এক-দুইয়ে আটকে আ.লীগের নগর কমিটি

ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ দু’ভাগে ভাগ করে দু’টি কমিটি নাকি ভাগ না করে একটি কমিটি করা হবে- সেই বিতর্কে আটকে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন।

দীর্ঘদিন ধরে নগর নেতারা কমিটি গঠনের কথা বলে আসছেন। তারা কখনো বলছেন কমিটি হবে আগস্টের পর আবার কখনো বলছেন ঈদের পরে। বাস্তবে এখনো কমিটি ঘোষণা হয়নি। কবে ঘোষণা হবে তাও তারা জানেন না।

ঢাকাকে দু’ভাগে ভাগ করে কমিটি করা হলেও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নিয়েও রয়েছে বিরোধ। এ দুই পদে রয়েছেন ৪ প্রার্থী। বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও হাজী সেলিম হতে চান সভাপতি। আর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও সাঈদ খোকন সাধারণ সম্পাদক পদপার্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলামেইলকে বলেন, ‘কমিটি তো হচ্ছে না আমাদের নেতাদের কারণে। আমরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কমিটি একটি হবে নাকি দুটি।’

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই যখন দু’টি কমিটি গঠনের কথা বলছেন তখন আমাদের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নেত্রীকে একটা কমিটি রাখার পক্ষেই তার মতামত তুলে ধরেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী ওই নেতাকে ধমক দিয়ে বলেছেন, ‘একটি কমিটি চাইলে আপনাদের সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই।’

ওই নেতা বলেন, ‘ঢাকার রাজনীতিতে মহানগর আওয়ামী লীগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। এ জন্য নেতাদের মতামতকে অনেক সময় নেত্রী প্রাধন্যও দিয়ে থাকেন। আর এই সুযোগে অনেক নেতা এক কমিটির পক্ষে কথা বলে আসছেন।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’ভাগে ভাগ করে নগর কমিটি গঠনের পক্ষে। গত ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব শিগগিরই ঢাকা সিটি করপোরেশনের আদলে উত্তর ও দক্ষিণে দুই ভাগে বিভক্ত করে মহানগর কমিটি গঠন করা হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এক সদস্য জানান, ২৪ অক্টোবর কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দু’টি বিষয় প্রাধন্য পাবে। একটি লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়, আরেকটি ঢাকা মহানগর কমিটি। ওই বৈঠকে নগর কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়া ও ইউরোপের আন্তঃসরকার ফোরামের (আসেম) দশম শীর্ষ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে ঢাকা মহানগর কমিটি দিতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘কমিটি তো আরো আগেই ঘোষণা হতো। কিন্তু নগর নেতারা কেউ একটি আবার কেউ দু’টি কমিটি দেয়ার পক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন। এ জন্য এতো দেরি হচ্ছে। নেত্রী দু’টি কমিটি দেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ বাংলামেইলকে বলেন, ‘সভানেত্রী ইতালি থেকে দেশে ফিরলে আলোচনা করে কমিটি দেয়া হবে।’

একটি কমিটি নাকি দু’টি কমিটি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নেত্রীর হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই আমরা মেনে নেবো।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘হজে যাওয়ার আগে ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মহানগরকে দু’ভাগে ভাগ করে দু’টি কমিটি দেয়া হবে। কিন্তু পরে বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীর বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠায় কমিটি নিয়ে আর আলোচনা হয়নি।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মায়া ভাই ও আজিজ ভাইরে ফোন করেন, ওনারা ভালো বলতে পারবেন।’

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সমন্বয়ক করে উত্তর-দক্ষিণে ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হবে।

উত্তরে সভাপতি পদে একেএম রহমত উল্লাহ আর সাধারণ সম্পাদক পদে আলহাজ সাদেক খান প্রার্থী। আর দক্ষিণে সভাপতি পদে কামরুল ইসলাম ও হাজি সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক পদে শাহে আলম মুরাদ ও সাঈদ খোকনের নাম শোনা যাচ্ছে।

এদিকে ২০০৩ সালের ১৮ জুন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ঢাকার প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুর পর এমএ আজিজ ভারপাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।



মন্তব্য চালু নেই