উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার অভিযোগ তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ
বাংলাদেশে উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক পর নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচনী সহিংসতা এবং অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোন গাফিলতি ছিল কী না, তা তদন্ত হবে। তবে তিনি বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেছেন, ঘটনা ঘটে যাওয়ার অনেক পরে এই তদন্তে ইতিবাচক ফল নাও আসতে পারে। উপজেলা নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে ব্যাপক কারচুপি এবং অনিয়মের অভিযোগ করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। “সহিংসতা বা অনিয়ম কতটা হয়েছে সেটা যেমন খতিয়ে দেখা হবে, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা কি ছিল,তাদের কোন গাফিলতি ছিল কিনা, এসব খতিয়ে দেখে তাদের ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে”মো: শাহনেওয়াজ, নির্বাচন কমিশনার সহিংসতার জন্য প্রায় আড়াইশ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রয়েছে। গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি থেকে দেড় মাসে সারাদেশে পাঁচ দফায় ৪৫৮টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও বিরোধী বিএনপি এবং এর জোটের শরীক জামায়াতে ইসলামী উপজেলা নির্বাচনে সরাসরি প্রার্থী সমর্থন দিয়ে মাঠে নেমেছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ছিল তৎপর। ফলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার এই উপজেলা নির্বাচন রাজনৈতিক চেহারা পেয়েছিল। ১৯শে ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ৯৭টি উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষই তেমন কোন অসন্তোষ প্রকাশ করেনি। নির্বাচনে সহিংসতার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন কিন্তু পরের ধাপগুলোতে নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে সহিংসতা এবং অনিয়মের সাজা বাড়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো:শাহনেওয়াজ বলেছেন, “ কিছু সহিংসতা এবং অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, সেগুলো কমিশন খতিয়ে দেখছে। রিটার্নিং অফিসার এবং জেলা-উপজেলায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” শেষ তিন ধাপে নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতায় কমপক্ষে ৮ জন নিহত এবং অনিয়মেরও ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। সবমিলিয়ে আড়াইশ’র মতো ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল। কিন্তু নোয়াখালী সদর উপজেলায় পুরো নির্বাচন স্থগিত করা ছাড়া সারাদেশে উপজেলাগুলোতে ফল প্রকাশ এবং গেজেট হয়ে গেছে। “নির্বাচন শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক পর তদন্তে সঠিক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে”তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি মনে করেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক পর তদন্তে সঠিক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তিনি বলেছেন, “ফলাফল হয়ে যাওয়ার পর এখন তদন্তে কি বেরিয়ে আসবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।” অবশ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী প্রার্থীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সকল জেলায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। আর কমিশন এই তদন্ত করছে নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্তদের ব্যপারে। মো: শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, “সহিংসতা বা অনিয়ম কতটা হয়েছে সেটা যেমন খতিয়ে দেখা হবে, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা কি ছিল,তাদের কোন গাফিলতি ছিল কিনা, এসব খতিয়ে দেখে তাদের ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।” খুলনায় উপজেলা নির্বাচনের একটি ভোট কেন্দ্র বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের এই তদন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচন বা এর ফলাফলের উপর যদি প্রভাব না ফেলে, তবে সেটা লোক দেখানো বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের এখনো করনীয় রয়েছে। অন্যদিকে, এখনও বিশটির বেশি উপজেলায় নির্বাচন বাকি রয়েছে। কমিশন সেই উপজেলাগুলোতে মে মাসে নির্বাচন করার চিন্তা করছে।
মন্তব্য চালু নেই