ইমোশনাল ইটিং মোকাবেলা করতে জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

মানুষ যখন মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, রাগ বা হতাশায় ভোগে তখনই খাবারের প্রতি ঝোঁকে। তারা ক্ষুধার পরিবর্তে আবেগতাড়িত হয়ে খায়। একবার এই ভাবে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করে ফেললে তারা তাদের আসল ক্ষুধার অনুভূতি বুঝতেই পারেনা। স্ট্রেসকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই বেশিরভাগ মানুষ খাওয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এজন্য সেই মানুষটিকে দোষারোপ করা যাবেনা। এরকম ক্ষেত্রে স্ট্রেস দূর করার চেষ্টা করাই হচ্ছে প্রধান কাজ। তাহলেই আপনি ইমোশনাল ইটিং মোকাবেলা করতে পারবেন। ইমোশনাল ইটিং মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জেনে নিই চলুন।

১। পরিবার থেকে সমর্থন দেয়া প্রয়োজন

আপনি যখন স্ট্রেস অনুভব করবেন তখন পরিবারের বা বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতা নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না। না হলে আপনার সমস্যাটি বাড়তেই থাকবে। আপনার ঘনিষ্ঠ কোন আত্মীয় বা আপনার প্রিয় মানুষের সাথে আপনার সমস্যাটি নিয়ে কথা বলুন। এর ফলে আপনার মনের বোঝা কিছুটা হালকা হবে। যদি আপনি আপনার অবস্থার কথা বুঝতে পারেন কিন্তু আপনার স্ট্রেস এবং ইমোশনাল ইটিং এর অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাহায্য নিতে পারেন। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মনে করা হয় যে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা শুধু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যারই সমাধান করতে পারেন। এই ধারণাটি ঠিক নয়। মনে রাখবেন তারা মানুষের বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, তাই আপনার সমস্যাটি থেকে আপনাকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করতে পারবেন তারা।

২। কর্মক্ষেত্রে ও বাসায় স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খান

মানুষ যখন স্ট্রেস অনুভব করে তখন সে তৈলাক্ত ও মসলা যুক্ত খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয় বেশি এবং বড় এক থালা খাবার খেয়ে ফেলতে পারে নিমিষেই। এমন ক্ষেত্রে তৈলাক্ত খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার বেঁছে নিন। কারণ দীর্ঘমেয়াদে এ ধরণের খাবার আপনার ভালোর পরিবর্তে খারাপই করবে বেশি। তাই স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে গেলেও কর্মক্ষেত্রে ও বাসায় স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খান।

৩। লোভ সংবরণ করুন

আপনি যদি স্ট্রেস বা হতাশাবোধ অনুভব করলেই মিষ্টি, আইস ক্রিম বা চিপস খান তাহলে এগুলো বার বার খাওয়ার লোভ হবে। তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার কখন ইমোশনাল ইটিং এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তা লিখে রাখুন। তাহলে পরবর্তীতে আপনি এটা মিলিয়ে দেখতে পারবেন। কখন এবং কি জন্য আপনার বেশি খাওয়া হয় তা আপনি বুঝতে পারবেন।

৪। মনোযোগ দিয়ে খান

আপনি যদি কোন ভাবেই খাওয়া কমাতে না পারেন তাহলে মনোযোগ দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। অন্য ভাবে বলা যায় যে, ধীরে ধীরে খান এবং প্রতিটা কামড়ের স্বাদ ও গন্ধ নেয়ার চেষ্টা করুন। খুব ভালো ভাবে খাবারের দিকে লক্ষ করুন। অর্থাৎ অন্যমনস্ক ভাবে না খেয়ে খাওয়ার সময় মানসিক ভাবেও উপস্থিত থাকুন।

৫। ফুড ডায়েরি

সব শেষের তবে সবচেয়ে কার্যকরী পন্থাটি হচ্ছে আপনার একটি ফুড ডায়েরি রাখা। এর ফলে আপনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কী কী খাচ্ছেন তা যেমন জানা যাবে তেমনি পরিমানের ও হিসাব করা যাবে। যেমন আপনি যদি দৈনিক ৫ কাপ ক্যাপুচিনো কফি পান করে থাকেন তাহলে তা লিখে রাখলে আপনি আপনার দৈনিক কফি গ্রহণের মাত্রাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কারণ আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কফি গ্রহণের মাত্রাটা একটু বেশি। ফলে আপনি এটি কমাতে পারবেন।

এছাড়াও কোন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হলে প্রথমে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন “আসলেই কি আমি ক্ষুধার্ত”? উত্তরটি পাওয়ার জন্য ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এই ৫ মিনিটের মধ্যে যদি আপনি ক্ষুধা অনুভব করেন তাহলে খান, আর যদি ক্ষুধা অনুভব না করেন তাহলে উত্তরটি আপনার জানা। স্ট্রেস অনুভব করলেই গভীরভাবে দম নিন। এর ফলে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে এবং আপনি পরিষ্কার ভাবে চিন্তা করতে পারবেন এবং সঠিক খাবারের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে, ২০ মিনিট হাঁটার ফলে চকলেট খাওয়ার আসক্তি কমতে সাহায্য করে। ব্ল্যাক টি পান করুন। গবেষণায় জানা যায় যে, ব্ল্যাক টি কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ ৪৭% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে। কর্টিসল হচ্ছে স্ট্রেস হরমোন যা চিনিযুক্ত ও ফ্যাটি ফুড খাওয়ার ইচ্ছাকে জাগ্রত করে।



মন্তব্য চালু নেই