এই মৌসুমে ছোঁয়াচে সর্দি-কাশি থেকে বেঁচে থাকুন ৭টি উপায়ে
শীত এই এসে গেলো বলে। ঋতু পাল্টানোর এই মৌসুমটায় ভীষণ সর্দিকাশি থাকে চারিদিকে এবং ছোঁয়াচে হবার কারণে অফিসে একজন অসুস্থ হয়ে গেলে আরও দশজন অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি অসুস্থ সহকর্মীর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলেও আপনার অসুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে। এমন অবস্থায় কী করবেন? অফিসে যাওয়া তো আর বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু অফিসে এই রোগের ছড়াছড়ি দেখা দিলেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন সাবধানে। জেনে নিন সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকার এসব টিপস।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হসপিটালে কর্মরত ডাক্তার আয়শা নূর বলেন, এ সময়ে সবারই উচিত হাঁচি-কাশি দেবার সময়ে রুমাল ব্যবহার করা। টিস্যু ব্যবহার করে সেটা ফেলে দেওয়াটা আরো ভালো। এতে অসুস্থতা ছড়ানোর সম্ভাবনা আরও কমে যায়। অনেকের অভ্যাস থাকে গোসলের সময় অনেকক্ষণ ধরে মাথায় ঠাণ্ডা পানি দেওয়া, এতে অনেকের ঠাণ্ডা লেগে যায় দ্রুত। দেখে নিন আরও কিছু কাজ যেগুলো এই মৌসুমি অসুস্থতা থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
১) নিয়মিত হাত ধুতে হবে
হাত ধুলে যে জীবাণুতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে যায়, তা জানি আমরা সবাই। কিন্তু সঠিক নিয়মে কি হাত ধুচ্ছেন আপনি? ভেজা হাতে সাবানের ফেনা করে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে এবং কবজিও বাদ দেওয়া যাবে না। এরপর হাত ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। অপরিষ্কার হাত কোনোভাবেই মুখ, নাক এবং চোখে স্পর্শ করবেন না। তবে এটা জেনে রাখুন যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার না করে সাধারণ সাবান ব্যবহার করাই ভালো।
এছাড়াও ছোট একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে পারেন নিজের অফিস ডেস্কে অথবা ব্যাগে। Center for Disease Control and Prevention এর মতে, অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাত থেকে জীবাণু দূর করতে বেশ কার্যকর।
২) পরিষ্কার রাখুন কী-বোর্ড
আপনি নিজেকে যতই পরিষ্কার রাখুন না কেন, আপনার ডেস্ক, বিশেষ করে কী-বোর্ড পরিষ্কার নাও থাকতে পারে। আপনি কি জানেন, টয়লেটের চাইতেও বেশি ময়লা থাকতে পারে আপনার কী-বোর্ড? এ কারণে অফিসে সবাই অসুস্থ হওয়া শুরু করলে ডেস্ক এবং কী-বোর্ড পরিষ্কার রাখুন। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াইপ দিয়ে পরিষ্কার রাখতে পারলে ভালো। অন্য কারও কী-বোর্ড স্পর্শ করলে হাত ধুয়ে ফেলুন দ্রুত।
৩) স্ট্রেস কম রাখুন
সব সময়ে চিন্তিত থাকা শরীরের কর্টিসল এবং এপিনেফ্রিন লেভেল বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। এতে কমে যেতে পারে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এ কারণে যদি বুঝতে পারেন আপনার স্ট্রেস বেড়ে যাচ্ছে তবে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিন, ইয়োগা বা মেডিটেশনে দৈনিক কিছু সময় ব্যয় করুন সম্ভব হলে।
৪) প্রচুর তরল পান করুন
সব সময় নিজের কাছে একটা পানির বোতল রাখুন। যদি আপনি চা পান করতে ভালোবাসেন তবে গরম চা পান করুন এ সময়ে। এতে মধু এবং লেবু যোগ করতে পারেন। লেবু শ্লেষ্মা তরল করে ফলে আপনার নাক সর্দিতে বন্ধ হয়ে থাকলে সে সমস্যা কেটে যাবে। আর মধু কাজ করে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে। ডাক্তার আয়শা নূরের মতে, গরম পানিতে আদা এবং মধু দিয়ে পান করলে এটাও খুবই উপকারে আসবে।
৫) ঘুমান প্রয়োজনমতো
ইনফেকশন হলে তার সাথে লড়াই করতে শরীরের প্রয়োজন হয় যথেষ্ট বিশ্রাম। ঠাণ্ডা লাগলে অনেকে ঘুমাতে পারেন না। কিন্তু ঘুমালে দেখবেন শরীরটা অনেক ভালো লাগছে।
৬) দরকার হলে ছুটি নিন
অসুস্থ হয়ে আছেন অথচ অফিসে কাজ পড়ে আছে? এমন অবস্থায় আপনি অফিসে আসলে আপনার সহকর্মীরাও অসুস্থ হয়ে পড়বে। ফলে বাসায় থেকে কাজ করুন যদি সম্ভব হয়। আর আপনার অধীনে যদি এমন কেউ থাকে যে অসুস্থ হলেও অফিসে এসে কাজ করতে চাচ্ছে, অন্যদের ভালোর জন্য হলেও তাকে ছুটি দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিন।
৭) শরীরে আলোবাতাস লাগান
বাইরে গিয়ে একটু হেঁটে আসুন। বাড়ির বারান্দায়, ছাদে অথবা পার্কের মতো কোনো জায়গায় গিয়ে এক্সারসাইজ করুন। এতেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন-
ডাক্তার আয়শা নূর
এমবিবিএস
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হসপিটাল
মন্তব্য চালু নেই