এই মন্দিরে গেলে আপনি চুরি করতে বাধ্য

দুই বিপরীত মতকে সরিয়ে যদি ধর্মের দিকে তাকানো যায়, সেখানে চুরি কিন্তু মোটেই কোনও অনুমোদিত বিষয় নয়। কিন্তু এই দেশেই এমন মন্দিরও রয়েছে, যেখানে চুরি করাকে হেয়জ্ঞান করা তো হয়ই না, বরং মন্দিরে আগত ভক্তদের উৎসাহ দেওয়া হয় চুরি করতে।

কে না জানে, চুরি একটা ঘোর পাপ। প্রাচীন কাল থেকে মুঘল আমলেও চুরিকেই সবথেকে বেশি পরিমাণে শাস্তিযোগ্য অপরাঘ বলে গণ্য করা হত। চোরের হাত-পা কেটে নেওয়া ছিল নৈমিত্তিক শাস্তি। আবার ভারতে আবহমানে চৌর্যবৃত্তিকে একটা কলাবিদ্যা বলে মনে করার রেওয়াজও ছিল। তস্করদের অনেকই হয়ে উঠতেন কিংবন্তি বা রূপকথার কাল্ট নায়ক। অনেক কাহিনিতেই রাজকন্যে মালা দিয়েছেন ঝানু চোরের গলায়। চোরও সাতমুদ্র তোরো নদী পেরিয়ে রাজকন্যেকে এনে দিয়েছে সাত রাজার ধন এক মানিক। এই দুই বিপরীত মতকে সরিয়ে যদি ধর্মের দিকে তাকানো যায়, সেখানে চুরি কিন্তু মোটেই কোনও অনুমোদিত বিষয় নয়। কিন্তু এই দেশেই এমন মন্দিরও রয়েছে, যেখানে চুরি করাকে হেয়জ্ঞান করা তো হয়ই না, বরং মন্দিরে আগত ভক্তদের উৎসাহ দেওয়া হয় চুরি করতে।

উত্তরাখণ্ডের রুরকি জেলার চুড়য়ালা গ্রামের চুড়ামণি দেবীর মন্দিরে ভক্তদের চুরি করাটাই দস্তুর। সেটাই এই মন্দিরে উপাসনা-পদ্ধতি। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, সন্তানহীন দম্পতি এই মন্দিরে যথাবিহিত আচার পালন করলে সন্তান লাভ করতে পারে। লোকবিশ্বাস, এই মন্দির ৫১ সতীপীঠের একটি। এখানে সতীদেবীর চূড়া পড়েছিল বলে শোনা যায়।

সন্তানহীন দম্পতির মনস্কামনা পূরণের জন্য এখানে যে আচারচি পালন করতে হয়, তাতে চুরি একটা বড় ব্যাপার। সন্তাহিন দম্পতিকে এই মন্দিরে এসে প্রণামী দিতে হয় এবং দেবীমূর্তির পায়ের কাছে রাখা অনেকগুলি কাঠের পুতুলের একটি চুরি করতে হয়। এই উপচার পালন করলে নাকি সেই দম্পতির কোলে সন্তান আসে। সন্তান জন্মের পরে দম্পতিকে আবার মন্দিরে ফিরে যেতে হয়। এবার চুপিসাড়ে রেখে আসতে হয় সেই চুরি করা পুতুলটিকে। সেই সঙ্গে তাঁদের তরফ থেকে একটি নতুন কাঠ-পুতুলকেও বসিয়ে আসতে হয় দেবীর পায়ের কাছে।

এই আশ্চর্য রীতি চালু রয়েছে ১৮০০ সালেরও আগে থেকে। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের রাজা একবার শিকারের উদ্দেশ্য জঙ্গলে প্রবেশ করেন। এবং সেখানে এক দেবীর দেখা পান। দেবী একঝলক দেখা দিয়েই উধাও হয়ে য়ান। তাঁর জায়গায় পড়ে থাকে একটি কাঠ-পুতুল। রাজা সেই পুতুল বাড়ি নিয়ে আসেন। তার পূজা শুরু করেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতে রাণির কোলে এক পুত্রসন্তান আসে। দেবীর মহিমা বুঝতে পেরে রাজা সেই পুতুল ফেরৎ দিয়ে আসেন যেকানে দেবীর দেখা পেয়েছিলেন, সেই খানে। ক্রমা সেখান‌েই গড়ে ওঠা মন্দির। এবং ‘পুতুল চুরি’-র উপচার পরম্পরায় পরিণত হয়।



মন্তব্য চালু নেই