আবহাওয়া, জলবায়ু ও লোডশেডিংয়ের কারণে

উখিয়ায় পানি সংকটে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত

কক্সবাজারের উখিয়ায় বর্তমানে খাল-বিল, নদী-নালায় পানি নেই। পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকরা শংকিত হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন সহ পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংই কাল হয়েছে এসব প্রান্তিক চাষীদের। দীর্ঘদিন যাবৎ অনাবৃষ্টির ফলে বি¯তৃর্ণ বোরো চাষাবাদ ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশংকা জনক ভাবে গভীরে চলে যাওয়ার কারণে সেচ পাম্প গুলোতে পানি না পেয়ে কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, অনাবৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৬ হাজার ২শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা চাষাবাদ করেছে। সেচ সংকট নিবারনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাহিদা অনুপাতে অনেকেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করে সেচ সংযোগ নিয়েছে। এসমস্ত চাষাবাদে পানি সরবরাহের জন্য ডিজেল চালিত ১৪০টি ও বিদ্যুৎ চালিত ১ হাজার ৮শ’ ৬৭ সেচ পাম্প বসানো হলেও চাষাবাদে থোর পড়ার এ মোক্ষম সময়ে অধিকাংশ সেচ পাম্পে পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ।

সোমবার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম ডিগলিয়া, সিকদার বিল, কামারিয়ারবিল, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, হারাশিয়া, দোছরী, মাইল্যারকুলসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বোরো মৌসুমে মারাত্মক পানি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার ক্ষুদ্রচাষী নূরু, বর্গাচাষী ছৈয়দ আলমসহ একাধিক লোকজন জানান, তারা কানি প্রতি ৫ হাজার টাকা লাগিয়তে জমি নিয়ে বোরো চাষাবাদ করেছে। জমির পরিচর্যা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তাদের আরো প্রায় ৩/৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে। কৃষকেরা জানান, চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত সার সরবরাহ থাকলেও পানি সংকটের কারণে তারা লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করছে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের চাষাবাদের এ করুণচিত্র চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই বলে অনেকেই হতাশ কণ্ঠে মত প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, এ উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার ১৮ জন কৃষক চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী বোরো চাষাবাদ করে জীবন ধারণ করে আসছিল। তন্মমধ্যে প্রান্তিক চাষী সাড়ে ৪ হাজার, ক্ষুদ্র চাষী ৮ হাজার, বর্গা চাষী আড়াই হাজার, মাঝারী চাষী ১৫ জন ও বড় চাষী মাত্র ৩ জন। অধিকতর ভূমিহীন কৃষকেরা ধারদেনা করে প্রতিবছর বোরো চাষাবাদ করে আসার ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমেও তারা অনেক আশা আঙ্খাকা নিয়ে বোরো চাষাবাদে বিনিয়োগ করেছে। ঘিলাতলী পাড়া গ্রামের বড় চাষী (যারা ১৮ কানি জমির উপরে বোরো চাষাবাদ করে থাকেন) হাজী আব্দুর রহমান জানান, আরো কয়েকদিন বৃষ্টি না হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিবারে ৩ হাজার ২শ’ চাষী কৃষক আর্থিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন বলেন, খাল-বিল, নদী-নালার শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সেচ পাম্প গুলোতেও পানি সংকেটর সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ১২০ ফুট গভীরে পানির অবস্থান রয়েছে। এখানে যে সমস্ত সেচ পাম্প গুলো রয়েছে ওই সমস্ত সেচ পাম্পের গভীরতা ৮০/৮৫ ফুট। তাই অধিকাংশ সেচ পাম্পে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শংকর কুমার মজুমদার জানান, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বোরো চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই