আসামিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারাবন্দী করার নির্দেশ

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাহানূর বিশ্বাসের ওপর হামলাকারী বখাটেদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারাবন্দী করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রোণোদিত হয়ে মঙ্গলবার এ নির্দেশ দেন। আদালত আগামী ২৭ তারিখের মধ্যে আসামিদের কারাবন্দীর বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে জানাতেও বলেছেন।

মঙ্গলবার ভুক্তভোগী শাহানূরের বিষয়ে একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে আদালত আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেন, প্রতিবেদনটি গোচরে এসেছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব আসামিকে কারাবন্দী করে এই আদালতকে ২৭ নভেম্বর প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া গেল।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রতিবেদনের বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে।

গত ৪ নভেম্বর ‘উত্ত্যক্তের কথা জানানোয় পা হারালেন বাবা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল পরিবর্তন ডটকমে। এরপর বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষক শাহানুর বিশ্বাসের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে শারমিন আক্তার যশোর সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স বাঙলা বিভাগে অধ্যায়নরত। ছোট মেয়ে শাহানাজ আক্তার স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। তাদের আসা যাওয়ার পথে ওই গ্রামের মাহাবুব মেম্বারের (সাবেক) বখাটে ছেলে আজম ও তার সহযোগিরা বিরক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে গ্রামে কয়েকজনের কাছে বিচার দেন শাহানুর। বিষয়টি নিয়ে ক্ষিপ্ত হন মাহাবুব ও বর্তমান মেম্বার কামাল।

গত ১৬ অক্টোবর সকালে রাজমিস্ত্রীর সন্ধানে বাসা থেকে হন শাহানুর। কিছুদূর যাওয়ার পরই তার পথ আগলে দাঁড়ান মাহাবুব, কামাল (বর্তমান মেম্বার), আজম, হাসান, মোতালেব, বিল্লাল, জাহিদ, ইমদাদুল, দুখু, কালামসহ আরো অনেকে। তারা মাঠের জমিজমার বিষয় নিয়ে শাহানুরের সঙ্গে তর্কে জড়ান। অভিযোগ রয়েছে এটি ছিল শাহানুরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর একটি অজুহাত। এরপর তাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে রাস্তায় ফেলে যান। স্থানীয় অনেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরও মারপিট করার হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি শাহানুরকে বিএনপির কর্মী বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা শাহানুরের দুই পা কেটে ফেলেন। তিনি বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ভুক্তভোগীরা যেন মামলা করতে না পারে এ কারণে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে শাহানুরের পরিবারের সদস্যদের। সরকারি দলের নেতা হওয়ার কারণে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তখন পুলিশ বিষয়টি আমলে নেয়নি।

পরে শাহানূরের আত্মীয় ইয়াকুব সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৬ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি করেন ভাই মহিনূর। মামলার এক নম্বর আসামি মো. কামাল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি নলভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি পলাতক। অপর আসামি কামালের ভাই কামালের ভাই আজাদ গ্রেফতার হয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই