আল্লাহ নেতা ছাড়া কাউকে ডাকবেন না
প্রথমেই বলে নিচ্ছি এই পোষ্টটি একটু বড় হবে দুই পর্বে লিখলে অনেকের হয়তো পড়া হবে না। কিন্তু ধর্য্য ধরে পড়লে আপনাদের চিন্তা করার মত অনেক বিষয় পাবেন। আল্লাহ নেতা ছাড়া কাউকে ডাকবেন না এটা আল্লাহই বলেছেন কোরআনের সূরা বনিইস্রাইলে আয়াত ১৭:৭১# “স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেককে তাদের নেতাসহ আহবান করব, অতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম হবে না”। এই আয়াতে উল্লেখ আছে নেতার সামনে আমল নামা দেওয়া হবে। খুব সহজেই বুঝা যায় নেতার করণীয় কিছুই থাকবে না শুধুই নেতার সামনে আমল নামা দিবেন আল্লাহ। আল্লাহ যেহেতু নেতা ছাড়া ডাকবেন না। সেহেতু নেতা তো এই দুনিয়াতেই মনোনীত করতে হবে। আর এটা যত তারাতাড়ি মনোনীত করা যায় ততই মঙ্গল কারণ মৃত্যুদিনক্ষন কেউই জানেন না। নেতা নির্ধারন করার জন্য আপনাকে কারো হাতে বায়াত হতে হবে। এই জন্য বায়াত সম্পর্কে কিছু আলোচনা দরকার ক্রমানয়ে তা করবো।
বায়াত আরবী শব্দ এর বাংলা অর্থ হচ্ছে বিক্রি হওয়া বা বিক্রি করা। কার কাছে বায়াত হবেন বা কোন সময় পর্যন্ত আপনার নেতাকে ধরে রাখা যাবে? সেটাও আল্লাহ কোরআনের সূরা নিসার আয়াতেই পরিষ্কার করেছেন ৪:৫৯# “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম”।
আল্লাহ এবং রাসুল এবং ওলিল আমর (নেতা)কে একই রকম ভাবে মানতে হবে। যদি মতভেদ হয় আল্লাহ এবং রাসুলের দিকে ফিরতে হবে। তখন আর সে নেতাকে মানা যাবে না। এই মতভেদ অবশ্যই নেতার কথাই বলা আছে যেহেতু আল্লাহ এবং রাছুল সা. এর দিকেই ফিরতে হবে। বাকী থাকে তো নেতাই।
সূরা মায়িদার ৩৫ নং আয়াতে বলা আছে ৫:৩৫# “হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য অন্বেষন কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও”। এই উসিলা কোন জড় বস্তু হতে পারে না। জড় বস্তু যদি পথ দেখাতে পারতো তবে তো মুর্তি পুজা আমাদের ধর্মের জন্য নিষেধ হতো না।
কাজেই কোন নিষ্প্রান বস্তু এমনকি কাগজের কিতাব মানুষকে সঠিক ভাবে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবে না। এখানে একটি কথা উল্লেখযোগ্য এক শ্রেনীর মানুষ উলিল আমর (নেতা) বলতে অদৃশ্যের নেতাদের কথাই বুঝে থাকেন। যদি অদৃশ্যের নেতাকেই আমাদের মেনে চলতে হয় তবে আল্লাহ মতভেদের কথা বলবেন কেন? মতভেদ হওয়ার জন্য তো প্রকাশ্যমান হওয়া জরুরী। অধিকাংশ মানুষ বলেন রাছুল সা. আমাদের নেতা। অবশ্যই রাছুল সা. আমাদের নেতা। শুধূ আমাদের মুসলমানদের জন্য কেন; সমগ্র জাতির নেতা সেতো হাসরের ময়দানে। রাসুল সা. তো বিশ্ব নবী এবং সাফায়্যাতকারী। চিন্তার বিষয় এই জগতে রাসুল সা. নেতা হিসাবে মানি অসুবিধা নাই। আল্লাহ যে বলছেন মতভেদ হলে আল্লাহ এবং রাছুল দিকে প্রত্যাবর্তিত হতে। সেটা আল্লাহ কোন রাছুলের দিকে ফিরতে বললেন! কাজেই চিন্তা করার দরকার। আর এক দল আছে তারা বলেন ইমাম মাহদী আসবেন নেতা হিসাবে। সেটাও যদি মেনে নেই তাহলে কি আল্লাহ তিঁনার সাথে মতভেদ হওয়ার কথা বললেন? সেটাও মানা যায় না। রাছুল সা. এর ওফাৎ হয়েছে প্রায় ১৪৫০ বৎসরের অধিক এই পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষ মারা গেল তারা তো নেতা বিহীন অবস্থাতেই মারা গেল তাদের কি আল্লাহ ডাকবেন না? আল্লাহ যাকে না ডাকবেন তার পরিনাম যে জাহান্নাম সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না। তাহলে আমাদের ইবাদত কি সবই বিফল! তা মোটেও হতে পারে না। অধিকাংশ মানুষ যেটা বলবেন চিন্তা না করে যদি সেটাই মেনে নেওয়া হয় তাতে আল্লাহ কি খুশি হবেন? তাও তো হওয়ার কথা নয় আল্লাহ তা পরিষ্কার করেই বলে দিয়েছেন সূরা আনআমে ৬:১১৬# “আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।”
কাজেই নিজের চোখ, কান এবং বিবেক কাজে লাগিয়েই ইসলাম মানতে এবং পালন করতে হবে। এই জগৎ থেকেই নেতা নির্ধারন করে যেতে হবে। এবং সূরা ফজর এর শেষ কয়টি আয়াতে বলা আছে ৮৯:২৭-৩০# “হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর”।
