ইসলামে বায়াত হওয়া প্রয়োজনীয়তা কতটুকু (পর্ব-৩)

বায়াত বিষয়ে ২য় পর্বে লিখে বিভ্রান্ততার পরিসমাপ্তি টানতে পারি নাই পোষ্টটা বড় হয়ে যাবে বলে তাই এই পর্বেও কিছুটা লিখতে হচ্ছে। বায়াত তো হতে হবে এটা কোরআন হাদিস দ্বারাই প্রমানীত। অবশ্যই বায়াত হতে হবে; হবেন তাদের কাছে যারা কোরআন হাদিস মেনে চলে। আল্লা রাছুল সা.কে পূর্ণ সম্মান দেয়। আল্লা রাছুল সা.কে পাওয়ার জন্য তওবা পড়াবেন বায়াত হবেন সে পির সাহেবের কাছে। যে পির সাহেব বায়াত পড়ানোর সময় রাছুল সা. এর নামে স্থলে নিজের নাম সহ কলেমা পড়াবেন সেরকম পিরের হাতে বায়াত হলে আল্লার রাছুল সা. আপনাকে সাফায়্যাত করার হক হারিয়ে ফেলবেন। কারণ আপনি নিজেই পিরের নামে কলেমা পড়ে রাছুল সা.কে বাদ দিয়ে পিরকে রাছুল হিসাবে মেনে নিয়েছেন। উদাহর সরূপ পিরের নামে  একটি কলেমা দিচ্ছি।

“লা ইলাহা ইল্লালাহা বাবা উহহু রাছুলুল্লাহ”। নাউজুবিল্লাহ মীন জালেক। খুব বেশীদিন আগের কথা নয় শুনেছি জামালপুর জেলার নারিকেলি গ্রামে এক পির সাহেব মুরিদ বায়াত করার সময় কলেমা পড়ানোর সময় “লা ইলাহা ইল্লালাহা অমুক বাবা বান্ডারে রাছুলুল্লাহ” বলায় সেখানে থেকে পিটানি খেয়ে ফিরতে হয়েছে। নিজের নাম জুড়ে বলায় এই ধরণের পির যারা আছে এরা ইবলিশদের নেতা এবং বড় ইবলিশ। কারণ আগুনের তৈরী ইবলিশ দেখা যায় না কিন্তু দেহধারী জাহেল এই সকল ইবলিশ দেখা যায় ধর্মভীরু মানুষকে প্রকাশ্যেই জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। এই সব দলেও বাংলাদেশে মশহুর পির আছেন তাদের কিতাবে পাওয়া যায়। তারা এমন কথাও বলেন পির ধরাও জীবনের শেষ শেরেক। আমার বুঝে আসে না তারা এই ধরনের কথা কিভাবে বলেন? আল্লা কি শেরেক করার জন্য বায়াত হতে বলেছেন? আশ্চর্য্য হতে হয় বিজ্ঞ মুরিদগন এই কথাটাও পিরের কাছে জানতে চান না এই কথা কি কোরআন সম্মত? আফসোস সেই সকল মারেফতের মুরিদদের যারা পিরের কথা মেনে আল্লা রাছুল সা. এর কথাও বর্জন করে। অবশ্য অধিকাংশ তরিকতের শিক্ষা পিরের মাঝেই আল্লা কাজেই কাগজ কালির কোরআনে কি বলা আছে সেটার চেয়ে পির আল্লার কথাই উত্তম মনে করে। তাদের আরো একটি কঠিন শিক্ষা যেটার কোন প্রমান জাহেরী ভাবে দিতে কেউ পারেন নাই। বিভ্রান্ত অধিকাংশ পীরই বলেন কোরআনে ৯০০০০ হাজার কালাম তার মধ্যে ষাট হাজার বাতেনী আর ৩০০০০ হাজার জাহেরী। আর শত শত বৎসর যাবৎ প্রচলিত আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬টি মিলানোই কঠিন। আপনার ঘরে যে কোরআন আছে আয়াত সংখ্যা আছে গুনে দেখবেন। গুনে পাওয়া যায় ৪৩০টি আয়াত কম অর্থাৎ ৬২৩৬টি। কোরআনে ১৯শের যে গাট বন্ধন আছে এটা অনেকেরই জানা কিন্তু প্রচলিত আয়াত ৬৬৬৬ এবং কোরআনে আছে ৬২৩৬টি এমনকি কিছু মারেফতের বিভ্রান্ত গননার ৯০০০০ হাজার এই তিনটি সংখ্যাই ১৯ দ্বারা বিভাজন হয় না। কাজেই নবীর ওসিয়তকৃত খলিফা মারেফতের বাদশা মওলা আলী আ. এই ব্যপারে কি বলেছেন তা মনে করিয়ে দিতে হয়। ৩য় খলিফা ওসমান রা. যখন কোরআন সংকলন করে প্রচারের উদ্দেশ্য পাঠাচ্ছিল তখন মওলা আলী আ. বলেছিলে হে ওসমান কোরআন তুমি যেভাবেই সংকলন করে থাকো সেটা আমার হাত দিয়ে নাও। নাহয় ইসলাম এক্ষুনি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। যখন ওসমান সংকলিত কোরআন মওলা আলী আ. এর হাতে দেওয়া হলো মওলা আলী বলেছিলেন “হাজা কুরআনুন্ ছামিতুন্ ওয়া আনা কুরআনুন্ নাতিকুন”(এটা বোবা কুরআন আর আমি বাগ্মী কুরআন) এই কথা লিখে তার নীচে সই করে দিয়েছিলেন। সূত্র: নাহজুল বালাগা। যেহেতু এই কোরআনকে মারেফতের বাদশা মওলা আলী স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন এটাতে যাই আছে সেটাইকে মানা তো মওলা আলীকে সম্মান করা। আর এই কোরআনের বিপক্ষে কিছু বলা তো মওলা আলীর চেয়ে বেশী জ্ঞানী হওয়ার প্রমান দেওয়া। কাজেই এই ব্যপারে মারফতের অনুসারীদের সতর্ক থাকাই উত্তম। যদি বিজ্ঞ পন্ডিতগন কোরআন এর আয়াত নিয়ে মতভেদ করেন ১৯ দ্বারা বিভাজ্য না হওয়ার কারণে তবে প্রমান তো দিতে হবে কোন কোন আয়াত বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি দেখিয়ে প্রমান করে দিতে পারেন ঐসব আয়াতগুলি বাদ দিয়েছেন ততকালীন ক্ষমতাসীনগন। মওলা আলী আ. এর খেলাফত এত বড় অন্যায় তিঁনি কিভাবে মেনে নিলেন? এই ধরণের বিভ্রান্তমুলক প্রচারনা তো মওলা আলী আ. এর শানে বেয়াদবীরই সামিল। যারা এই ধরণের কথা বলেন মানুষকে প্রচার করার আগে নিজের অবস্থানটা কোথায় গিয়ে দাড়ায় সেটা অবশ্য ভাবা উচিত বলে মনে করি। কোরআনে আল্লা বলেছেন ২:৪২# তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না। তাই এমন সব বিভ্রান্ত মুলক কথা শুনে চুপ থাকা তো সত্য গোপন করারই সামিল। বর্তমানে পিরগিরি অধিকাংশই আছে পির জাদাদের হাতে। পিরজাদারা কিছু জানুক আর নাই জানুক পির যেন হয়েই জন্মায়। পক্ষান্তরে ২০/৩০ বছর মুরিদ হয়েও কোন কিছুই প্রাপ্তি হয় না। যেমন সাড়া জীবন কলার খাচা  মাথায় নিয়ে কলা কলা করেও কলার মজা যেমন বুঝে না ঠিক তেমনি বছরের পর বছর দরবারে গিয়েও প্রাপ্তি না পাওয়াটা কলার স্বাধের মতনই।

