ইনুর পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর ‘ইশারায়’ শান্ত

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে ‘চুরির’ জন্য সাংসদসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে ভালোই চাপে পড়েছেন জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। আর সংসদ সদস্যরা তো তার পদত্যাগেরই দাবি তুললেন, তাও আবার সংসদে।

সোমবার রাতে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘সংসদে সবাই দোষী, একমাত্র তথ্যমন্ত্রীই সাধু। তিনি সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা অবমাননাকর। আমরা যখন দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, সেসময় তিনি এমন বক্তব্য রেখে জাতিকে বিভ্রান্ত করলেন। তার এই বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। আমরা যদি সবাই চলে যাই, তাহলে আপনি সংসদ চালাবেন কীভাবে? তিনি একজন তথ্যমন্ত্রী হয়ে জাতিকে কি তথ্য দিলেন? তাকে অবশ্যই নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।’

এর আগে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর ৩০ মিনিট সংসদ কার্য বন্ধ ছিল। এ সময় কোটা পূরণ হলেও স্পিকারের অনুপস্থিতির কারণে সংসদ শুরু হতে বিলম্ব হয়। রাত ৮টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আসেন। পরে সংসদ কার্য শুরু হলে সংসদ সদস্যরা তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পয়েন্ট অফ অর্ডারে বক্তব্য রাখার সুযোগ চান।

শুরুতে স্পিকার আপত্তি জানালেও পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে হাসানুল হক ইনুকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী আমাদের সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের জন্য তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। আর তথ্যমন্ত্রী তার নিজ এলাকায় কি কি কাজ করেছেন আগে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’

আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ’র বক্তব্যের পর সংসদে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সংসদ সদস্যরা ইনুর পদত্যাগ দাবি করে চিৎকার করতে থাকেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় সংসদ সদস্যরা কিছুটা শান্ত হন।

পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। এমনকি তিনি তথ্যমন্ত্রীকে নিজের সততার বিষয়ে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন। এ সাংসদ বলেন, ‘আমি তথ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই- আপনি আপনার সব মিডিয়া এবং দুদক নিয়ে আমার এলাকায় তদন্ত করেন, কোনো অনিয়ম পেলে আমি পদত্যাগ করবো।’

এরপর স্পিকারের আহ্বানে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখা প্রসঙ্গে একটি বক্তব্যের ভুল বোঝাবুঝির কারণে সংসদ সদস্যরা কষ্ট পেয়েছেন। এ জন্য আমি তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। গতকালই গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছি। আমি মূলত আমার সেই বক্তব্যে অতীতের সরকারের অনিয়মের কিছু তথ্য দিয়েছিলাম। এ সময় কিছু উদাহরণ টেনেছিলাম মাত্র।’

তার এ বক্তব্যের পর আবারও সংসদে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্পিকার সংসদ সদস্যদের এ বিষয়ে আর কোনো বক্তব্য থাকলে তার সাথে আলাপ করার পরামর্শ দেন। এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা চিৎকার করে বলেন, ‘ওনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। উনি এমন বক্তব্য রাখতে পারেন না।’

পরে তথ্যমন্ত্রী আবার দাঁড়িয়ে তার এ বক্তব্যের জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তার সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকায় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো এমপি, আমি জানি টিআর কিভাবে চুরি হয়। সরকার ৩০০ টন দেয়, এর মধ্যে এমপি সাহেব আগে দেড়শ টন চুরি করে নেয়। তারপর অন্যরা ভাগ করে। সব এমপি করে না। তবে এমপিরা করেন।’



মন্তব্য চালু নেই