এক চোখের আলোতেই দেশসেবার স্বপ্ন রাজুর
ছয় সদস্যের পরিবারের দারিদ্র্য, এক চোখের দৃষ্টিহীনতা- কোনোকিছুই বাধা হতে পারেনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দেশওয়াল সম্প্রদায়ের তরুণ রাজুর চলার পথে।
চা-শ্রমিক পরিবারের সন্তান রাজু দেশোয়াল স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পড়ছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে; দেখছেন দেশসেবার স্বপ্ন।
সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বৃত্তির চেক নেন, তাদের মধ্যে রাজু একজন।
পরে অনুষ্ঠানের অতিথিরা পিনপতন নিস্তব্ধতায় রাজুর কথা শোনেন।
রাজু জানান, তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা এখনও কুলাউড়ার শমসেরনগর গ্রামের ছোট একটি চা বাগানে দৈনিক ৬৯ টাকা মজুরিতে কাজ করেন।
চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাজু একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কুপি বাতির আলোয় পড়ে স্কুলের গণ্ডি পার হন। এরপর ‘কাজের বিনিময়ে শিক্ষা’ কর্মসূচির আওতায় ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। নটরডেম কলেজে বাগান পরিচর্যা করে তিনি লেখাপাড়ার খরচ চালিয়েছেন।
ব্যবসায় প্রশাসনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটিতে জগন্নাথ হলের একজন প্রতিনিধি।
রাজু জানালেন, বাবার মতো তার বড় ভাইও চা শ্রমিক। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থেকে কেবল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী মেজো ভাইয়ের কাছ থেকেই কিছু আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন।
“অন্যের বই আর নোট ধার করে এবং মেজো ভাইয়ের পাঠানো মাসিক এক হাজার টাকায় আমার পড়ালেখা চলছে। কিন্তু ভাইয়ের পক্ষে আমার পড়ালেখার খরচ বহন করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ছে,” বলেন প্রথম বর্ষে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ রাজু।
স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাওয়া রাজু তারপরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে শোনান আশার কথা।
“জন্মের পর বিদ্যুৎ, সেনিটেশন, চিকিৎসার কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেলেও আমি কোনদিন পিছিয়ে পড়তে চাইনি।আমি বাঁ চোখে দেখতে পাই না। তবুও আমি আমার এক চোখের আলোয় একজন আলোকিত মানুষ হতে চাই। দেশের জন্য কাজ করতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে ৩৬০ জন শিক্ষার্থীকে ২৫ হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। এ বছর মোট ৭০ লাখ টাকা বৃত্তি হিসেবে দিচ্ছে সরকার।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৃত্তিপ্রাপ্ত ৩৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ কৃতি শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চেক নেন এ অনুষ্ঠানে।
চা-শ্রমিকসহ সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাজু।
মন্তব্য চালু নেই