শুরু হলো বিশ্ব ইজতেমা
‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখরিত তুরাগ তীর
লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনীতে মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী এখন ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।পুরো এলাকা টুপী-পাঞ্জাবি পড়া মানুষে ভরে গেছে। মাঠের আশে-পাশে চলছে মুসল্লিদের অজু, গোসল আর রান্নার আয়োজন। শাখা রাস্তাগুলোতে বাঁশের লাঠি হাতে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং উচ্চ স্বরে বলছেন, ‘যার যার ডাইনে চলি ভাই, জিকিরে-ফিকিরে চলি ভাই।’ এতো বিশাল আয়োজন তবু নেই কোনো বিশৃঙ্খলা। কারও সঙ্গে নেই কোনো বিরক্তিকর আচরণ। একে অপরকে ভাই সম্বোধন করে সাহায্যে এগিয়ে আসছেন তারা।
শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা মো. এহসান আম বয়ানের মাধ্যমে এবারের বিশ্বইজতেমার মূল কাজ শুরু করেন। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. আব্দুল মতিন। বাংলার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় উর্দুর মূল বয়ান তরজমা করা হচ্ছে। তবে বুজুর্গ মুসল্লিদের উপস্থিতে বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই ভারতের মাওলানা আহম্মদ লাট ময়দানে আগতদের উদ্দেশে ঈমান, আমল ও আখলাকের প্রাক বয়ান শুরু করেন।
শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে গত ক’দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক লাখ মুসল্লি টঙ্গীর ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। প্রথম দিন শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ।
ইজতেমায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের স্রোত এখন টঙ্গী মুখো। ট্রেন, বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি, স্কুটার, নৌকা ও পায়ে হেঁটে ইজতেমা মাঠে যোগ দিচ্ছেন।
রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। ৪ দিন বিরতি দিয়ে আবার ১৬ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা। ১৮ জানুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার সম্মেলন।
বিশ্বইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী মঙ্গল কামনা করে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন।
ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন জানান, টঙ্গীর তুরাগ তীরে ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের পদচারণায় ইসলামী মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। বিশ্বের অর্ধশত দেশ থেকে কয়েক হাজার মেহমান ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুম্মার নামাজ। নামাজে ইমামতি করবেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ জোবায়রুল ইসলাম।’
বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা- র্যাব-১এর মহাপরিচালক মো. বেনজির আহমেদ জানান, এবার র্যাব সদসস্যের সংখ্যা গতবারের চেয়েও বেশি থাকছে। কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করে তারা পুরো ইজতেমা এলাকা ও আশে-পাশে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। দু’পর্বের ইজতেমার মূল ৬দিন র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিবে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যরা অবস্থান করবেন। থাকবে র্যাবের কন্ট্রোল রুম ও পেট্রোল ডিউটিও। র্যাব সদস্যরা পাঁচ স্তরে নিরাপত্তা দেবে। ইজতেমা মাঠের প্রবেশ পথে ও আশে-পাশে বেশ কিছু সিসি টিভিতে সার্বিক কার্যক্রমের চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। তুরাগ নদীতে নৌ টহল দল কাজ শুরু করেছে। মাঠের বিভিন্ন পয়েন্টে টাওয়ার থেকে র্যাব সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে।
বিদেশি মুসল্লি: ইজতেমার প্রথম পর্বের যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (রাত ৮টা পর্যন্ত) মিসর, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, কাতার, অষ্ট্রেলিয়া, ব্রনাই, কানাডা, কম্বোডিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইরান, জাপান, মাদাগাস্কার, মালি, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, পানামা, সেনাগাল, দ. আফ্রিকা, তাঞ্জেনিয়া, ত্রিনিদাদ, রাশিয়া, আমেরিকা, জিম্বাবুই, বেলজিয়াম, ক্যামারুন, চীন, কমোরেস, ফিজি, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ইটালি, কেনিয়া, মালয়শিয়া, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, থাইল্যান্ড, তার্কি, যুক্তরাজ্য, জাম্বিয়া, কোরিয়া, আলজিরিয়া, ডিজিবুতি, ইথোপিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, কুয়েত, মরক্কো, কাতার, সোমালিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, ইরিত্রিয়া, জর্দান, মৌরিতানিয়া, ভারত, সুদান, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার মুসল্লি যোগ দিয়েছেন।
ইজতেমায় জরুরি টেলিফোন নম্বর:
জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম (১) ৯৮১৩৪০১, জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম (২) ৯৮১৩৪০২, পুলিশ কন্ট্রোল রুম ৯৮১৩৪০৩, মিডিয়া সেন্টার ৯৮১৩৪০৮, র্যাব কন্ট্রোল রুম (১) ৯৮১৫১১২, র্যাব কন্ট্রোল রুম (২) ৯৮১৫১১৩, র্যাব কন্ট্রোল রুম (৩) ৯৮১৫১১৪, স্বাস্থ্য বিভাগের কন্ট্রোল রুম ৯৮১৩৪০৬, ৯৮১৭৫১৪, ৯৮১৭৫১৫, ৯৮১৭৫১৬, তথ্য কেন্দ্র ইজতেমা কর্তৃপক্ষ ৯৮১৬৩৭০-৭৪, ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম ৯৮১৬৩৬৯, বিদ্যুৎ বিভাগের কন্ট্রোল রুম ৯৮১৬৩৭৯।
উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
মন্তব্য চালু নেই