ইসি গঠন: চূড়ান্ত হয়নি নাম, ফের বৈঠক ৬ ফেব্রুয়ারি

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশের জন্য এখনও নাম চূড়ান্ত করতে পারেনি সার্চ কমিটি। এর আগের বৈঠকে করা ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের ব্যাপারেই এখনো তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করছেন তারা। নাম চূড়ান্ত করতে ফের ৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি।

বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ।

তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে যে সংক্ষিপ্ত তালিকাটি করা হয়েছিল, আজকের (২ ফেব্রুয়ারি) সভায় মূলত এই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে আহরিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করা হয়। এটি আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে কমিটি মনে করে। একইসাথে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গেল দুইদিনে যে সমস্ত মতামত কমিটিকে দিয়েছেন, তাদের মতামতগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে। এগুলোর একটা সংক্ষিপ্তসার খসড়া আকারে আমরা তৈরি করেছি। এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর আশা করছি আপনারা সেটিও পেতে পারেন।’

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সামনে তিন দিন বিরতি দিয়ে আগামী সোমবার ফের বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘কমিটি আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় একইস্থানে আবার সভায় মিলিত হবে। একইসঙ্গে আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়, আগামী ৮ তারিখের মধ্যে কমিটি তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পারবেন এবং তা মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবরে উপস্থাপন করতে পারবেন।’

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে নতুন কোনো নাম নিয়ে আলোচনা হয়নি বলেও জানান আবদুল ওয়াদুদ। তবে যাদের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মূলত কি বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির যোগ্যতা সম্পর্কে যখন বিবেচনা করা হয়, তখন সাধারণত সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, কার্যক্ষমতা সবকিছুই দেখা হয়। পর্যালোচনা শেষে এই তালিকাটি সংক্ষিপ্ত করে চূড়ান্ত করা হবে।’

তবে সামনে এই তালিকায় নতুন কোনো নাম আসবে না, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২০ জনের তালিকাই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, এরপরও বিবেচনার জন্য নতুন নাম আসবে না।’

কমিটির এসব সুপারিশ বা প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ করা হবে কিনা, জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এটা কমিটি নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে। এই মুহূর্তে আমি ঠিক বলতে পারছি না। বিশিষ্টজনের মতামতগুলোও চূড়ান্ত হলে আমরা অন্তত ওয়েবসাইটে প্রকাশের চেষ্টা করব।’

তথ্য সংগ্রহের কাজ কোন পদ্ধতিতে করা হচ্ছে, কোনো সরকারি সংস্থার সহযোগিতায় করা হচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ এখন, তথ্য সংগ্রহের বহুবিধ পথ রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে তথ্য আহরণ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এটা বিভিন্ন পথে সংগ্রহ করা হচ্ছে।’

এর আগে দুই দফায় ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত নেয় সার্চ কমিটি। গত ৩০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দিনে দেশের বিশিষ্ট ১২ জন নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। এই ১২ বিশিষ্ট নাগরিক হচ্ছেন-সাবেক বিচারপতি আব্দুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ও এস এম এ ফায়েজ, এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজুলল হক এবং সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা।

সেই ধারাবাহিকতায় গত ১ ফেব্রুয়ারি চারজন বিশষ্ট নাগরিক-সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি।

গত ২৫ জানুয়ারি ৬ সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠনের পর বিশষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে দুদিনের বৈঠক ছাড়াও বৃহস্পতিবারসহ কমিটি নিজেদের মধ্যে তিনটি বৈঠকে মিলিত হয়। ২৮ জানুয়ারি প্রথম, ৩১ জানুয়ারি দ্বিতীয় ও ২ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দিনের মতো কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

এর মধ্যে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ৫টি করে নামের প্রস্তাব গ্রহণ করে সার্চ কমিটি। তাদের দেওয়া শতাধিক নামের তালিকা থেকে গত ৩১ জানুয়ারি সার্চ কমিটি ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকা নিয়েই মূলত এখন পর্যালোচনা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।



মন্তব্য চালু নেই