একটি ব্লগার হত্যারও কিনারা হয়নি
একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটলেও অপরাধীরা ধরা পড়ছে না৷ তবে হত্যাকারীদের আটক করতে না পারলেও পুলিশ বলছে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটকও আছে।
আজ শনিবার বিকাল পাঁচটায় শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজ কার্যালয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে। একইদিন বিকাল তিনটায় লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের তিন প্রকাশক ও লেখককে কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করা হয়। এই ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
তবে পুলিশ বলছে, লালমাটিয়ার ঘটনার সঙ্গে শাহবাগের হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে। তবে কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা বলতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে চলতি বছরের ৭ আগস্ট ঢাকার উত্তর গোড়ান এলাকার বাসায় ঢুকে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে৷ এ ঘটনায় তিন মাসেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
প্রকাশক দীপনকে হত্যার মধ্য দিয়ে গত সাড়ে আট মাসে দুর্বৃত্তরা মোট পাঁচজন লেখক ও ব্লগারকে হত্যা করেছে৷ গত ২৬ ফেব্রয়ারি একুশে বইমেলার বাইরে টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার অভিজিৎ রায়কে৷ একই ঘটনায় আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ এই ঘটনার পরের দিন নিহতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি জড়িত কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে শফিউর রহমান ফারাবি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার কাছ থেকে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি৷ আদালতেও কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি ফারাবি৷ একারণে এখনও চার্জশিট হয়নি। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ফজলুর রহমান বলেন, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হবে।
তবে পুলিশের এই বক্তব্যে খুশি নন বাদী ড. অজয় রায়। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ যেদিন মূল আসামিকে ধরতে পারবে এবং বিচার শেষ হবে সেইদিন আমি আশ্বস্ত হব।’
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের মাত্র এক মাসের মাথায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেগুনবাড়িতে খুন হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু৷ এরপর ১২ মে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অপর মুক্তমনা ব্লগার ও সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাসকে৷
ব্লগার হত্যা অবশ্য শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যার মধ্য দিয়ে৷ শুধুমাত্র রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনাতেই এখন পর্যন্ত পুলিশ মূল আসামিদের গ্রেপ্তার এবং আদালতে চার্জশিট দিতে পেরেছে৷
ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার পর পর জনতার হাতে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল নামে দুই মাদ্রাসা ছাত্র ধরা পড়লেও, পুলিশ তাদের কাছ থেকে বাড়তি কোনো তথ্য আদায় করতে ব্যর্থ হয়৷ ওই দু’জনের সঙ্গে থাকা পলাতক আবু তাহের ও মাসুমকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি৷ এই মামলাও চার্জশিট হয়েছে।
এছাড়া সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যার ঘটনায় ইদ্রিস আলী (২৪) নামে এক আলোকচিত্র সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও, অপরাধীদের চিহ্নিত বা আটকের কোনো খবর নেই৷ প্রসঙ্গত, ইদ্রিস আলী হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলের কাছ থেকে ছবি তোলায় তাঁকে আটক করা হয়৷
এসব বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মো. মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্লগার ও লেখক খুনের মামলাগুলোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে। এরমধ্যে দুইটি মামলা গ্রেপ্তারও আছে। দুই মামলার চার্জশিট হয়েছে। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে।’ঢাকাটাইমস
মন্তব্য চালু নেই