ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ

গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১১-২০১২ থেকে ২০১৩-২০১৪ কর বছরে নিজ প্রতিষ্ঠান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার-কে প্রায় ৭৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দান দেখিয়ে বিপুল অংকের এ কর ফাঁকি দেন তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কর ফাঁকির অভিযোগ এনে ইউনূসের সকল প্রতিষ্ঠান ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়ের হিসাব তদন্ত শুরু করেছে এনবিআর। অতীতে ইউনূসের যেসব প্রতিষ্ঠান কর রেয়াত নিয়েছে সেগুলোর নথিপত্রও পুনরায় হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। অবৈধভাবে কর সুবিধা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে বাতিল হয়ে যেতে পারে পূর্বের দেওয়া এনবিআরের কর সুবিধা। এ ক্ষেত্রে রেওয়াত হিসেবে নেওয়া পুরো কর পরিশোধ করতে হবে ইউনূসকে।

তথ্যানুযায়ী, ইতোমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ২০১১-২০১২ থেকে ২০১৩-২০১৪ কর বছরে ফাঁকি দেওয়া আয়করের তথ্য উদঘাটন করেছে এনবিআর। ইউনূস দান কর আইন, ১৯৯০-এর বিধান ব্যবহার করে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার- এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৭৭ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা দান করেন। পরে কর কর্মকর্তারা দান কর আইন, ১৯৯০-এর ধারা ১০ অনুযায়ী তাঁর উপরিউক্ত দানের বিপরীতে প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা কর ফাঁকির প্রমাণ পান। এ কর পরিশোধে ড. ইউনূসকে আদেশনামও পাঠায় এনবিআর।

তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল কমিশন ও কর ট্রাইব্যুনালে আপিল মামলা দায়ের করেন। এ দুই জায়গায় মামলার রায় ইউনূসের বিপক্ষে গেলে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন তিনি, যা বর্তমানে বিচারাধীন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আয়কর রেকর্ড স্বচ্ছ নয়। তাঁর ঘোষিত আয়ের পরিমাণ, উৎস, পরিশোধিত কর, দান প্রদানসহ ইত্যাদি বিষয়ে রয়েছে নানান ধরনের অস্বচ্ছতা। বিগত এক দশকে তিনি যে পরিমাণ আয়ের ওপর কর পরিশোধ করেছেন করেছেন করমুক্ত আয় হিসেবে দাবি করেছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ অর্থ।

একটি অনুসন্ধানী সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে দেশে-বিদেশে তাঁর সম্পদের তথ্যের অনুসন্ধান করেছে। সংস্থাটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাইপ্রোফাইল বিজনেসম্যান ও সংস্থার সঙ্গে তার আর্থিক লেনদেনের সংশ্লিষ্ট খুঁজে পেয়েছে।

ইউনূস ইস্যুতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও কর ফাঁকির বিষয়ে জোর তদন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব তদন্তের মধ্যে অন্যতম হলো- ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ওই প্রতিষ্ঠানের তহবিল বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের বিষয়টি আইনানুগভাবে হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দান করা অর্থের উৎস এবং সম্প্রতি রিও অলিম্পিকে মশাল বহনের সুযোগ গ্রহণের জন্য তার দেওয়া চাঁদার উৎস অনুসন্ধান ও যাচাই করা, বকেয়া করদাবি পরিশোধ না করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা মামলাসমূহ মনিটর করা, ড. ইউনূসের কাছ থেকে দান গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টারের দান গ্রহণের প্রকৃতি, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের অন্যান্য উৎস ও গৃহীত দান-অনুদান ব্যয়ের বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।



মন্তব্য চালু নেই