ঈদের পর সরকার বিদায়ের আন্দোলন : খালেদা জিয়া

আসন্ন ঈদের পর জোরেশোরে সরকার বিদায়ের আন্দোলন শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির আন্দোলনে এখানে (জয়পুরহাটে) ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। এই আন্দোলনে জয়পুরের ১২ জন শহীদ হয়েছে। তাদেরকে আমরা আর্থিক সহয়তা দিয়েছি। এছাড়া অনেকে আহত হয়েছে।’

রোববার জয়পুরহাট শহরের রামদেও (আরবি গভ. হাইস্কুল) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।

বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে জনসভায় উপস্থিত হওয়ায় উপস্থিত জনতাকে সালাম জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদেরকে দেখে আমার সাহস আরো বেড়ে গেছে। আমি তাই বলতে চাই, ঈদের পর জোরে শোরে আন্দোলন শুরু করে এই চোর খুনি অত্যাচারি দূর্নীতিবাজ লুটেরা সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের মতো সাহসী লোকেরা সাথে থাকলে আমরা কোন ভয় নাই। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি আপনাদের সঙ্গে থাকবো ইনশাল্লাহ। এই স্বৈরাচারী দুর্নীতিবাজ সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘হরতাল হরতাল করেন, তবে এখন নয় ঈদের পর সব কর্মসূচি দেবো। এই কর্মসূচিতে বাধা দিলে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ সব কর্মসূচি দেয়া হবে।’

নিদর্লীয় সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৫৪ জন যদি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১১ জন অনির্বাচিতদের দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হবে না কেন? তারা তো কোনো আইন পাস করবে না। দৈনন্দিন কাজ করবে। আর নির্বাচন করবে।’

বেগম জিয়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আপনারা এদেশের সন্তান। অযথা সাধারণ জনগণের ওপর গুলি চালাবেন না। গুলি চালালে এর দায় এড়াতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘দেশে কোনো বৈধ সরকার আছে? আওয়ামী লীগ জবরদখলকারী সরকার। তাই আমাদেরকে বলে তাদেরকে বৈধতা দিতে। বৈধতা দেয়ার মালিক আমরা নই। জনগণ। জনগণ সেদিন ভোট দেয় নাই।’

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই উল্লেখ করে খালেদা বলেন, ‘আজকের দেশে দুই রকমের বিচার। সাধারণ মানুষ ও বিএনপির জন্য এক ধরণের বিচার। আর আওয়ামী লীগের জন্য অন্যরকম বিচার। আওয়ামী লীগ গুম-খুন করুক, তাদের বিচার হয় না। মামলা হয় না। তারা জামিন পেয়ে যায়। আর বিএনপি কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার সারের দাম, বীজের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। সরকার উৎপাদিত খরচেও ধান কিনে না। কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত। এই আওয়ামী লীগ থাকলে কৃষকের কোনো উপকার হবে না।’

ভারতে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ দিশেহারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বুঝেছে পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা বুঝে গেছে জনগণ তাদের পাশে নেই। আমরা প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই জেনে তারা আরো আবোল তাবোল বকছে।’

কোনো ধর্মের মানুষই আওয়ামী লীগের সময়ে নিরাপদ নয় উল্লেখ করে খালেদা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত। ক্ষমতায় এসেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে হাত রাঙ্গিয়েছে, এরা রক্ত পিপাসু। তাই তাদের বিরুদ্ধে আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য প্রস্ততি নিন।’

বিএনপির নেত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ আন্দোলন চায়। আর তাই আমি আন্দোলনের ঘোষণা দিলেই আওয়ামী লীগ আমাকে বালুর ট্রাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। বন্দী করে রাখে কিন্তু এবার ঈদের পর আন্দোলন হবে আপনারা আমাকে পাশে পাবেন। আন্দোলন করেই এই জালেম সরকারকে বিদায় করবো।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে দেমের মানুষ আপনাদের পাশে নেই। দেশের মানুষ পরির্বতন চায় খুনী, লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচতে চায়। আর এই পরির্বতন আসতে পারে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে।’

পুলিশ প্রশাসনের প্রতি লক্ষ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা সরকারি চাকরি করেন। যে সরকারই ক্ষমতায় আসবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন ঠিক আছে তাই বলে নিজ দেশের মানুষকে গুলি করে মারা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি ছাড়া মানুষের জন্য কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ ঋণ নিয়ে নিয়ে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের মধ্যে শেখ মুজিব ঘটা করে তার পুত্রের বিয়ে দিয়ে পোলাও, কোরমা খেয়েছে। আর দেশের মানুষে না খেয়ে দুর্ভিক্ষের মধ্যে মারা গেছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আজ দেশে প্রতি পদে পদে আওয়ামী লীগ মানবাধিকার ভঙ্গ করছে। আর এর সব দায় হাসিনার। কাজেই হাসিনাকে এর জবাবদিহি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ৩১০ জনকে হত্যা এবং ৬৫ জনকে গুম করা হয়েছে। এসবের জবাব দিতে হবে। স্বাধীনতার পর রক্ষী বাহিনী যেভাবে মানুষ গুম খুন অপহরণ করেছে একই কায়দায় এই কাজ করছে র‌্যাব। তার সঙ্গে চলছে ব্যবসা। কাউকে গুম করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। কাউকে টাকা দিলেও ছেড়ে দেয়া হয় না।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে চলছে আওয়ামী সন্ত্রাস ও টেন্ডাবাজি। যার নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় মিরপুর কালশী বিহারী ক্যাম্পে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ঘরে তালা দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে ৯ জন মানুষকে। এর মদদদাতা তথাকথিত সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা। তাই অবিলম্বে ইলিয়াস মোল্লাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’

এ সময় সভামঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই