উখিয়ার ২০টি খাল অস্থিত্বের হুমকিতে : ৭টি লবনাক্তের ঝুঁকিতে

কক্সবাজারের উখিয়ায় ঐতিহ্যবাহী অন্তত ২০টি খাল অস্থিত্বের হুমকির মুখে। পাশাপাশি আরও ৭টি খাল লাব্যতা হারিয়ে ও লবনাক্ত পানি বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূ-উপরিস্থ প্রাকৃতিক জলধার এসব খাল সংস্কার রক্ষণা-বেক্ষণ ও তদারকীর অভাবে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন মাটি ও পলি পড়ে ভরাট হয়ে পড়ায় বর্ষাকালে খাল সংলগ্ন এলাকা গুলো প¬াবিত হয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে এসব খাল পানি শূণ্য হয়ে পড়ায় ভু-গর্ভস্থ পানির সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আবার বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও সীমান্ত নদী নাফের মোহনায় ৭টি খালে শুষ্ক মৌসুমে লবনাক্ত পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া চাষাবাদ ও গৃহস্থালি কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

ভূ-প্রাকৃতির গঠন অনুসারে উখিয়ার সর্বত্র মানব দেহের শিরা- উপশিরার মত অসংখ্য খাল-ছড়া ছিল। কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক জলাধার এসব খাল-ছড়া, পাহাড়, টিলার মাটি ও পলি জমে এগুলো মরা খালের রূপান্তরিত হয়। ২৫-৩০ বছর পূর্বেও এসব খালের গড় গভীরতা ছিল ৩০-৩৫ ফুটের মত। বর্তমান এসব খালের গভীরতা গড়ে ৮-১০ হয়ে গেছে। আবার কোন কোন খাল ভরাট হয়ে এবং জবর দখল নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে সরজমিনে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

হলদিয়াপালং ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া চৌধুরী(৭৫), রাজাপালং ইউনিয়নের পাতাবাড়ি গ্রামের হাফেজ আলী আহমদ (৭২), রত্নপালং ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ হাশেম সহ অনেক বয়োবৃদ্ধ লোক বলেন, মানুষ কিভাবে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে তা চাক্ষুস দেখেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ায় সর্ব ক্ষেত্রে মানুষের আত্ম সামাজিক, ব্যক্তি জীবনের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। ব্যবসা বার্ণিজ্য, বৈধ-অবৈধ পন্থায় আয়, বিদেশ প্রবাসী, চাকুরী সহ নানা ভাবে দেশের মানুষের এ ধরণের উন্নতি হলেও আগামী প্রজন্ম ও বর্তমান কিশোর-যুবক শ্রেণী এসবের পরিনতি ভোগ করতে শুরু করেছে। পরিকল্পিত ভাবে পল¬ী- গ্রাম, শহর, রাস্তা-ঘাট, সরকারী-বেসরকারী ও ব্যক্তি পর্যায়ের নানা অবকাঠামো-স্থাপনা নির্মাণে দৃশ্যমান কোন আইনী কাঠামো না থাকার সুযোগে এলাকার প্রভাব প্রতিপত্তিশালীদের দস্যুতা চলছে বলে তাদের অভিমত।

উখিয়ার প্রধান খাল রেজু মিয়ানমারের ওয়ালিডং পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ বেয়ে একাধিক শাখা প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটিয়ে সোনারপাড়া হয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশে গেছে। বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, মনখালী, ছোয়াংখালী, ছোট ও বড় ইনানী খাল স্থানীয় পাহাড় থেকে সীমান্ত নদী নাফ ও বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশেছে। অন্যদিকে মরিচ্যা, গুরাইয়ার দ্বীপ, পাইন্যাশিয়া, ধুরমখালী, বড় বিল, পাতাবাড়ী, থিমছড়ী, ভালুকিয়া, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, ডেইলপাড়া, ডিগলিয়া, টাইপালং, হিজলিয়া, দোছড়ী, হরিণমারা ইত্যাদি খাল গুলো দিয়ে এক সময় পানির প্রবাহ থাকলে ক্রমান্বয়ে এগুলো পলি ও মাটি পড়ে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে গেছে। সীমানা নাফের শাখা বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী ও বঙ্গোপসাগরের শাখা মনখালী, ছোয়াংখালী, ছোট ও বড় ইনানী বড় খাল দিয়ে লবনাক্ত পানির হার বৃদ্ধি পাওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে নাব্যতা হারানো মরিচ্যা, গুরাইয়ার দ্বীপ, পাইন্যাশিয়া, ধুরমখালী, বড় বিল, পাতাবাড়ী, থিমছড়ী, ভালুকিয়া, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, ডেইলপাড়া, ডিগলিয়া, টাইপালং, হিজলিয়া, দোছড়ী, হরিণমারা খাল গুলো বর্ষার পানি ধারণ করতে না পেরে এসব খালের পাড় সংলগ্ন এলাকা গুলোতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়।

এসব প্রভাবশালীরা নৈতিক-অনৈতিক অর্থের জোরে যত্রতত্র খাল-ছড়া, পুকুর, জলাশয় ভরাট করে, রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, দোকান সহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। এ শ্রেণীর লোকদের ইন্দন ইশারায় একালের গভীর-অগভীর সরকারী বনাঞ্চলের গাছ, পাহাড়, টিলা নিধন, জবর দখল অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দস্যুতা, সরকারী দায়িত্বশীলদের অবহেলা, আইনের শৈতিলতা প্রভৃতি কারণে এতদাঞ্চলের খাল-ছড়া, প্রাকৃতিক জলধার প্রভৃতি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এ ব্যাপারে আমরা সচেতনতা মূলক কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সংশি¬ষ্ট কর্তব্যরত দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতা ও অবহেলায় পরিনতি ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। উখিয়ার ছড়া ও খাল গুলো তত্বাবধনা বা সংস্কার ও রক্ষণা-বেক্ষণে সরকারী কোন সংস্থা না থাকায় অভিভাবকহীন ভাবে এ গুলো ক্রমেই বিলুপ্ত ও জবর দখল হয়ে যাচ্ছে। এসব পানি ব্যবস্থাপনার দেখা-শুনার জন্য বিএডিসির সেচ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প থাকলেও উখিয়ায় বিএডিসির কোন কার্যক্রম নেই। পাশা-পাশি মাইক্রোকেডিটের উপর অনেক এনজিও কাজ করলেও পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত এবং প্রাকৃতিক জলধার সমূহ রক্ষণা-বেক্ষণ ও পূর্নঃ উদ্ধারে কোন এনজিও এখানে কাজ করছে বলে খুঁেজ পাওয়া যায়নি।

উখিয়া কৃষি অফিসার শংকর কুমার মজুমদার উখিয়ায় অনেক খাল-ছড়া থাকলেও এ গুলো ভরাট হয়ে এবং জবর দখল হয়ে শুকিয়ে বিলুপ্তির পথে স্বীকার করে বলেন, খাল-ছড়া গুলোর বেহাল অবস্থার কারণে শুষ্ক মৌসূমে এখানে বোরো চাষাবাদ সহ নানা সবজি চাষে কৃষকদের চরম ভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এসব খাল-ছড়া গুলো পরিবেশ রক্ষার্থে সংস্কার, সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।



মন্তব্য চালু নেই