ইতালির ফুটবলে বাংলাদেশি রেফারি

২০০১ সাল। খেলার মাঠে হঠাৎ ইনজুরিতে পড়লেন রিপন বিশ্বাস। এরপর ইনজুরি ভালো হলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারলেন না। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) শিক্ষার্থী হয়েও খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না তার।

দেশের ক্রীড়া অঙ্গনের অগ্রপথিক এই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গর্ববোধ করতেন রিপন বিশ্বাস। ক্রিকেট খেললেও, অ্যাথলেট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না।

খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও, দমে যাননি রিপন বিশ্বাস। খেলার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার এই ছেলে বিকেএসপি থেকে স্পোর্টস বায়োমেকানিকসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০০৬ সালে জার্মান দূতাবাসের আমন্ত্রণে লিপিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বের ২০টি দেশের অ্যাথলেটদের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিংয়ে অংশ নেন।

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই ট্রেনিং সম্পন্ন করে রিপন ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে আসেন ইতালিতে। রোমের পিয়াজ্জা ভিত্তোরিও ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে কাজ করতে থাকেন।

ইনজুরি তাকে খেলা থেকে দূরে রাখতে চাইলেও, ইচ্ছা শক্তির জোরে খেলার সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বিকেএসসি’র সাবেক এই শিক্ষার্থী। তবে এখন তিনি ক্রিকেট নয়, ফুটবলের দেশ সুদূর ইতালিতে কাজ করছেন। ইতালির ফুটবলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ভালোই আছেন তিনি।

২০১১ সালে ইউরোপিয়ান মাস্টার্স ইন ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড হেলথে ভর্তি হন রিপন। এক পর্যায়ে ইতালির ফুটবলের জনপ্রিয়তা দেখে এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে লাগলেন।

ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ঘটনা মনে করতে গিয়ে রিপন বলেন, ‘আমি ভাবলাম ইতালির মতো দেশে যদি কোনোভাবে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি, তা হবে খুবই আনন্দের।’

যেই ভাবা সেই কাজ। যুক্ত হলেন ইতালি ফুটবল ফেডারেশন (এফআইজিসি) রেফারি ট্রেনিং কোর্সে। ইতালিয়ান ভাষায় দক্ষতা থাকায় ২০০৯ সালে রেফারি কোচিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাঁশি হাতে মাঠে নামার সুযোগ পান। এরপর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে ইতালির রিজিওনাল ফুটবলের খেলা পরিচালনা করছেন। সপ্তাহে দুটি ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পান। এজন্য ম্যাচ প্রতি সম্মানি পান ১০০ থেকে ১২০ ইউরো।

তবে উদ্যমী রিপন রিজিওনাল ফুটবলের রেফারি হিসেবেই স্থায়ী হতে চান না। রিজিওনাল থেকে একদিন ইতালির ন্যাশনাল লেভেলেও বাঁশি হাতে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখেন।



মন্তব্য চালু নেই