মাতৃভাষাকে ভুলে বিদেশি ভাষার চর্চা নয় : প্রধানমন্ত্রী
নতুন প্রজন্মের ইংরেজী অনুসরণে বাংলার বিকৃত উচ্চারণের প্রবণতার বিষয়ে শিক্ষক-অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে। একুশ আমাদের শিখিয়েছে সংগ্রাম করতে। মাতৃভাষায় অর্জিত শিক্ষা হৃদয়ে বেশি প্রথিত হয়, এটা সহজে উপলব্ধি করা।’
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। দাবি তুলে রেখেছি হয়তো একদিন দাবি আদায় করতে পারবো। আমরা আশা করব, বিশ্বের বুকে আমাদের বাংলা ভাষা আলাদা একটা মর্যাদা অর্জন করবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেকে নিজের ভাষা শিখব কিন্তু পাশাপাশি অন্যদের ভাষাও শিখব।প্রধনমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানিং বাংলা বলতে গিয়ে ইংরেজি বলার একটা বিচিত্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানি না, অনেক ছেলে-মেয়ের মাঝে এখন এটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে যেন তাদের মর্যাদাই থাকে না- এমন একটা ভাব।’
তিনি বলেন, ‘এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের বেরিয়ে আসতে হবে। যখন যেটা বলবে সঠিকভাবেই উচ্চারণ করবে এবং বলবে।’
তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, আমাদের ভাষার ওপর বার বার আঘাত এসেছে। এটাকে কখনো আরবি হরফে এবং কখনো রোমান হরফে লেখার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তুু বাঙালি কখনো তা মেনে নেয়নি। এটা হচ্ছে বাঙালিদের চরিত্র, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। এ জন্যই আমরা সবসময় বলি একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করার। সেভাবে আমরা স্বাধীনতাও অর্জন করেছি এই সংগ্রামের পথ বেয়ে। অন্য ভাষার প্রতি তাঁর কোনো বৈরিতা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে, নিজের ভাষা আগে শিখতে হবে । সেই সাথে অন্য ভাষাও আমরা শিখবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু মাতৃভাষাকে ভুললে চলবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের কথা। ভাষা শিক্ষার মধ্যে আলাদা একটা মাধুর্য আছে। পৃথিবীতে একমাত্র মানব জাতিরই ভাষা আছে। তারাই কেবল বলতে পারে।’
তিনি বলেন ‘আমাদের ভাইয়েরা রক্ত ও জীবন দিয়ে আমাদের এই ভাষা উপহার দিয়ে গেছেন, এর মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে’।
ভাষা শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাষা শেখার জন্য আমরা বাংলায় নতুন অ্যাপ চালু করেছি। তা দিয়ে নয়টি ভাষা শেখা যাবে। আমরা ভাষা শেখার সুযোগ আরও বৃদ্ধি করতে চাই। নিজের ভাষার সাথে অন্য ভাষাও শিখতে হবে। কোনো ভাষার সাথে বৈরিতা নয়, বরং অনেক সময় শেখার পিপাসা মেটানোর জন্যেও অন্য ভাষা শিখতে হয়।’
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। এরপর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি বাংলায় ভাষণ দেই। তখন থেকে যতবার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি ততবারই বাংলায় দিয়েছি। আমি চাই এর মাধ্যমে অন্যরা আমাদের ভাষার মাধুর্য্য সম্পর্কে জানুক।’
তিনি বলেন, মাতৃভাষা দিবসটা এখন আর আমাদের একার না। এটা এখন সবার। এখন বিশ্বের ১৯০টি দেশে এটি পালিত হচ্ছে। এই দিবসকে আরো বিকশিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে।
শুধু বাংলাদেশের মানুষকে নয়, বিশ্বের প্রত্যেক মাতৃভাষার মানুষকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
মন্তব্য চালু নেই