“উত্তর বঙ্গের সত্যপীরের গান ধ্বংসের পথে”

unnamed-11সফিকুল ইসলাম শিল্পী, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল সাত ঘড়িয়া গ্রামের কটকু গায়েনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়ে আসছে প্রায় ৮৫ বছর বয়সেও। হরেক রকম স্বপ্নের মাঝে এক রাতের স্বপ্নে দেখলেন সত্যপীরেরর নানান ঘটনা। মনে সাধ হলো এই স্বপ্নকেই বাস্বতব রুপ দেওয়ার মনের গহীন থেকে অবলোকন করলেন সত্যপীরের স্বপ্নকে ছাড়ায় দিতে আর তাই ৮৫ বছরের প্র্য়া রাত অনিদ্রার ছাঁয়া থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দিতে। পরিবার হতেও বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে একাধিক বার।

পিতা মৃত মাহম্মদীনের ৪ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে কটকু গায়েন বড়। কটকুগায়েনের সাথে কথা বললে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন- উত্তর বঙ্গের আলোচিত গানই ছিল এবং আছে সত্যপীরের গান। ‘ক’ অক্ষর জানা নেই, নেই কোন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাও। এখন কিঠছুই বলতে পারবোনা। অথচ মঞ্চে দাঁড়ালে হাজারো কেচ্ছা/গল্প মনে চলে আসে। প্রথম দিকে আমজুয়ানের সাগারু গাইনের সাথে থেকে কিছুটা শেখা হয়েছে।

স্বাক্ষর না জানা কটকু গায়েন বলেন- ১ জন মাষ্টার অর্থাৎ ‘কোষো”, ২ জন জোকার অর্থাৎ কৌতুক অভিনেতা, ৫ জন ছকড়ি অর্থাৎ নাচলেওয়ালী, ১জন গায়েন থাকে একটি মঞ্চের গানের দলে থাকে। চলে ৩ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত। অধিকাংশ গ্রামের মানুষ টাকার বিনিময়ে এই গান মানতের মাধ্যমে নিজের বাড়ীতে গাইয়ে থাকে। দর্শক রাতে অনেক পাওয়া যায়, জমে উঠে গান। গান চলে রাত ৮ টা থেকে ভোর পর্যন্ত।

কলার গাছ মাঝখানে গেড়ে চার পাশে র্তীপাল টেঙ্গে মেঝেতে ধানের খর দিয়ে দর্শকদের বসতে দেওয়া হয়। চলে গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সারারাত বিনোদন। কটকু গায়েন বলেন রফিক নেংড়া, আফতার উদ্দীন, কেংকড়, সওদাগড়, তিলক পাত্র কুন্জু বিহারী, মাহাতাব বেভাস, গহর বাদশা, নূর বক্ত, নবাহারা এমনি শতাধিক গান, গল্প ঠোটের আগায় মুখস্ত আছে।

তিনি বলেন- বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টি উপজেলায় গায়েন নাই এই সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে হরিপুরের পলেন, গপেন, দুলাল ও সপেদ আলী, পীরগঞ্জে বাচা, শীবচরন, সমশের, লতিব,বলিয়া দেবী চরণ, সাসির ভোলা, চইতু উলেখ্যযোগ্য। ঠাকুরগাঁও সদরে জয়নুল, নিজাম, এবং রাণীশংকৈল শুধুমাত্র কটকুগায়েন রয়েছেন।

সত্যপীরের গান উত্তর বঙ্গের বেল কয়েকটি জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়। নিঃসন্তান ও বিভিন্ন রকরেম রোগ বালাই থেকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তাদের বিশ্বাসকে বাস্তবে রুপদান করতে এমন গানের আসর দেখা যায়।
হঠাৎ বোবা, দোষদুষী, পাগল হওয়া, নিঃসন্তান এমনকি জীন পরীর আছর থেকে মুক্তি পেতে এমন গান গাওয়ানো হয় অর্থের বিনিময়ে। ৮ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত মানত কারী খরচ হয়।

এই গানের মুল বিষয় হল ছেলেদেরকে মেয়ে সাজিয়ে নাচানো, শাড়ী মেকাপ পড়ানো, জোকার বিভিন্ন ঢঙ্গে কৌতুকের মাধ্যমে মানুষকে হাসানোর মাধ্যমে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। রাত যত গভীর গান তত আনন্দ মুখর হয়ে ওঠে।

বাদ্যযন্ত্র হিসেবে তবলা, বাঁশি, করতাল, ঢোলও বিভিন্ন রকেরম দেশীয় যন্ত্র দিয়ে গান গাওয়া হয়ে থাকে। সত্যপীরের গানের শিল্পীদের প্রশিক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই। বেশীর ভাগ দিনই তাদের অনাহারে দিনানিপাত করতে হয়। এদের সবাই গরীব শ্রেণীর অভিনেতা।

এমন করুন কাহিনীর বর্ননা দেন চায়ের কাপে চুমু দিতে দিতে কটকু গায়েন। তিনি বলেন ঠাকুরগায়ের এই সত্যপীরের গান বিলুপ্ত হওয়ার পথে। প্রায় হাঁড়িয়ে যাওয়া এই গান হয়তবা নতুন প্রজন্ম কখনোই জানতেও পারবেনা। বর্তমানে এই গানকে ধরে রাখতে তিনি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাসহ সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।



মন্তব্য চালু নেই