ইউপি নির্বাচন: আ.লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী ৩ শতাধিক

দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। গত জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও পৌরসভা নির্বাচনের পর এবার ইউপি নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে সংসদের বাহিরে থাকা বিএনপি। তবে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রথম ধাপের চূড়ান্ত প্রার্থীর অধিকাংশের জায়গাতেই একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীসহ রয়েছে নানা কোন্দল।

সূত্রে জানা যায়, দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদ্রোহী প্রার্থীদের। নৌকা প্রতীক না পেয়ে একই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। পৌরসভায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহীরা বিশেষ সাহস নিয়ে মাঠ দখলে রাখতে চাইছেন। দলের হাইকমান্ড বার বার তাগিদ দেয়ার পরও সংশ্লিষ্ট নেতারা দ্বন্দ্ব নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছেন। বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিদ্রোহীদের দমাতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “প্রথমবারের মতো স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করবেন। তা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্র যাকে চূড়ান্ত করবে শেষ পর্যন্ত সবাই তার হয়েই কাজ করবেন।”

আওয়ামী লীগ বড় দল হওয়ায় এমন দ্বন্দ্ব থাকা অামূলক কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “দলের সঙ্গে গাদ্দারি করে কেউ ভালো করতে পারেননি। ভবিষ্যতেও পারবেন না। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দল।”

সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় ৭৩৯টির মধ্যে ৩শ’র অধিক ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে বাগেরহাটের ৯ উপজেলার ৭৪টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে সরকারি দলের স্থানীয় নেতা ও সমর্থক পরিচয়ে ৩১ বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

কিশোরগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে অন্তত ২০ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। কোনো কোনো ইউনিয়নে দুই থেকে চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন খুলনা জেলার ৯ উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ভোলা জেলার ৪৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিপরীতে একই দলের স্থানীয় নেতা ও সমর্থক অন্তত ৭০ জনের বেশি প্রার্থী নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

সাতক্ষীরা জেলার সাত উপজেলার ৭৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ও সমর্থক অন্তত একশ’ জনের বেশি প্রার্থী আসন্ন ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা অন্যান্য জেলার চিত্রও একই। পরের ধাপগুলোয় বিদ্রোহীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেলেই নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে এমনটি ধারণা করেই বিদ্রোহীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আধিপত্যের কারণেও বিদ্রোহীর সংখ্যা বাড়ছে।

অন্যদিকে, বিশেষ নেতাদের সবুজ সংকেত আর মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেও অনেক জায়গায় বিদ্রোহীরা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের দমাতে ব্যর্থ হলে, তা দলীয় প্রার্থীদের জন্য বড় ফ্যাক্টর হবে বলে ধারণা করছে নেতাকর্মীরা।

তবে এমন ফ্যাক্টরের কথা উড়িয়ে দিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিম মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, দলের এমন সময় বিদ্রোহী হয়ে কেউ বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কেন্দ্র কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যথা সময়ে সবাই দলের প্রার্থীর হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।



মন্তব্য চালু নেই