এই কাজ দুনিয়াতেই সমাধান করে যেতে পারলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে। কারণ মারা গেলে ওপারে আপনার আমার করার কিছুই থাকবে না শুধু পরিনাম ভোগ করা ব্যতীত।
বায়াত প্রসঙ্গে এত প্রচলিত হাদিস থাকা সত্ত্বেও কেন যে মানুষ কান কথায় বিশ্বাস আনে কেন চিন্তা আসে না? বোধগম্য নয়। প্রচলিত হাদিসগুলি আপনাদের জন্য উল্লেখ করছি।
১/ “যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করে সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে”।
২/ “যে ব্যক্তি মারা যায় অথচ তার গলায় বাইয়াতের রশি থাকে না সে কুফরীর মৃত্যুবরণ করে”।
৩/ “যে ব্যক্তি ইমাম ছাড়া মৃত্যুবরণ করে সে কুফরীর মৃত্যুবরণ করে”।
“জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ এর নিকট সালাত আদায়, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলমানকে নসীহত করার জন্য বায়আত গ্রহন করেছি”। -৪৯৯ নং হাদিসটি বুখারী শরিফ ইসলামি ফাউন্ডেশনের ২য় খন্ড থেকে। এই হাদিসটিতে পরিষ্কার দেখা যায় সালাত কায়েম এবং যাকাত আদায় এবং নসিয়ত করার জন্য বায়াত হওয়া জরুরী। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই নসিয়ত করারই অভ্যাশ। নসিয়ত করার জন্যও যে বায়াত হওয়া জরুরী সেদিকে দৃষ্টিপাত করেননা।
বায়াত অর্থ বিক্রি। কি বিক্রি করবেন? আপনাকে যখন বায়াতের পূর্বে তওবা পড়ানো হবে তখন আপনাকে তওবা পড়াবেন তার উসিলায় আপনার গুনাহ বিক্রি হয়ে যাবে। আপনি তখন গুনাহ মুক্ত মাসুম হবেন। তখন যদি আপনার মৃত্যু হয়। তখন আপনি জান্নাতের হকদার হবেন। হাদিসেতেই নয় নারী পুরুষের বায়াতের ব্যপারে কোরআনেও নির্দেশ আছে।
৪৮:১০# “যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন”। একটু খেয়াল করে আয়াতটি পড়লেই দেখবেন বায়াত হলে আল্লাহ পুরুষ্কারের অঙ্গিকারের কথাও বলেছেন। আল্লাহর পুরুষ্কার পেতে হলে তো আল্লাহর কথা মেনে বায়াত হওয়া জরুরী। আল্লাহর কথা না শুনে শুনছি সে সব লোকের কথা যারা দলে ভারী।
৬০:১২# “হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু”।
কোরআনের আয়াতটিতে বায়াতের শর্তগুলি আছে। যারা কোরআন হাদিস দেখে বায়াতের দিকে ধাবিত হচ্ছেন পির সাহেবগন বায়াত করিয়েই আয়াতটির প্রথম শর্তটি পরিত্যাগ করছেন। পিরের চেহারা স্মরণ/ পিরের ছবি ধ্যান/ পিরের নক্সা ধরা। তরিকত ভেদে একই শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। মূলত তারা অধিকাংশই পিরের চেহারার মাঝে আল্লাহ এবং রাছুল সা দেখার চেষ্টা করে। যা কিনা একের মধ্যে তিন দেখার সামিল। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ কোরআনে বলেছে ৫:৭৩# “নিশ্চয়ই তারা কাফের যারা তিনকে এক মনে করে”। তরিকতের অধিকাংশ অনুসারীগন কেন তারা ভুলে যায় আল্লাহ একটি নাম হচ্ছে “সামাদ” এই সামাদ অর্থ হচ্ছে নিষ্প্রয়োজন। আল্লাহর কোন কিছুরই দরকার নাই। দুনিয়ার যাবতীয় জিনিষের কোন প্রয়োজন নাই এমনকি ঘুম, খাওয়া, সংসার। আমরা যার হাতে বায়াত হচ্ছি তিনি কি এই সামাদ নামের গুনের অধিকারী? তাহলে কেন তাকে আল্লাহর মনত দেখবো। সে মানুষটিও তো আমারই মতন এক সামান্য সৃষ্টি! হতে পারেন জ্ঞানের যোগ্যতায় তিনি আমার অনেক উপরে। এই জন্যই তো তাদের মত মানুষের কাছে শিখতে যাওয়া। তাই বলে তাকে আল্লাহ রূপে দেখলে আমার সৃষ্টিকর্তা শেরেকির গুনাহ ক্ষমা করবেন না। এটা আল্লাহই বলেছেন।
আল্লাহ বলেছেন “লাইসা কামিসলিহী শাইয়ুন”।অর্থাৎ আল্লাহর সাথে কোন কিছুর তুলনার যোগ্য নাই।। যে মানুষটির কাছে বায়াত হচ্ছেন তার সাথে উদাহরন দেওয়ার মত শত কিছু আছে চিন্তা করলেই পেয়ে যাবেন। মারেফতের বাদশা মওলা আলী বলেছেন “আরাফতু রাব্বী বে রাব্বী”। অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহকে, আল্লাহর মাধ্যমেই চিনতে পেরেছ’। কাজেই নিন্মোক্ত আয়াত থেকে নিজেদের বিরত রাখুন। অন্যথায় আল্লাহর সাজা বড় কঠিন।
সূরা আরাফের ৭:১৭৯# “আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ”।
মন্তব্য চালু নেই