আশার আলো দেখছে না বিএনপি নেতাকর্মীরা!

‘ভাই আর কতো অপেক্ষা করবো? সামনের সপ্তাহ আর কবে শেষ হবে?’ কথাগুলো ছাত্রদলের এক কর্মীর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কাছে তার এই জিজ্ঞাসা। নেতা তাকে আশ্বস্ত করলেন সামনের সপ্তাহের মধ্যেই একটা কিছু হয়ে যাবে। হতাশ না হওয়ার কথা বললেন ওই নেতা। কিন্তু ছাত্রদলের ওই কর্মীর অপেক্ষার বাধ যেন আর টিকছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের ওই কর্মী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘নেতারা আমাদের শুধু আশ্বস্তই করছেন। কিন্তু কোনো ফলাফল দেখছি না। আর কত রাজপথে থাকবো?’

বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীদের উপর ক্ষোভ ঝেড়ে ছাত্রদলের ওই কর্মী বলেন, ‘সিনিয়র নেতারা কেউ মাঠে নামেন না। শুধু আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই মাঠে কাজ করছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিছিল করছি। কিন্তু কোনো আলো দেখছি না।’ ছাত্রদলের এই কর্মীর কথাই দলটির সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মনে ধ্বনিত হচ্ছে।

সেলিম উদ্দিন নামে নোয়াখালী অঞ্চলের বিএনপির এক কর্মী জানান, ‘আমরা তো রাজপথে আছি কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা তো মাঠে নামে না। শুধু আমাদের মাঠে নামতে বলে। কিন্তু কোনো কিনারা তো হচ্ছে না।’

২০১৩ সাল থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে ২০ দলীয় জোট। কিন্তু আন্দোলনে সফলতা দেখাতে পারেনি তারা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন এই জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে নতুন করে সংকটে পরেছে জোটের নেতারা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান  বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ স্বার্থে আন্দোলন করছে। এটা জনগণের বড় একটি দাবি। সরকারের উচিত এই দাবি মেনে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। তারা তো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে হতাশা চলে আসতে পারে। এটা স্বাভাবিক। তবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হয় না। আন্দোলন সফল হবেই।’

নেতারা আর কত অপেক্ষা করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসন সবকিছুই অবগত আছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন। এর বেশি কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম  বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটি আন্দোলন চললে তার গতি সবসময় এক থাকে না। মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। যানবাহন কিছু হলেও চলছে। তাই বলে আন্দোলন ব্যর্থ বলা যাবে না। এই সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ মেয়াদে আন্দোলন চালাতে হবে। কারণ সরকার দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিকল্প কর্মসূচি দিতে হলে নেতা-কর্মীদের চাপমুক্ত করতে হবে। কিন্তু এই সরকার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা অব্যাহত রেখেছে। বাইরে বের হয়ে কর্মসূচি পালনের সুযোগ রাখছে না। তাই সময় না আসা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যেতেই হবে।’

হরতাল-অবরোধ ব্যর্থ:

ঢাকার পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, সারাদেশের অবস্থাও আগের মতো নেই। মাঝে-মধ্যে বাসে আগুন বা পেট্রলবোমার খবর পাওয়া গেলেও, বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন। এরপর যুক্ত হয় সাপ্তাহিক বন্ধের দু’দিন শুক্র ও শনিবার বাদ দিয়ে টানা হরতাল। তবে এই হরতাল-অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব এখন আর নেই। রাজধানী ঢাকার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। সারাদেশের জনজীবনও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু আতঙ্ক আছে। মাঝেমধ্যেই পেট্রলবোমা হামলা হচ্ছে এখনো। যদিও মাঠে নেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ধারণা করা হচ্ছিল, গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ শিথিল করে নতুন কোনো কর্মসূচি দেবেন। বিএনপি নেতারা বিকল্প কর্মসূচি হিসেবে গণমিছিলের কথাও বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। খালেদা জিয়া অবরোধ-হরতাল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মাহবুবুর রহমান  বলেন, ‘আমরাও মানছি অবরোধ-হরতাল আর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। কিন্তু বিকল্প কোনো কর্মসূচির কথাও চিন্তা করা যাচ্ছে না। কারণ গণমিছিল বা সমাবেশ বা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে হলে নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকা দরকার। হামলা মামলা এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপন করে আছেন।’

বিকল্প কর্মসূচির খুঁজে পাচ্ছে না বিএনপি!

অবরোধ-হরতাল এখন অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তারপরও একই কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। জেনে-বুঝেও কেন একই কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মধ্যে।

বিএনপিসহ জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন যে টানা দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে চলে আসা এ কর্মসূচি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। এর প্রতি মানুষেরও কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু তারা বিকল্প কোনো কর্মসূচি খুঁজে পাচ্ছেন না।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে টানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চলছে। কিন্তু ইতিমধ্যে এই কর্মসূচি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে যান চলাচল এখন প্রায় স্বাভাবিক। ফিরে এসেছে চিরাচরিত যানজটও।

দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, এ দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনে হরতাল-অবরোধ ও অসহযোগকে সবচেয়ে কঠোর কর্মসূচি মনে করা হয়। এর মধ্যে বিএনপি জোট টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। এত লম্বা সময় কর্মসূচি চালানোর নজির এ দেশে নেই। তাই এ পর্যায়ে হয়তো কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। তবে ঢাকার বাইরে হরতাল-অবরোধের প্রভাব রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বিএনপির নেতাদের দাবি, সরকার র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে দমন-পীড়ন চালিয়ে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা অসম্ভব করে তুলেছে। কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতারা নিজ ঘরে ঘুমাতে পারছেন না। এমনকি রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিও দুই মাসের বেশি সময় ধরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ।

এমন পরিস্থিতিতে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির বাইরে আর কোনো বিকল্প দেখছেন না জোটের নীতিনির্ধারকেরা। পিছু হটার সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন তারা। একই সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতার লক্ষ্যে দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বলেছেন, যতক্ষণ না আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। এর পাশাপাশি বড় ধরনের সমাবেশ করা গেলেই বরং আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে ত্বরান্বিত করা যাবে।

মাঠে নামছেন না দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা:

বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভী আটক হন আন্দোলনের শুরুতেই। এরপর থেকে আরেক যুগ্ম সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতির মাধ্যমে আন্দোলনের ঘোষণা দিতেন। গত সপ্তাহ থেকে আট দিন ধরে তিনি নিখোঁজ। এখন বরকত উল্লাহ বুলু দলীয় কর্মসূচি জানাচ্ছেন। তাও একই স্টাইলে, অজ্ঞাত স্থান থেকে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ইলিয়াস আলীর খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। সালাহ উদ্দিন আহমেদের কী পরিণতি হবে তা কেউ বলতে পারে না। হাইকোর্টের নির্দেশের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে আদালতে হাজির করতে পারেনি। এখন বরকত উল্লাহ বুলুর কী হয় তা দেখার বিষয়। তাদের ভাষ্য, এরপর হয়ত যে নেতা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন, তাঁকেই নিখোঁজ করে দেয়া হবে।

গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপির লাগাতার অবরোধ ও ১৫ জানুয়ারি থেকে দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচির মধ্যে রাজপথে দলটির কোনো সিনিয়র নেতাকে দেখা যায়নি। মাঝে একবার গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেছিলেন। এরপর আর কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।

১৯ সদস্যবিশিষ্ট দলের জাতীয় কমিটির মধ্যে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে বাদ দিলে বাকিদের কাউকেই আন্দোলনে রাজপথে দেখা যায়নি। ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আহমেদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন ছাড়া বাকিরা আত্মগোপনে। আর ১৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে সেলিমা রহমান ও বিদেশে অবস্থানরত সাদেক হোসেন খোকা বাকিদের খোঁজ নেই। শীর্ষ নেতারা আন্দোলনের এসময়ে কোথাও তা তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানে না। তাদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নাম ও চেহারাই ভুলতে যাচ্ছে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না সরকারের বাহিনী। অনেকেই বলেন, বিএনপি গুহার মধ্য থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। আমার কথা গুহার মধ্য থেকেও তো কর্মসূচি ঘোষণা করতে দেয়া হচ্ছে না। সালাহ উদ্দিন আহমেদকে নিখোঁজ করে দেয়া হয়েছে। এখন নতুন যাঁরা বিবৃতির মাধ্যমে কর্মসূচি দিচ্ছেন বা দেবেন, তাঁদের কী পরিণতি হয় কে বলতে পারে?

আব্বাস-সোহেল কোথায়?

সরকার বিরোধী ‘অল আউট’ আন্দোলনে এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। লাগাতার অবরোধ আর দফায় দফায় হরতাল দিয়ে রাজপথ গরম করার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

তবে যেই ঢাকাকে নিয়ে খালেদা জিয়ার ‘মাস্টার প্লান’ সেই ঢাকায় আন্দোলনের ছিটে ফোটাও নেই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে মার্চ ফর ডেমোক্রেসিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়ায় খোকা-সালামের কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিলেন খালেদা জিয়া। দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার বিশ্বস্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে।

কিন্তু কী করছেন আব্বাস-সোহেল? খোদ দলের নেতাকর্মীদের কাছেই এমন প্রশ্ন। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে সারাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র করার চেষ্টা সফল হতে পারছে না যাদের জন্য তাদের মধ্য অন্যতম হচ্ছেন আব্বাস-সোহেল। সারাদেশ যেখানে অচল করার চেষ্টা চলছে সেখানে ঢাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দলের ভেতরে ভেতরে প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠেছে যে, তাহলে কি লাভ হল নতুন কমিটি দিয়ে। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে চলা লাগাতার অবরোধে ঢাকায় তেমন প্রভাব পরেনি। হরতালেও ঢাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

দীর্ঘ আড়াই মাসের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালে আব্বাস-সোহেলকে কখনও রাজপথে দেখা যায়নি। শুধু মাঝে মধ্যে বাসে পেট্রলবোমা আর ককটেল হামলা চালানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ঢাকার আন্দোলন। এটা নিয়েও রয়েছে তুমুল বিতর্ক।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ঢাকা মহানগরে নতুন কমিটি করা হলেও তারা দৃশ্যমান কিছুই করতে পারছেন তারা। মহানগরীর সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল মাঝে একটি ঝটিকা মিছিল বের করলেও কোথায় খুঁজে পাওয়া যায়নি মির্জা আব্বাসকে। গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর শাহজাহানপুরে কয়েক সেকেন্ডের একটি ঝটিকা মিছিল করার পর থেকেই দৃশ্যত তিনি নিখোঁজ।

দলের মধ্যম সারির নেতারা আক্ষেপ করে বলেন, ঢাকায় আান্দোলন গড়ে তোলার জন্য মির্জা আব্বাস ও সোহেলকে দায়িত্ব দেয়া হলেও এখন আন্দোলনের সময়ই তারা উধাও। তাদেরকে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন যদি অবস্থা হয় তাহলে খালেদা জিয়ার একার পক্ষে আন্দোলন কতটুকু এগিয়ে নেয়া সম্ভব।

মহানগর নেতাকর্মীরা আন্দোলনের দিক নির্দেশনা চেয়ে ফোন করেও তাদের কাউকেই পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আব্বাসের কারণে মহানগর নেতাকর্মীরাও হরতালে-অবরোধে মাঠে নামছেন না। আন্দোলন নিয়ে আব্বাস-সোহেলের এহেন কাণ্ডে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

নেতাকর্মীরা জানান, হরতাল ঘোষণার আগ থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান আব্বাস। নতুন করে টানা আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখলেও অবরোধ ঘোষণার পর থেকে তাকে কোথাও দেখা যায়নি।

বিগত আন্দোলনে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া থাকলেও পুরোপুরি ফ্লপ ছিল ঢাকা মহানগর বিএনপি। ঢাকার কারণে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়নি বলেও বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই অবস্থায় মহানগর কমিটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে দিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করা হয়। আব্বাসকে আহ্বায়ক করায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তখনই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। সরকারের সঙ্গে তার আঁতাত রয়েছে এমন অভিযোগও করেন কেউ কেউ।

কমিটি ঘোষণার পর শুধু খোকা অনুসারিই নয়, মহানগরীর সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝেও সৃষ্টি হয় ক্ষোভ ও হতাশা। তারা কিছুতেই আব্বাসকে মেনে নিতে পারেননি। মহানগর নেতাকর্মীদের সঙ্গে আব্বাসের সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো ছিল না। দীর্ঘদিন তিনি মহানগর রাজনীতির বাইরে ছিলেন। তাই হঠাৎ করে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়াটা তারা মেনে নিতে পারেননি। কমিটি ঘোষণার পর পরই এর সত্যতাও পাওয়া যায়। নিজস্ব কিছু অনুসারী ছাড়া মহানগর, কেন্দ্রীয় বা অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দনও জানানো হয়নি।

খালেদা জিয়া একা!

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারির আগে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীরা গেলেও এখন তিনি প্রায় একা হয়ে পড়েছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ছাড়া সিনিয়র কোনো নেতা খালেদা জিয়ার কাছে নেই। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে কোনো নেতা তাঁর কাছে যাওয়ারও চেষ্টা করেনি।

গতকাল ১৭ মার্চ ছাত্রদলের দুই নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার জন্য খাবার নিয়ে গেলে কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। আটকের ভয়ে কোনো সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যায়নি।

হতাশায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা:

গত ছয় জানুয়ারি থেকে লাগাতার আন্দোলন করছে ২০ দলীয় জোট। প্রায় আড়াই মাস টানা আন্দোলন চললেও সরকার অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। কোনো আশার আলো দেখছে না নেতাকর্মীরা। ফলে দেশব্যাপী দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছে।

বিশেষ করে আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকায় তারা খুবই হতাশ। দলের সিনিয়র কোনো নেতা চলমান আন্দোলনে রাজপথে নেই। হামলা-মামলার শিকার তৃণমূল নেতাকর্মীদেরই হতে হয়।

আন্দোলনের শুরু থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতারা রাজপথে না থাকলেও দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা রাজপথে সরকার সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে লড়াই করছেন। জেল-জুলুম-হামলা-মামলা মোকাবেলা করে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আন্দোলনের কোনো ফলাফল ঘরে তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় তারাও হতাশ হয়ে পড়ছেন। আর কতোদিন তাদেরকে এ আন্দোলন টানিয়ে নিতে হবে তারও কোনো ‘টাইমফ্রেম’ তাদের সামনে নেই। ফলে বিএনপির আন্দোলনের মূল ভরসা তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও হারাতে যাচ্ছে দলটি।

কর্মীরা মামলায় লড়ছেন নিজের টাকায়:

সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার মামলার খড়গ ঝুলছে দলটির পাঁচ লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর ঘাড়ে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মামলা ও আসামির সংখ্যা বেড়েই চলেছে দিন দিন। শতাধিক মামলার আসামিও করা হয়েছে দলের অনেক নেতাকে।

শত শত মামলা মাথায় নিয়ে ঘর ছাড়া দলটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাজার নেতাকর্মী। তারা ‍ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের অত্যাচার আর পুলিশি হয়রানির কারণে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। দলের জন্য এতো সব সহ্য করতে হলেও মামলা পরিচালনায় দলের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। নিজের টাকা খরচ করেই রাজনৈতিক কারণে দায়ে হওয়া মামলায় লড়তে হচ্ছে তাদের।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮ মামলার আসামি। ইতিমধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। যে কোনো সময় তার ওপর গ্রেপ্তারের খড়গ নেমে আসতে পারে বলে বিএনপির আশঙ্কা। দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি প্রধানের সাজা আতঙ্কও বিরাজ করছে দলে। উচ্চ আদালতে স্থগিত থাকা গ্যাটকোর পর নাইকো ও বড়পুকুরিয়া মামলা সচলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও এ পর্যন্ত অন্তত ২৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। একইভাবে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ৭৩টি মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে কারাগারে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ২৫ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে ষষ্ঠবারের মতো জেল খাটছেন তিনি।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন  বলেন, ‘সারাদেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ- সকলকেই আইনি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’

বিএনপির মুখপাত্র কারা?

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন এখন বিবৃতিনির্ভর। অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে হরতাল-অবরোধ ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রতিবাদ-নিন্দা জানানো হচ্ছে। অন্যান্য কর্মসূচির কথাও জানানো হচ্ছে একইভাবে।

দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন ‘নিখোঁজ’ হওয়ার আগ পর্যন্ত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন অজ্ঞাত স্থানে থেকে। তাঁর আগে এ দায়িত্ব পালন করেন যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ৬ জানুয়ারি আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর পক্ষেই বিবৃতি দিতেন তিনি। গত ৩১ জানুয়ারি তাঁকে আটক করে র‌্যাব।

এখন বিবৃতি দেওয়ার অর্থাৎ মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু। সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর ১১ ও ১২ মার্চ স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমে বিবৃতি দিলেও তিনি আপদকালীন দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র।

বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বরকতউল্লাহ বুলু গ্রেপ্তার হলে কে মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবেন- এ প্রশ্ন করা হলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপিতে নেতার অভাব নেই। প্রয়োজনে যে কাউকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিএনপির গঠনতন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহাসচিবই সাধারণত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্য কোনো নেতাকেও এ দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

নিখোঁজ সালাহ উদ্দিন আহমেদ:

সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ অভিযোগ করেন, ১০ মার্চ রাত নয়টা থেকে ১০টার মধ্যে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যান। সেখানে এক আত্মীয়ের বাসায় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। ১১ মার্চ রাতে তিনি এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিযোগ করেন। তবে আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ দাবি করেছে, ওই বাড়িতে যে সালাহ উদ্দিন ছিলেন, সেটাই নিশ্চিত নয়। এদিকে নিখোঁজ সালাহ উদ্দিন আহমদের খোঁজ চেয়ে হাইকোর্টে করা আবেদনের বিষয়ে শুনানি আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি হয়েছে। এ ঘটনায়ও দলের নেতাকর্মীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কখন আবার কে গুম বা নিখোঁজ হন সেই শঙ্কায় কাটছে নেতাকর্মীদের ক্ষণ।

রুহুল কবির রিজভী আটক হবার পর সালাউদ্দিন আহমেদ নিয়মিত বিবৃতি পাঠাতেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সালাউদ্দিনের অবস্থান জানার জন্য বেশ কিছুদিন যাবত অভিযান শুরু করেন। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে সালাউদ্দিনের খোঁজে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে পুলিশ তাকে আটকের খবর অস্বীকার করায় সালাউদ্দিনের নিখোঁজ বিষয়টি রহস্যের জন্ম দিয়েছে।

খালেদা জিয়ার কত ভুল?

রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বার বার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভুল করছেন বলে অভিযোগ করছেন রাজনীতি সচেতন মানুষ। তার ভুলের খেরাত দিতে হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়াটা ছিল বিএনপি সবচেয়ে বড় ভুল এটি এখন দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। এছাড়া খালেদা জিয়া নিজেই স্বীকার করেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আন্দোলন থেকে সরে আসা ঠিক হয়নি।

এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কিছু কিছু ব্যাপারে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির কৌশলের বিপরীতে ত্বরিত ও সময়োপযোগী পাল্টা কৌশলী ভূমিকায় উপনীত না হওয়ায় বার বার হেরে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।

২০১৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের শিডিউল থাকা সত্ত্বেও হরতালের অজুহাতে দেখা করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রতিবেশী একটি বড় দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করায় নেতিবাচক হিসেবে দেখেন রাজনৈতিক মহল। নিজ জোটের নেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এর কিছুদিন পর একই বছরের অক্টোবরে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্কট সমাধানে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন বেগম খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রেক্ষাপটে বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন দেন এবং গণভবনে চায়ের দাওয়াত দেন। কিন্তু হরতালের কর্মসূচি চলছে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবেন না বলে জানিয়ে দেন খালেদা জিয়া। এ অবস্থায় সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হলেও পরে আর গড়ায়নি। এটিকেও খালেদা জিয়ার ভুল সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২৪ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে সাক্ষাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজ তো বটেই, সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, দুই নেত্রীর সাক্ষাতে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের আঁধার দূর হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই নেত্রীর মধ্যে বহু কাঙ্ক্ষিত এ সাক্ষাৎ আর হয়নি।

এ ঘটনায় দলের সিনিয়র নেতারাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস প্রধানমন্ত্রীকে সৌজন্য না দেখানোর ঘটনার জন্য গুলশান কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরই দুষেছেন।

বার বার আল্টিমেটাম:

সরকার পতনের জন্য বেশ কয়েকবার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু কোনো আল্টিমেটামই সফল হয়নি। সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি আল্টিমেটাম দিয়েছিল খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবদিন। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও ছিল চরম উত্তেজনা। কিন্তু কিছুই হয়নি। এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার জয়নাল আবদিনকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এরআগে হেফাজতের ৫ মে ছিল আরেকটি আল্টিমেটাম। সেটা নিয়েও কম জল ঘোলা হয়নি। তবে কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেনি।

বিশিষ্টজনদের মত:

বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  বলেন, ‘বিএনপিকে অবশ্যই সহিংসতা বন্ধ করে গঠনমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসতে হবে। অন্যথায় আন্দোলনে সফলতা আসবে কি না তা বলা কঠিন।’

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান  বলেন, ‘বিএনপি এখন কী করবে এটা তাদের ব্যাপার। তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে কী করণীয় সেটা তারাই ঠিক করবে। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’

এবিষয়ে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিকে আন্দোলন করা ছাড়া আর বিকল্প কিই বা আছে বলুন? সরকারকেও ছাড় দিতে হবে। বিরোধী দলকেও ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সরকার তো একচুলও নড়ছে না। তাহলে কিভাবে সমঝোতা হবে?’ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই