ইয়াবা কেড়ে নিয়েছে ভালোবাসা

৮ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন রত্না বেগম। এখন সেই স্বামীর হাতেই নির্যাতিত হতে হচ্ছে তাকে। শুধু শারীরিক নির্যাতনই নয়, তাকে বিবস্ত্র করে প্রায়ই বাসা থেকে গলাধাক্কা দিয়ে রাস্তায় বের করে দেন ইয়াবাসেবী স্বামী জালাল। তার নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পায় না ছয় বছরের একমাত্র সন্তান জুয়েলও। তাকে মারধর করে ছুড়ে মারেন তিনি। প্রতিবাদ করলে অমানবিক নির্যাতন চালান শ্বশুর আবদুল হান্নান ও শাশুড়ি কুলসুম বেগমও। জালালের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্তান, বাবা ও মাকে নিয়ে শুক্রবার সকালে হাজির হন রত্না। তারা ঘটনার নির্মম বর্ণনা দেন ডিউটি অফিসারের কাছে। পরে রত্না সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

রত্না বেগম জানান, তারা পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। বংশাল কসাইটুলিতে তাদের বাড়ি। তিনি একমাত্র সন্তানকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল উত্তরপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। দীর্ঘদিন প্রেম করার পর আট বছর আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক জালালকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। দুই বছর পর তাদের একটি সন্তান হয়। এরই মধ্যে জালাল গাঁজা সেবন শুরু করেন। প্রথমে বাইরে সেবন করে বাসায় ফিরতেন। পরে ঘরেই সেবন শুরু করেন। বছর দুয়েক আগে জালাল ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন। প্রথমদিকে বাইরে ইয়াবা সেবন করলেও এখন ঘরেই সেবন করেন। দিন যত যাচ্ছে, তার আসক্তি ততই বাড়ছে।

রত্না আরও জানান, ইয়াবা যে একটি খারাপ জিনিস তা জালালকে বোঝানো যাচ্ছে না। প্রতি রাতে ৫-৬টি ইয়াবা সেবন করেন তিনি। সন্তান ইয়াবা ভালো না বললে, উল্টো তার ওপর নির্যাতন চালান। শিশুটি মাঝেমধ্যে ইয়াবা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। এ কারণে তাকে মারধর করেন জালাল। এমনকি বিছানা থেকে ছুড়েও ফেলে দেন। রত্নার ভাষায়, যারা তাকে ইয়াবা সেবনে বাধা দেয়, তাদের সবার ওপরই নির্যাতন চালান জালাল।

তিনি জানান, ইয়াবা সেবনে বাধা দেয়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তার ও সন্তানের ওপর নির্যাতন চালান জালাল। তার মাথা এবং চোখে আঘাত করেন। খবর পেয়ে তার (রত্না) মা-বাবা বাসায় এলে তাদেরও মারধর করা হয়। মা হালিমা জালালকে ইয়াবা সেবন করতে নিষেধ করলে তাকেও মারধর করা হয়।

রত্না জানান, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শুক্রবার রাতেও তাকে বিবস্ত্র করে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরে আশপাশের বাসার লোকদের হস্তক্ষেপে তিনি বাসায় প্রবেশের সুযোগ পান।

এ ব্যাপারে জালাল দাবি করেন, তিনি তার স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সঙ্গে একাধিকবার তার ঘরে একান্তে সময় কাটাতে দেখেছেন। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। তাই যাকে দেখেন, তাকেই তিনি গালাগাল করেন। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন রত্না।

বিষয়টিকে খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক রাহাৎ খান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এএসআই হারুন অর রশিদকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই