উখিয়ার শীর্ষ মানবপাচারকারী দালালরা বেপরোয়া : পুলিশের রহস্যজনক ভুমিকা

সারা দেশে মানবপাচারে ৩ শতাধিক দালালচক্র সক্রিয় থাকলেও আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এখনো প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়ার সমুদ্রতীরবর্তী ৬টি পয়েন্ট দিয়ে ৬০জন দালাল মানবপাচার করছে। পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এসব চিহ্নিত দালালেরা দিবারাত্রি সমূদ্র পথে মানবপাচার অব্যাহত রাখার কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কার্যক্রম কোন কাজে আসছে না।

বিশেষ করে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের শীর্ষ মানবপাচারকারীর বেলাল মেম্বার, জাহেদ মেম্বার, ধয়া খাতুর ছেলে মীর আহমদ, ফয়েজ আহমদ, সোলতান মেম্বার, কালা জমির, মোস্তাক আহমদ, রফিকুল হুদা, সোনাইছড়ি গ্রামের আব্দুল্লাহ, ফরিদ আলম, ছৈয়দ হোছন বেনসন, শাহজাহান, জমির আহমদ, আরিফুল ইসলাম ডাইলা, শফি আলম, হাসান উল্লাহ, মনজুর আলমসহ প্রায় ৬০ জনের একটি সক্রিয় দালাল চক্র ৬টি পয়েন্ট দিয়ে মানবপাচার কাজে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের সাথে এসব পাচারকারীর দালালের রয়েছে গভীর সখ্যতা। যে কারণে মানবপাচার থামানো যাচ্ছে না বলে সচেতন মহলের অভিমত।

পুলিশ বলছেন, এসব মানবপাচারকারী দালালেরা পলাতক থাকায় তাদেরকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও পুলিশের পাশা-পাশি বিজিবি, কোস্টগার্ড, ট্যুরিষ্ট পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের তৎপরতায় উখিয়ার ৬টি পয়েন্টে মানবপাচার কিছুটা কমে আসছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দাবী করেন।

জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী জানান, ইউনিয়ন পরিষদের গুটি কয়েক ইউপি সদস্য মানবপাচারে জড়িত রয়েছে। এব্যাপারে পুলিশকেও তথ্য দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না সেটা আমার জানা নেই। হয়তো অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে।

ইউপি মেম্বার সেলিমুল্লাহ জানান, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এসব মানবপাচারকারীরা আইনের আওতায় না আসায় সাগর পথে মানবাপাচার আশংকা জনক হারে বেড়েছে। উখিয়ার মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কাশেম এমএ বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে ব্যাপক ভাবে জন সচেনতামূলক সভা-সেমিনার অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়াও চিহ্নিত মানবপাচারকারীদের একটি তালিকাও প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু মানবপাচারকারী এসব দালাল চক্রদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোন আগ্রহ নেই বলে তিনি জানান। মানবপাচার নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম প্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। কারণ ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ- হরতালে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত থাকার এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতি রাতেই রেজু মোহনা, বাদামতলী ঘাট, সোনাইছড়ি, মনখালী, ছেপটখালী ও শামলাপুর পয়েন্ট দিয়ে নির্বিঘ্নে সাগর পথে মানবপাচার করে যাচ্ছে দালালরা। অভিযোগ উঠেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এসব চিহ্নিত মানবপাচারকারীরা পুলিশের চেয়ে কি বেশি শক্তিশালী তা স্থানীয়দের অভিমত। না কি পাচারকারীদের কাড়ি কাড়ি টাকার কাছে পুলিশ জিম্মি হয়ে পড়েছে এ টাই এখন এলাকাবাসীর প্রশ্ন। যে সব পয়েন্ট দিয়ে মানবপাচার চলছে সে গুলো হলো দেশের ৬০ পয়েন্টের মধ্যে পাচারের মূল ঘাঁটি শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাদামতলী ঘাট, সীপোর্ট খ্যাত মিনি ইয়ারপোর্ট রেজু মোহনা অন্যতম।

উখিয়া থানায় দাযেরকৃত অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মানবপাচারকারী আবুল কালামের সহযোগী দালাল হিসাবে দীর্ঘ দিন ধরে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানব পাচার করে আসছেন, মনখালী গ্রামের বশরত আলীর ছেলে মোহাম্মদ হোছন প্রঃ ফেসুক্রুরী (৪৫), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দু রাজ্জাক (২৮), মোঃ ফয়সাল (৩২), মোহাম্মদ হোছন (৩৫), তোফাইল আহম্মদ, বাহাদুর, গোলাম শরিফের ছেলে নুরুল বশর, চেপটখালীর ফয়েজুর রহমান, মাদারবুনিয়ার শফিকুর রহমানের ছেলে আব্দুল জলিল (২৫), মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মোজাম্মেল হক, মৃত আব্দুল্যার ছেলে আবু তাহের, মোঃ ইউনুছের স্ত্রী রোকসানা আক্তার, মোঃ জাফরের ছেলে আব্দুল জলিল, মোজাহের মিয়ার ছেলে মোঃ উল্যাহ, চোয়াংখালী গ্রামের, জাহেদুল আলম, বর্মাইয়া হাশেম মাঝি, শামশুল আলমের ছেলে রুবেল, আব্দুল্লাহর ছেলে আব্দুল আজিজ, ছৈয়দুর রহমানের ছেলে আব্দুর রহিম, আবুল কাছিম প্রঃ সুদি কাছিমের ছেলে মনজুর আলম, মোঃ আলমের ছেলে আবু তাহের, মৌলভী বদিউজ্জামানের ছেলে করিম উল্লাহ, আব্দুল মালেকের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন, শফি আলমের স্ত্রী রহিমা খাতুন, মোঃ হোছনের ছেলে ভুলু, সোনার পাড়ার নুরুল কবিরের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা রেজি প্রঃ রেবি ম্যাডাম, রত্নাপালং ইউনিয়নের গয়ালমারা গ্রামের রোস্তম আলী বৈদ্যের ছেলে আনোয়ার ইসলাম প্রঃ আনোয়ার ড্রাইভার ওরপে ডঙ্গী আনোয়ার, পূর্ব সোনার পাড়া বড় পাড়ার হাজী হোছন আলীর ছেলে আব্দুর রশিদ, সোনার পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্বে বাড়ী বদিউল আলমের ছেলে নুর হোছন, পূর্ব সোনার পাড়া গ্রামের কালা মন্টুর ছেলে নুরুল কবির, সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে রোস্তম আলী, সোনার পাড়া গ্রামের অজি উল্যাহর ছেলে কাউছার আহম্মদ জনি, ওমর সওদাগরের ছেলে আলমগীর হোছন রানা, পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের আবু ছৈয়দের ছেলে মাহাদু, নুর মোহাম্মদের ছেলে আহম্মদ শরিফ, মৃত হোছন আলীর ছেলে শাহ আলম, মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে আব্দুল্লাহ, আব্দুল জলিলের ছেলে লাল মাঝি, মৃত মোজাফ্ফর আহম্মদের ছেলে রাসেল, ফজল আহম্মদের ছেলে শামশু আক্তার, উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের হাবিব উল্লাহর ছেলে জয়নাল উদ্দিন জুনু, আমির হামজার ছেলে ছৈয়দ আলম, সুলতান আহম্মদের ছেলে মুজিবুল হক, সোনার পাড়ার জমির আহম্মদ প্রঃ কালা জমির, সোনাইছড়ি গ্রামের শফি আলম, জমির আহম্মদ, শামশুল আলম সোহাগ, লম্বরী গ্রামের ছৈয়দ আলম তাবাইয়া, বেলাল প্রঃ লাল বেলাল, উখিয়ার রূপপতি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জমির মিয়া, গফুর মিয়া (৩৮), কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের সেকান্দরের ছেলে আবু ছৈয়দ (২৬), আবু ছিদ্দিক (৩০), চোয়াংখালী গ্রামের শামশুল হকের ছেলে ছলিম উল্লাহ (৩০), জালিয়া পালং ডেইল পাড়া গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে মোঃ আবু তাহের (৩৫), আহম্মদ হোছনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৮), রফিক উল্লাহ (৩০), রহমত উল্যাহ (৩২), সোনার পাড়া গ্রামের মির আহম্মদ প্রঃ মিরু বলির ছেলে মোঃ শফিউল আলম (৩০), নাজির হোছন প্রঃ নাজুর ছেলে জয়নাল আবেদিন (২৮), শামশুল আলমের ছেলে জালাল উদ্দিন (২৮), মৃত কাদের হোছন বৈদ্যর ছেলে নুরুল কবির (৪০), নুরুল কবিরের ছেলে নুরুল আবছার (২০), বশির আহম্মদের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৫), মোঃ ইলিয়াছের ছেলে সাগের আলী প্রঃ সাগর (৩০), নুরুল আলম মাঝি মোঃ আলম (৩৫), সোনাইছড়ি গ্রামের মোঃ সোলতান প্রঃ হাতী সোলতানের ছেলে জিয়াউল হক (৩৮), শফি আলম (৩৮), কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মৃত ফোরকান আহম্মদের ছেলে রবিউল আলম (২২), মৃত ফারুক আহম্মদের ছেলে ছৈয়দ আমিন (২৭), হাছু মিয়ার ছেলে হামিদ হোসেন (২২), জাফর আহম্মদের ছেলে আরিফ উল্লাহ (২০), শফি উল্লাহর ছেলে ছৈয়দ কাশেম (১৯), কামাল হোছনের ছেলে রশিদ উল্লাহ (২০), উলা মিয়ার ছেলে মোঃ কালু (২০), মাদারবুনিয়ার আব্দুল জলিল, লম্বরী পাড়ার বেলাল প্রঃ লাল বেলাল (৩৫), পশ্চিম সোনার পাড়ার জালাল উদ্দিন, পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে মুজিবুল হক (৪০), জুম্মাপাড়া গ্রামের মৃত কবির আহম্মদের ছেলে আব্দুস ছালম, মকবুল আহম্মদের ছেলে বেলাল প্রঃ কালা বেলাল, অফিস পাড়া গ্রারে মৃত ছালেহ আজম্মদের ছেলে শামশুল আলম, মুফিজুর রহমান সহ শক্তিশালী সিন্ডিকেট চত্র“ জড়িত রয়েছে।