এক মাজহাব প্রচার করছে সাহাবাগন আয়াত কমিয়েছে। যদি আপনাদের কথা মেনেই নেই তো আপনারা যে সাহাবাকে মানেন তিঁনি কেন ঠিক করলেন না? কোরআনে আয়াত সংখ্যার ব্যপারে কোথায় লিখে গেছেন কোন কিতাবে সেটার দলিল সহ লিখে প্রকাশ করুন। সম্মানী ব্যক্তিকে অযাচিত ভাবে জোর পূর্বক সম্মান প্রদর্শনে অনেক সময় অবমাননা হয়ে যায়। এই জ্ঞান যাদের মধ্যে নেই তাদের সম্মানে অসম্মানে সম্মানী ব্যক্তির কিছু যায় আসে না। ঠিক তেমনি অবুঝ প্রেমিকের প্রেম ভালবাসা মওলা আলী এবং আহলে বায়াতগনের কাছে গ্রহন যোগ্য হওয়ার কোন কারণ নাই। এই মায়া কান্নাকে এক কথায় হিন্দিতে (মাগুর মাছলি কি আছু) অর্থাৎ ‘কুমিরের কান্না’ বলে বাংলায় এক কথায় কি বলে মনে আসছে না।

যা হোউক আমার নজরে আসা বায়াত সম্পর্কিত অনেক কিছুই উল্লেখ করলাম। আমার কথায় বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই খোজ নিয়ে দেখবেন যেটা যুক্তি সংগত এবং কোরআন হাদিসের সাথে সংপৃক্ত মনে হয় মানবেন। বায়াতে বিষয়টা শেষ করতে হবে। অতিরিক্ত জ্ঞানী মানুষ গুলি তাদের বক্তব্য এমন ভাবে প্রচার করেন যে দলে ভারী বলে সেটাই যেন সত্য হয়ে যাবে। আল্লার দৃষ্টিতে দল বড় হলেও সুযোগ পাওয়ার কোন উপায় নাই। এই ব্যপারে আল্লা বলেছেন ৬:১১৬# আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। কাজেই এই আয়াতের কথা ধরেই বলচ্ছি অধিকাংশরা যেটা করছে সেটা সঠিক মনে করলে ইসলামের সঠিক স্বাধ পাওয়া যাবে না। আর যারা চোখ থাকতে দেখবে না, কান থাকতে শুনবে না বিবেক দিয়ে চিন্তা করবে না। আল্লা বলেছেন পবিত্র কোরআনে তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বরং তার চেয়েও খারাপ।…………চলবে

 লেখক : ফকির উয়ায়ছী

http://www.owaisitarikah.org/



মন্তব্য চালু নেই