এই ব্যক্তি ১৫০ সন্তানের বাবা!

পুরো নাম জে রামচন্দ্র শরৎ বাবু। লোকে অবশ্য তাঁকে শরৎ বাবু বলেই ডাকতে পছন্দ করেন। আর তাঁর একশো কুড়ি জন সন্তান তাঁকে ‘বাবা’ বলেই ডাকে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত এই রেলকর্মী একশো কুড়ি জন সন্তানেরই পিতা। তবে তিনি তাঁদের নিজের বাবা না হলেও প্রকৃত বাবার মতোই দায়িত্ব পালন করেছেন।

শরৎ বাবু নিজে ভারতীয় রেলের একজন কেরানি ছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর স্টেশনে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানেই তিনি দেখতেন, বহু শিশুই প্ল্যাটফর্মের উপরে হয় ভিক্ষা করত, নয় চুরি, পকেটমারির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। অনেক সময়েই তাদেরকে ধরে রেলযাত্রী এবং সাধারণ মানুষ মারধর করত। এদের জন্য কিছু করার কথা ভাবেন শরৎ বাবু। কিন্তু তখন তাঁর সেই আর্থিক সঙ্গতি ছিল না।

এর পরে ১৯৯৪ সালে ১৪ বছর চাকরি করার পরে কিছু অর্থ জমাতে সক্ষম হন তিনি। তখন নেল্লোরের গোল্লাপাল্লেমে নিজের গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের কাছে প্ল্যাটফর্মের শিশুদের জন্য কিছু করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শরৎ বাবুকে ছোট্ট একটি জমি দেওয়া হয়। সেই জমিতেই একটি কুড়ে ঘর তৈরি করে নিজের আশ্রম শুরু করেন এই রেলকর্মী।

আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে যে শিশুরা ভিক্ষা করত, তাদের নিয়ে এসে আশ্রমে রাখতে শুরু করেন তিনি। সেই শুরু, এখন শরৎ বাবুর আশ্রম আয়তনে অনেক বেড়েছে। আশ্রমে আবাসিকের সংখ্যা দেড়শোর উপরে।

২০১১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে আশ্রমেই পুরো সময় ব্যয় করতে শুরু করেন শরৎ বাবু। তাঁর এই মহান উদ্যোগে বন্ধু এবং গ্রামবাসীদের অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া নিজের পেনশনও রয়েছে। এখন তো শরৎ বাবুর আশ্রমের মধ্যে থাকা স্কুলটি ওই এলাকার অন্যতম সেরা স্কুল হিসেবে স্বীকৃত।

শুধু তাই নয়, যাদের একদিন প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এখন জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। কেউ বিজ্ঞানী, কেউ আবার উঁচু পদে সরকারি চাকরি করছেন।

যদিও, এই সাফল্য একদিনে আসেনি। চুরি, ভিক্ষা করতে অভ্যস্ত শিশুগুলি শরৎ বাবুর আশ্রমে এসেও একই কাজ করত। কেউ আশ্রমের জিনিস সরাত, কেউ আবার শরৎ বাবুরই পকেট থেকে চোখের নিমেষে টাকা সরিয়ে ফেলত। কিন্তু শরৎ বাবু ধৈর্য্য হারাননি।

আর সেই কারণেই আজ তিনি অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। যদিও এই সাফল্যের কৃতিত্ব তিনি নিতে চান না। একটি ইংরেজি সংবাদ ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তাঁর কাছে থাকা শিশুরা মেধাবী ছিল বলেই আজ তারা জীবনে এতটা সফল হয়েছে! সৌজন্যে- বেটার ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া সংবাদ



মন্তব্য চালু নেই