আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ করে

উদ্ভিদ বুঝতে পারে তাদের খাওয়া হচ্ছে!

খাবার টেবিলে যখন সালাদ পরিবেশন করা হয়, তখন আর কয়জনইবা ভাবনা-চিন্তা করি সালাদ নিয়ে, টপাটপ মুখে পুরে ফেলি! কিন্ত আপনি যদি ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারতেন গাজর বা লেটুসের মনের কথা, সেও বুঝতে পারছে তাকে খাওয়া হবে এখন! তবে কি মুখে দিতে পারতেন সবজি?

আমাদের এক বাঙ্গালী বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু বহুদিন আগেই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, উদ্ভিদের প্রাণ আছে। কিন্ত গাছ বা উদ্ভিদ যে সেই প্রাণ ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারে সেটা গবেষণা করে বের করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হেইডি অ্যাপেল ও রেক্স কোক্রফট।

‘যখন আপনি একটি লেটুসে কামড় বসাচ্ছেন তখন সে শুধু সেটা টেরই পাচ্ছে না বরং নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও চালু করে দিচ্ছে’ বলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী হেইডি অ্যাপেল। তিনি ও তার সহকর্মীরা এর আগে অনুসন্ধান করেছিলেন পারিপার্শ্বিক শব্দে উদ্ভিদ কি প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার তারা দেখেন- আক্রান্ত হলে উদ্ভিদ কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

মিজৌরি ইউনিভার্সিটির কলেজ অব অ্যাগ্রিকালচারের প্লান্ট সায়েন্স ডিভিসনের এই সিনিয়র রিসার্চার জানান, আমরা লক্ষ্য করেছি, যখন কোনো শুঁয়োপোকা বাঁধাকপির পাতার ওপর হাঁটতে থাকে, তখন উদ্ভিদটি শুঁয়োপোকার শব্দ শুনে এক ধরনের ফিডিং ভাইব্রেশন তার কোষে পাঠায় এবং তার মেটাবলিসম সিস্টেম আত্ন্ররক্ষার জন্য এক ধরনের রাসায়নিক নির্গত করে যাতে শুঁয়োপোকাটি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্ত বাতাসের তৈরি শব্দে বা অন্য পোকার সৃষ্ট শব্দে উদ্ভিদটি ওই রাসায়নিকটি আর নির্গত করে না।

এই পরীক্ষায় তার সহযোগী ছিলেন বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর রেক্স কোক্রফট, যিনি একটি লেজার রশ্মির মাধ্যমে পাতার নিচে লুকিয়ে রাখা রাসায়নিক রিফ্লেক্টরের মাধ্যমে শুঁয়োপোকার শরীরে কম্পন মাপার কাজটি করেন।

রেক্স জানান, এই পরীক্ষাটি উদ্ভিদের বিভিন্ন কম্পন সৃষ্টির ক্ষমতার ওপর করা হয়েছিল। উদ্ভিদ কী পরিস্থিতিতে কী ধরনের কম্পন সৃষ্টি করে এবং যান্ত্রিকভাবে সৃষ্ট কম্পন উদ্ভিদের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা জানাই ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য। তিনি আরো বলেন, এই আবিষ্কার কম্পন ব্যবহার করে কীট দমনের ক্ষেত্রে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এতে করে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারব।

হেইডি জানান, এই গবেষণা থেকে জানা গেছে উদ্ভিদও প্রাণীদের মতো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া দেখায় ভিন্ন মাত্রার কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনি আরো দাবি করেন, উদ্ভিদরাজি প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তাও চালিয়ে নিতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই