ইন্টারপোলের ‘রেড অ্যালার্ট’ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়

পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করার বিষয়টি কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। আসামিকে গ্রেপ্তারে সংস্থাটি কোনো বাহিনী পাঠায় না বা কোনো দেশকে চাপও দিতে পারে না। এক প্রশ্নের জবাবে ফ্রান্সে অবস্থিত ইন্টারপোলের সদর দপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইন্টারপোল জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারও কাছে তারা ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে না।

ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি (ওয়ান্টেড পারসন) হিসেবে তারেক রহমানের নাম-পরিচয় ও বিবরণ রয়েছে। তবে সেখানে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির তারিখ উল্লেখ নেই।

ইন্টারপোলের নোটিশে মামলার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এ ঘটনায় ২২ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ লোক আহত হন। ২০০৮ সালের ১১ জুন এ মামলায় ২২ জনকে আসামি করে সিআইডি প্রথম অভিযোগপত্র দেয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ মামলার অধিকতর তদন্ত করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। মোট ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৯ জন পলাতক আছেন। আসামিদের তালিকায় আরও আছেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান।

প্রথম আলোর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোলের গণসংযোগ বিভাগ ই-মেইলের মাধ্যমে জবাব দেয়। সংস্থাটি জানায়, ‘রেড অ্যালার্ট’ আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। এর মাধ্যমে সংস্থাটির ১৯০টি সদস্য দেশকে জানানো করা হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করতে কোনো সদস্য রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইন্টারপোল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত করতে সদস্য দেশগুলোর পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করে। যাতে এক দেশের সরকার অপর দেশের সরকারের কাছে অপরাধীকে গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণে ব্যবস্থা নিতে পারে।

ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির ফলে যুক্তরাজ্য থেকে কোনো আসামির প্রত্যর্পণ ঘটেছে-এমন নজির পাওয়া যায়নি। আবার যুক্তরাজ্য সরকার চাইলেই কাউকে প্রত্যর্পণ করতে পারে না। আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও না। কারণ সংশ্লিষ্ট আসামির আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

দেশটির আসামি প্রত্যর্পণ আইন (এক্সট্রাডিশন অ্যাক্ট ২০০৩) অনুযায়ী, আসামি ফেরত আনতে দূতাবাস বা সরকারের বিশেষ প্রতিনিধির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বা সাজাপ্রাপ্ত হলে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এবং যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির উপযুক্ত তথ্যসহ আদালতের নির্দেশের বিস্তারিত জমা দিতে হয়। একই সঙ্গে এটা নিশ্চিত করতে হয় প্রত্যর্পণের পর ওই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না। তাঁকে আনীত অভিযোগ ব্যতীত অন্য মামলায় সাজা দেওয়া হবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সর্বোচ্চ সুযোগ থাকবে। এসব বিষয় নিশ্চিত হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবেদন আমলে নিয়ে একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করবেন।

একইসঙ্গে আবেদনটি আদালতের বিবেচনার জন্য পাঠাবেন। এ পর্যায়ে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট বলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় একটি প্রাথমিক শুনানির পর আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানির (প্রত্যর্পণ-বিষয়ক শুনানি) দিন ধার্য করেন। দায়ের করা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ‘এক্সট্রাডিশন অ্যাক্ট ২০০৩’ এবং ‘ইউরোপীয় হিউম্যান রাইটস অ্যাক্ট ১৯৯৮’ বিবেচনায় নিয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেন। এ সিদ্ধান্ত আসামির বিপক্ষে গেলে তিনি উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ পান। এ বিচার প্রক্রিয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। প্রথম আলো

আরো পড়ুন :

তারেকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট



মন্তব্য চালু নেই