উপকারী ফোনের নিরব ক্ষতির দিক

দূর দুরান্তে যেতে আজ আর কোনো মানা নেই। নানা প্রয়োজনে বা কাজের তাগিদে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, কাছের মানুষ কাছেই থাকবে। মোবাইল ফোনের বদৌলতে যখনই মন চাইবে তাদের সঙ্গে কথা বলা যাবে। এমনকি প্রিয় মানুষের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট আজকাল মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ঠিকানা না থাকলেও বন্ধুরা আজ হারিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। শুধু একটা ফোন কলেই সবাই থাকছে আপনারই কাছে। কাছের মানুষগুলোকে কাছে রাখার এই আধুনিক যন্ত্রটাও হয়ে উঠেছে অনেক বেশি জনপ্রিয়। একটি মুহূর্ত সেই যন্ত্রটাকে হাতছাড়া করার উপায় নেই। ইদানিং মোবাইলের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি কারো জন্য অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মোবাইল ব্যবহারের জন্য হয়তো আপনিই নানা সমস্যায় ভুগছেন, কিন্তু কখনো ধারণাও করতে পারেননি। আসুন জেনে নেয়া যাক, মোবাইলের অসাধারণ উপকারের বিপরীতে নিরবে লুকিয়ে থাকা মারাত্মক ক্ষতি সম্পর্কে।

পেশির ক্ষয়

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আজ মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাতের নাগালে আসায় যোগাযোগের ক্ষেত্র হয়েছে বিশাল। তাই সব বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে বার্তাকথনই বেশি প্রয়োজন। এতে করে বার্তা লিখতে দীর্ঘ সময় ধরে আঙুলের পেশি সংকুচিত হয়ে থাকছে। মোবাইল ফোনে গেম খেলার জন্যও আঙুল এবং কনুইয়ের পেশি সংকুচিত রাখতে হয়। পেশি দীর্ঘক্ষণ সংকুচিত থাকার জন্য স্থায়ী ক্ষতির শিকার হয়ে থাকে। পেশি ফুলে যেতে পারে, স্থায়ী ব্যথা হতে পারে এমনকি কিছু পেশির স্থায়ীভাবে অকেজো পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি এক সপ্তাহ এভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তবে কিছু সমস্যা অবশ্যই টের পাবেন। এ অবস্থায় কোনো আঘাত ছাড়াই হাতের কনুই, কব্জি বা আঙুলে একসপ্তাহের বেশি ব্যথা স্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কাঁধের ব্যথা

বেশিক্ষণ কানে চেপে মোবাইলে কথা বললে আপনার কাঁধের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাঁধে বা পিঠে ব্যথা হয়ে থাকাতে পারে আবার যন্ত্রণাও করতে পারে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ৮৪% কাঁধে ব্যথা রোগীর ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, ব্যথার জন্য দায়ি মোবাইলে অতিরিক্ত কথা বলা। অপরদিকে, মোবাইলে কথা বলার পরিমাণ কমিয়ে দিলে এই ব্যথা এমনিতেই সেরে যাওয়া সম্ভব।

দৃষ্টিভ্রম

মোবাইলের দিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকিয়ে থাকা দৃষ্টিভ্রমের কারণ হতে পারে। মোবাইলের আলো চোখের ওপর সরাসরি পড়ে দৃষ্টিকে ঝাপসা বা এলোমেলো করে দিতে পারে। মোবাইলের ছোট লেখাগুলো স্পষ্ট দেখার জন্য চোখ জোরপূর্বক চেষ্টা চালাতে থাকে। এতে চোখের পরিশ্রম বেড়ে যায়। একসময় দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াসহ চোখের নানা সমস্যা দেখা দেয়।

মোবাইল আতঙ্ক

মোবাইলের প্রতি বেশি আকর্ষণ আপনাকে প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কিত করে রাখতে পারে। আপনি যে কাজই করুন না কেন, বার বার মোবাইলের প্রতি দৃষ্টি যাবে। ফোন না এলেও সব সময় কানে বাজতে পারে ফোনের রিংটোন বা মেসেজ টোন। অথচ নিশ্চুপ ফোনটি হয়তো আপনার পাশে বোবার মতোই পড়ে আছে। একে মানসিক সমস্যাও বলা যেতে পারে।

ঘুমের ক্ষতি

নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের আপডেট জানিয়ে থাকে মেসেজ এর মাধ্যমে। সারাদিনে বিভিন্ন কোম্পানির নানা অফার নিয়ে ফোনও আসতে পারে। এই সমস্যা আপনার ঘুমকে বিঘ্নিত করতে পারে মারাত্মকভাবে। বার বার ঘুম ভেঙে যেতে পারে ফোনের খবর নিতে। তাছাড়া ফোনটি আপনার কাছে আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হতেও বারবার ফোনের প্রতি নজর যেতে পারে। দীর্ঘদিন এভাবে ঘুমের অভাব আপনাকে নানা রোগে আক্রান্ত করে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের রোগীর সংখ্যা দিন দিন আতঙ্কজনক হারে বেড়ে চলেছে।



মন্তব্য চালু নেই