এক নজরে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ১২ সিইসি

অনেক তর্ক-বিতর্কের পর সার্চ কমিটির দেওয়া নামের ভিত্তিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সোমবার, রাত ৯টার পর দেশের ১২তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হলেন কে এম নুরুল হুদা। তিনি সাবেক সচিব। ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশকে হানাদার মুক্ত করেছেন নতুন এই সিইসি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পান।

১২তম সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া কে এম নুরুল হুদা ছাড়া আগের ১১ জন সিইসিগণ হয় কোনো বিচারপতি বা সেনা কর্মকর্তা, নয়ত কোনো সিএসপি অফিসার ছিলেন। কিন্তু এবারই প্রথম স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রশাসন ক্যাডারের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেলেন। এটি ইতিহাসেরই অংশ।

নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নুরুল হুদা বর্তমান সিইসি কাজী রাকিবউদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। তার অধীনেই আসছে ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও আগামি ৫ বছর স্থানীয় ও জাতীয় সব ধরনের নির্বাচন পরিচালনা করবে এই নুরুল হুদা কমিশন ।

এর আগে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত মোট ১১ জন সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা হলেন- বিচারপতি মো. ইদ্রিস, বিচারপতি এ.কে.এম. নুরুল ইসলাম, বিচারপতি চৌধুরী এ.টি.এম. মাসুদ, বিচারপতি সুলতান হোসেন খান, বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ, বিচারপতি এ.কে.এম সাদেক, মোহাম্মদ আবু হেনা, এম এ সাইদ, বিচারপতি এম.এ. আজিজ, ড. এটিএম শামসুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ।

এবার দেখে নেয়া যাক, ১১ জন সিইসি কোন সময় থেকে কোন সময়কাল তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১. বিচারপতি মো. ইদ্রিস
দেশের প্রথম সিইসি বিচারপতি মোঃ ইদ্রিস। তিনি ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান। ৫ বছর সাংবিধানিক এ পদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই অবসরে যান।

২. বিচারপতি এ.কে.এম. নুরুল ইসলাম
এরপর বিচারপতি মো. ইদ্রিসের স্থলাভিষিক্ত হন বিচারপতি এ.কে.এম. নুরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন দেশের দ্বিতীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই তিনি এই পদে নিয়োগ পান। ৭ বছর সাত মাস দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেন। সাংবিধানিক এ পদে ৫ বছর দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও সেনা সমর্থীত সরকারের আমলে তিনি ২ বছর ৭ মাস বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন।

৩. বিচারপতি চৌধুরী এ.টি.এম. মাসুদ
দেশের তৃতীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন বিচারপতি চৌধুরী এ.টি.এম. মাসুদ। তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রয়ারি দায়িত্ব শেষ করেন।

৪. বিচারপতি সুলতান হোসেন খান
নির্বাচন কমিশনের চতুর্থ সিইসি বিচারপতি সুলতান হোসেন খান।। এরশাদ সরকারের শেষ সময়ে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। তবে বেশি দিন এ পদে স্থায়ী হতে পারেন নি।

৫. বিচারপতি মো. আবদুর রউফ
দেশের পঞ্চম বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ। তার অধীনেই দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়। এরশাদ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে তার অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তবে তিনিও এ পদে বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেন নি। মেয়াদ শেষের আগেই তাকে বিদায় নিতে হয়।

৬. বিচারপতি এ.কে.এম সাদেক
ষষ্ঠ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এ.কে.এম সাদেক। বিএনপি সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া এই সিইসির অধীনেই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হয়। এরপর ফিরে আসে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি।

৭. মোহাম্মদ আবু হেনা
নির্বাচন কমিশনে মোহাম্মদ আবু হেনা ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল সিইসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নেন দুই হাজার সালের ৮ মে।

৮. এম এ সাইদ
দেশের অষ্টম সিইসি এম এ সাইদ। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া এই সিইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০০ সালের ২৩ মে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। বিদায় নেন ২০০৫ সালের ২২ মে।

৯. বিচারপতি এম.এ. আজিজ
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি এম.এ. আজিজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পান ২০০৫ সালের ২৩ মে। আওয়ামী লীগ সরকারের আন্দোলনের মুখে বিদায় নেন ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি।

১০. ড. এটিএম শামসুল হুদা
সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমদের কেয়ারটেকার সরকারের সময় দেশের দশম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ড. এটিএম শামসুল হুদা। তার অধীনে নির্বাচন করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। শামসুল হুদা ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান। বিদায় নেন ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি।

১১. কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ
কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দেশের একাদশতম সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি ৫ বছর মেয়াদ শেষ করে দায়িত্ব শেষ করলেন তিনি। তার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। যদিও ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দল অংশ নেয়নি।

১২. কে এম নুরুল হুদা
এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। আসছে ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি শপথ নেবেন। তার অধীনে ২১৯ সালের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই