এক বছরে ছাত্রদল কমিটির অর্জনের হিসাব-নিকেষ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ আজ (১৪ অক্টোবর) এক বছর পূর্ণ হল। গত বছরের এই দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। এ কমিটি নিয়ে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ছাত্রদলের মধ্যে প্রবল বিক্ষোভ করে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।

এ সময় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাণ্ডবও চলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল। পরে শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপ আর আশ্বাসে আন্দোলন চাপা দেয়া সম্ভব হলেও ক্ষোভ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্বিধা বিভক্ত এ সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতেও ব্যর্থ হয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনকি সংগঠনের প্রাণ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিসহ অন্যান্য কমিটিতেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি নেই।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ২০ দলীয় জোটের সরকার বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে এ সংগঠন। প্রায় তিন মাস ধরে চলা এ আন্দোলনে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করলেও ছিল না কোনো সমন্বয়। গ্রুপ ভিত্তিকভাবেই আন্দোলনে নেন তারা। পুরো আন্দোলনে এ সংগঠনের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক। কিন্তু সেই ক্ষতিকে পুশিয়ে নতুন করে পথ চলা এখনো শুরু করতে পারেনি বলে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।

তারা জানান, আন্দোলন শেষ হয়ে গেলেও একটি বৃহৎ ছাত্রসংগঠন তাদের প্রাত্যহিক রুটিন মতো সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নেতাকর্মীদের নামে মামলা, সংগঠনের সভাপতি রাজীব আহসান কারাগারে থাকাসহ নানা অজুহাতে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করছেন। এর ফলে সারাদেশে শতভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে যুগের পর যুগ চলছে এ সংগঠনের কার্যক্রম। ফলে নতুন কোনো নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি ছাত্রদলের কথিত অভিভাবক হিসেবে পরিচিত নেতারা। উল্টো বিএনপিকে ঢেলে সাজানো হবে এমন সংবাদের পর সারাদেশে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের নামে বাণিজ্য শুরু করেছেন সংগঠনের নেতারা। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠিসহ প্রায় সব জেলাতেই এ অভিযোগ নিয়ে নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। কিন্তু লাভের কিছুই হচ্ছে না।

নেতাকর্মীরা জানান, ছাত্র সংগঠনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের কোনো প্রক্রিয়া এখনও দৃশ্যমান হয়নি। কিন্তু এসব গুরুত্বপূর্ণ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে সংগঠনের কিছু সুবিধাবাদী নেতা মেতে উঠেছেন জেলা পর্যায়ের ইউনিয়ন আর উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে।

সংগঠন সূত্র জানায়, সারাদেশে ছাত্রদলের ৮৭টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে সবগুলোর অর্থাৎ শতভাগ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। অনেক জেলা কমিটির মেয়াদ এক যুগেরও বেশি হয়ে গেছে। কতগুলোর মেয়াদ আবার দেড় যুগও ছাড়িয়েছে। ওইসব কমিটির ছাত্র নেতাদের মধ্যে কেউ এখন মূল দলের দায়িত্বশীল, কেউ ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে ব্যস্ত, কেউ আবার আছেন দেশের বাইরে। কিন্তু তারপরও তারা রয়ে গেছেন ছাত্রদলের কমিটিতে। এসব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেয়ার প্রয়োজনও অনুভব করছে না কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সংগঠনের দীর্ঘ এ সেশনজটের কারণ ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্রদলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। একযুগ আগের কর্মী এখনও কর্মী হিসেবেই রয়ে গেছেন। অথচ এ সংগঠনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনে নিয়মিত কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে ।

নেতাকর্মীরা জানান, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা একটি নিয়মিত কাজ। কিন্তু ছাত্রদলের মতো এত বড় সংগঠনে দির্ঘদিন ধরে এ কার্যক্রম স্থবির হয়ে রয়েছে। বর্তমান কমিটিও তার ব্যতিক্রম নয়। তারাও আগের কমিটির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন। এর ফলে তাদের কাছ থেকে নতুন কিছু প্রত্যাশাও করতে পারছেন না নেতাকর্মীরা।

তারা জানান, শুধু কয়েকটি মিটিং-মিছিল আর প্রেস রিলিজ দিয়ে সংগঠনকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। একে পরিচর্যা করতে হয়। নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হয়। এতে দল ও সংগঠন উভয়ে লাভবান হবে। সংগঠন বেঁচে না থাকলে মিছিল মিটিংও এক সময়ে আর হয়ে উঠবে না।

রাজিব-আকরাম কমিটি নিয়ে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত বিদ্রোহী নেতা রাকিবুল ইসলাম রয়েল বলেন,‘গত এক বছরে এ কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। ম্যাডামের সঙ্গে কথা হয়েছে। ম্যাডাম আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। ম্যাডাম দেশে ফিরলে। নতুন উদ্যোগ নেয়া হবে।’

তবে কমিটির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসানের দাবি ‘এক বছরে ছাত্রদলের বড় অর্জন হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থাকা। এ কারণে অসংখ্য নেতাকর্মী মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। ফলে আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে। ম্যাডাম দেশে ফিরলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরো গতি আসবে।’

ছাত্রদলের এক বছরের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘এটা আমাদের দুই বছরের কমিটি। এক বছর নিয়ে আমরা কোনো কমেন্ট করি না।’



মন্তব্য চালু নেই