে এই গাড়িটি কিনে নেন। এর ঠিক এক বছর পরই তিনিও ব্রেক ফেল করে মারা যান। এখানেই শেষ নয়। এরপরের শিকার একজন ডাক্তার। সারকিন্স নামের এই ডাক্তার গাড়িতে করে রোগী দেখতে যাওয়ার পথে নদীতে পড়ে মারা যান।

এতসব ঘটনা জানার পরও মানুষ এই গাড়িটি কিনেছেন এবং একের পর একজন মারা গিয়েছেন। এরপর এক সংগ্রাহকের ভাগ্যে মৃত্যু নিয়ে আসে এই গাড়িটি। একদিন এক মোটাল র‌্যালিতে অংশ নিতে গিয়ে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।

এরপর আর সাধারণ কেউ গাড়িটি কেনেন নি। বেশ কিছুদিন পর এক মোটর ম্যাকানিক গাড়িটি কিনে নেন। তিনি তার গ্যারেজে গাড়িটিকে ঘষে মেজে একেবারে নতুন করে তোলেন। এরপর তিনি গাড়িটি একজন ধনী কৃষকের কাছে বিক্রি করে দেন। কৃষক গাড়িটিকে নিয়ে সারায়েভো শহরে প্রবেশ করা মাত্রই শুরু হয়ে যায় ২য় বিশ্বযুদ্ধ। আগে থেকেই মানুষ অভিশপ্ত এই গাড়িটি সম্পর্কে জানতো। তাই সবাই ধরে নেয় অভিশপ্ত এই গাড়িটির কারণেই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

 

শহরবাসী কিছুতেই এই গাড়িটিকে তাদের শহরে থাকতে দিবে না। তারা সেই কৃষককে এই শর্ত দেয় যে, সে যদি গাড়ি ত্যাগ না করে তাহলে তাকে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে। তিনি শহরের মায়া ত্যাগ করে গাড়িটিকে নিয়ে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর ঘটে সবচেয়ে রহস্যময় এক ঘটনা। কিছুটা পথ যাওয়ার পর গাড়িটি বন্ধ হয়ে যায়।

তাই গাড়িটিকে টেনে নেওয়ার জন্য গাড়ির সামনে দুটি বলদ বাঁধা হয় এবং গাড়ির মালিক সেই কৃষক গাড়ির বনেটের উপর উঠে বসেন। সেখান থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর ঘটে সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনাটি। হঠাৎ করেই গাড়িটি স্টাট হয় এবং মুহূতেই বলদ দুটোকে ধাক্কা দিয়ে বনটের উপর বসে থাকা মানুষটিকে পিষে ফেলে ।

mysterious-car-pic3

সবশেষে আবারও এর মালিক হন হস ফিল্ট নামের একজন ম্যাকানিক। তিনিও মেরামত করে গাড়িটিকে নতুন করে তোলেন। কিন্তু এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে যাওয়ার পথে পথচারী একজনকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি সহ ৬ জন মানুষ মারা যায়।

এরপর আর কেউ গাড়িটি কেনার সাহস করেননি। অস্ট্রিয়া সরকার নিজেই গাড়িটি কিনে মিউজিয়ামে রেখে দেয়। অবশেষে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিউজিয়ামের উপর একটি বোমা আঘাত হানলে মিউজিয়াম সহ গাড়িটি পুড়ে যায়।

যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এই রহস্যের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কেউ কোনো কুলকিনারা করতে পারেননি অদ্ভুত এই রহস্যের।



মন্তব্য চালু নেই