উৎপাদনশীল খাতে ৩০ কোটি ডলার দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেবে দেশের বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ‘ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট’- এর আওতায় এই ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট’- এর আওতায় দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন তহবিল ব্যবহারের জন্য গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস.কে. সুর চৌধুরী, নাজনীন সুলতানা, প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক মো. আহসান উল্লাহ, উন্নয়ন সহযোগী বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এর আগে ১৯ নভেম্বর এই প্রকল্পের আওতায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ও আল-অরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বৈদেশিক মূদ্রায় দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন তহবিল পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আজ ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক-চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। অচিরেই যোগ্যতাসম্পন অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও অংশগ্রহণমূলক-চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে গভর্নর আশা প্রকাশ করেন।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ভিত্তিক বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। তার অংশ হিসেবে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির সময়ভিত্তিক প্রক্ষেপণ বা রূপরেখা উল্লেখ করে সরকার ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১’ প্রণয়ণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে বছর-ওয়ারি বিনিয়োগের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২০২১ সালে ৩৮ শতাংশ হবে বলে প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বেসরকারি খাতই দেশে বিনিয়োগের প্রধান চালিকা শক্তি বিবেচনায় এ খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীলকরণের পূর্বশর্ত হিসেবে বেসরকারি খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ানো অত্যাবশ্যক বলে মনে করেন গভর্নর।
উৎপাদনশীল খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন কিংবা নতুন কারখানা স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে নতুন ও উন্নত কারিগরি মানসম্পন্ন মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করার প্রয়োজন । আর এতে দরকার দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ। কিন্তু উচ্চসুদে দীর্ঘমেয়াদে এ ধরণের বিনিয়োগের আর্থিক উপযোগিতা না থাকায় বাংলাদেশের উৎপাদনশীল খাতের সক্ষমতা আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফলতা অর্জন করতে পারছে না। এই প্রতিকূলতা দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ‘ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট’- এর আওতায় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি তহবিল গঠন করেছে। এ তহবিল থেকে অংশগ্রহণকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে উৎপাদনশীল শিল্প খাতে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদী বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হবে।
অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদী এই তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহার করে শিল্প খাতের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি খাতের পূর্ণমাত্রার সম্প্রসারণ ঘটাতে সক্ষম হবে। তবে এই উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পরিবেশগত কোনো ঝুঁকির সৃষ্টি না হয় সেই দিকে কঠোর নজর রাখার ব্যাপারেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের এই প্রচেষ্টায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি আশা করেন।
এ তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সুশাসনের দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে। কেবল একটি নির্দিষ্ট মান অর্জনের পরই ব্যাংকগুলো এ তহবিলে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর ক্যামেলস্ সূচক অনুযায়ী তাদের প্রযোজ্য সুদের হার নির্ধারিত হবে। এতে করে সুশাসনের মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রণোদনাও থাকছে।
অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো এ তহবিল ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদী বৈদেশিক মূদ্রায় ঋণচাহিদা পূরণের ফলে বাণিজ্যিকভিত্তিতে দেশের বাইরে থেকে বৈদেশিক ঋণগ্রহণের পরিমাণও হ্রাস পাবে। এসব বাণিজ্যিক ঋণের স্বল্প মেয়াদের পরিশোধসূচির পরিবর্তে এই তহবিল ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিশোধসূচির সুবিধা গৃহীত হলে দেশের লেনদেন ভারসাম্যেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোকে তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগকারী চিহ্নিত করে এ তহবিল সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে দেশজ উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহবান জানান গভর্নর। এই কাজে পাশে থাকার জন্য সরকার, বিশ্বব্যাংক, অংশগ্রহণকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সর্বোপরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকের ধন্যবাদ জানান তিনি।
মন্তব্য চালু নেই