প্রতিবেদনে শনাক্ত হওয়া ২৩০ দালাল সহ ৩ শত দালাল মানব পাচারের সক্রিয় ভুমিকা রেখে চলছে। একই সঙ্গে আরো ১৬ মাঝিও জড়িত রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলে মানবপাচার কিছুটা কমে আসবে বলে জানান উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান। গত শুক্রবার গভীর রাতে সোনাইছড়ি গ্রামের ফরিদ আলম ও আব্দুল্লাহকে মানবপাচারের জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

উখিয়া থানায় মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ জোরালো অভিযান চালিয়ে গত ১ বছরে সহস্রাধিক ভিকটিম ও অন্তত ২০/২৫ জন দালাল আটক হয়। এ সংক্রান্ত ২৫টি মামলাও থানায় রুজু করা হয়। অবশিষ্ট ৬০ জনের একটি মানবপাচারকারী দালাল চক্র সক্রিয় থাকলেও পলাতক থাকার অজু হাতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।

জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ জানান, এব্যাপারে পুলিশকে সব সময় সর্তক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে সাগর পথে পাচার করার সময় ভিকটিম সহ দালালদের আটক করতে সক্ষম হয়। তবে পুলিশ এসব চি˝িত পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি জানান।

কক্সবাজার ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, পুলিশের পাশা-পাশি বিজিবি ও চোরাইপথে মানবপাচার প্রতিরোধে কার্যকর ভুমিকা পালন করে চলছে। হরতাল অবরোধে ব্যস্ত সময় কাটানোর পরও বিজিবি সদস্যরা সাগারের চোরাই পয়েন্ট টহল জোরদার বাড়ানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই