আল্লাহর কোরআনের আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা এবং মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি

মুসলমানদের মাঝে একটি দল যা পূর্বেও ছিল এখন নতুনভাবে মাথা চাড়া দিয়ে জাগছে আমাদের এই দেশেও। যা বিগত দুই বৎসর আগেও আমাদের মাঝে সেটা দেখা যেত না। সামাজিক গন মাধ্যম ফেসবুকে এটা আজকাল খুব জোর প্রচারনা চলছে। পুরানো গোষ্ঠী নব্য ভাবেই উদয় হয়েছে আমাদের দেশে। আমি সংকিত হয়েই এই লেখাটা লিখছি। আমাদের দেশে অরাজকতার জন্য শান্তির বড় অভাব। তার মধ্যে মুসলামদের মধ্যে একই মধ্যে এতবড় মতভেদ সেটা বড় চিন্তার। অন্য দেশের মত আমাদের দেশেও সুন্নি শিয়া মধ্যে যে মতভেদকারীদের সংখ্যা ক্রমস্যই বাড়ছে। আমাদের দেশ সুন্নি প্রধান দেশ তা নিয়েই আমরা গর্বিত। ইদানিং কিছু শিক্ষিত মানুষ গন মাধম্যে সুন্নি থেকে শিয়া হওয়ার দিকে মানুষকে প্ররোচিত করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের কাছ থেকে ঘৃনীত পরিত্যক্ত হচ্ছে। তারা বলছে গর্ভকরে আমরা কনভার্টেড শিয়া। মুসলমানদের মধ্যে এই শিয়া গোষ্ঠী আল্লাহর কোরআনের সূরা নিসার আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিপথে পরিচালিত করছে।দেখা যাক সূরা নিসার আয়াতটিতে কি বলেছেন আল্লাহ।

৪:৫৯# (“ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানু আত্বী‘উল্লাহা ওয়া আত্বী‘উর রাসুলা ওয়া উলিল আমরি মিনকুম ফাইন তানা যাতুম ফী শাইয়িন ফারুদ্দুহু ইলাল্লা-হি অররা সূলি ইন কুনতুম তুমিনুনা বিল্লাহি অল ইয়াওমিল আখির যালিকা খাইরুও অআহসানু তা’ওয়ালা”)। অর্থাৎ ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম’

উক্ত আয়াতটি কি বলা হয়েছে সেটা আপনারা চিন্তা করে দেখবেন। আমি শুধু আলোচনা করবো বিচার আপনাদের। এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করেই বলেছেন কাকে কাকে মানতে হবে। প্রথমে আল্লাহকে মানতে হবে এবং রাছুল সা.কে মানতে বলেছেন। যেহেতু এবং কথাটা বলেছে সেহেতু আল্লাহর মত করেই রাছুল সা.কেও মানতে হবে। তারপর বলেছেনে ওলিল আমর (হুকুমের) অধিকারীদের মানতে। যেহেতু আবারও এবং করে বলেছেন সেহেতু হুকুমের অধিকারীদেরও আল্লাহ এবং রাছুলের মতন করেই মানতে হবে। আল্লাহ এবং রাছুল এবং ওলিল আমর (হুকুমের অধিকারী) এই তিন আলাদা ব্যক্তিত্ত্বকে একই রকম করে মানতে হবে। যতক্ষন পর্যন্ত ওলিল আমরের কোন কর্ম বা কথা আল্লাহ রাছুল সা. সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। যদি কোন হুকুম তিনি করেন যেটা কোরআন হাদিস বিরোধী সেটা মানা যাবে না। তখন আল্লাহ এবং রাসুল সা. এর দিকে প্রত্যর্পণ করার হুকুম আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন।

এই আয়াতটিতে লক্ষনীয় একটি বিষয় হচ্ছে মতভেদ। প্রচলিত কথায় বলা হয় এক হাতে তালি বাজে না। আমরা খুব সাধারন জ্ঞানেই বুঝতে পারি মতভেদ হওয়া বা করার জন্য অবশ্যই সামনা-সামনি হওয়া জরুরী। অনুপস্থিত কারো সাথে মতভেদ হওয়ার কোন উপায় নাই। যেটা আল্লাহ অযুক্তিক ভাবে বলেন নাই। আল্লাহ যা বলেছেন সেটা যারা সঠিক ভাবে যারা বুঝেন না তারাই উল্টাপাল্টা বুঝ মানুষকে দিতে পারেন এমনকি নিজেরাও বুঝে থাকেন। কিন্তু এই আয়াতটির উলিল আমর বলতে শিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা বলেন উক্ত আয়াতে যে উলিম আমরের কথা বলা হয়েছে তারা হচ্ছেন ১২ ইমাম। এই কথা যারা বলেন বা মানেন তাদের এই দর্শনকে অবুঝদের মতবাদ ছাড়া তো বলার কিছুই নাই। ১২ ইমাম হচ্ছেন নিষ্পাপ ইনসান এমনকি আল্লাহর নবী তিঁনাদের নাম উল্লেখ করেই বলে গেছেন। তাদের উত্তম চরিত্রের নিষ্পাপ নিষ্কলংক। তাঁরা নবী নন তবে নবী তুল্য। প্রতি নামাযের শেষে তাদের সালাম না জানালে নামাযই হয় না।

শিয়া গোষ্ঠী এই মাসুমদের ওলিল আমর বানাতে চায়। এবং কোরআনের উক্ত আয়াতের মত বিরোধকারীতে পরিনত করতেও দিধা করছে না। এটাতে কি মাসুমদের প্রতি সম্মান প্রেম ভালবাসা বলা যেতে পারে ১২ ইমামের প্রতি? ১২ ইমাম অবশ্যই ইমাম ছিলেন থাকবেন। সেটা তো তাদের যুগের ইমাম যিনি যখন ধরায় ছিলেন থাকবেন। আর একটি কথা না বললেই নয় যে যদি অনুপস্থিত নেতাদের কথাই আল্লাহ বলে থাকেন তবে ইমাম মেহেদি কথা বলবেন কেন? সর্বশ্রেষ্ট নবী রাসুল সা. বা আল্লাহর পছন্দনীয় ব্যক্তি হযরত আলী রা. সবচেয়ে উত্তম নেতা আর কে হতে পারে? আমরা যেহেতু সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত আমাদের অন্য কোন ইমামের চিন্তা করে অপেক্ষায় থাকার তো কোন কারণ নাই। যেহেতু আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন মুহাম্মদ সা. সমস্ত উম্মতগনের সাক্ষ্যদাতা। কাজেই অনুমানের উপর ইসলামের পথে পরিচালিত হওয়ার কোন উপায় নাই। আল্লাহ কোরআনে সেটাও উল্লেখ করেছেন দুটি আয়াতে।

৫৩:২৮#“অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানের উপর চলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসূ নয়”।

১০:৩৬# “বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে, অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোন কাজেই আসে না। আল্লাহ ভাল করেই জানেন, তারা যা কিছু করে”

কিছু সংখ্যক মানুষ শিয়া মাজহাবের কিতাবাদীতে রাছুল সা. এর ওফাত এবং আহলে বায়াত সম্পর্কিত কিছু চমকপ্রদ কথা শুনে সেসব কথা হয়তো সুন্নি মাযহাবে শুনতে পায় নাই অদ্যাবদি। তাই তারা মনে করে আমাদের শিয়া হয়ে যেতে হবে। চিন্তার তালা খুলে ভাবছেন সুন্নি থেকে শিয়া হয়ে উত্তম কাজ করছেন তাদের আবারও অনুরোধ করবো আক্কলে তালা বন্ধ না করে যুক্তি এবং নিজ জ্ঞান দিয়ে যাচাই করুন। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন তোমাদের ব্যবহারে মাতা পিতা যেন উহ শব্দটি উচ্চারন করতে না পারে। আর আপনারা অতিরিক্ত জ্ঞানী সেজে স্বীয় মাতা পিতাকে ত্যাগ করে করছেন নিজেরা পরিবার থেকে ঘৃনীত হয়েও। নিজ পরিবারকে ত্যাগ করলে আহলে বায়াতগন খুশি হবেন? আফসোস। নবী সা. এর ওসিয়ত মোতাবেক আহলে বায়াত মানতেই হবে। মানুষ ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মেনেই চলছেন তাদের ইবাদতের মাধ্যমে। তার জন্য সুন্নি শিয়ার দলাদলির প্রয়োজন পরে না। আল্লাহ আমাদের পূর্ব পুরুষদের কর্ম দিয়ে দলগত ভাবে বিচার করবেন না কিয়ামতের দিন। বিচার দিবসে আল্লাহ যার যার অনুসরনকৃত নেতা সহই ডাকবেন আর এটা আল্লাহই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন।

বহুল প্রচারিত ছোট একটা গল্প বলি। কোন এক যুদ্ধে হযরত আলী রা. পায়ে তীরবিদ্ধ হয় কোন ভাবেই তীর শরীর থেকে ছুটাতে পারছিল না। তখন রাছুল সা. বলেছিলেন আলী যখন নামাযে দাড়াবে তখন তীর তোমরা ছুটিয়ে নিও। রাছুল সা. এর কথা মত তীর বের করা হয়েছিল হযরত আলী বুঝতেই পারেন নাই। এই ঘটনাটা বলার কারণ হচ্ছে আলী রা. যখন নামাযে দাড়াতেন তিঁনি ইহ জগতের কোন ধ্যানই থাকতো না। কিন্তু কোরআনের সূরা মায়িদার ৫৫ আয়াতটিতে শিয়া মাযহাবের ভুল ব্যাখ্যার কারণে আলী রা. মানক্ষুন্ন হয়। তা হয়তো তারা চিন্তাও করেন না ভুল নামক মিথ্যা প্রচার করতেই তারা যেন উৎগ্রীব। আয়াতটি অর্থ সহ উল্লেখ করছি।

৫:৫৫# (“ইন্নামা অলিয়্যুকুমুল্লা-হু অরাসূলুহু অল্লাযীনা আমানুল্লাযীনা ইয়ুক্বীমুনাছ ছলাতা অইযু-তূনায যাকাতা অহুম রাকিউন”) অর্থাৎ: ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র’। উক্ত আয়াতটিতে উল্লেখ আছে কাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন করা যাবে ‘আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে’। শিয়া মাযহাবের লোক সকল এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলে শুধু হযরত আলী নামাযের রুকু অবস্থায় যাকাত দিয়েছেন। তাফসির ইবনে কাসির এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন।

একদা হযরত আলী নামাযের রুকু অবস্থায় এক ভিক্ষুক এলে হযরত আলী তাকে হাতের আঙ্গুল থেকে আংটিটি খুলে দিয়ে দেন অর্থাৎ রুকু অবস্থায় যাকাত দেন এবং এও লেখা আছে এই কথাটি মোটেও সঠিক নয়। লক্ষ করলেই দেখা যায় এই হাদিসটিতে প্রতিটি মু’মিনের কথা আছে বুঝা যায়। যদি হযরত আলী রা. একাই মু’মিন হিসাবে ধরা হয় তবে অন্যের ইবাদত কি কোন মুল্যই নেই? প্রতিটি মু’মিনেরই রুকু অবস্থায় যাকাত দেন। কেউ জেনে বুঝে দেয় কেউ না বুঝেই দেয়। আর মওলা আলীর প্রকৃত অনুসারী এই যাকাত আদায় করেন। যাকাত শব্দের প্রকৃত অর্থ যাদের জানা আছে এবং যারা যাকাত আদায় করেন তাদের কাছে গেলে এই যাকাতের রহস্য উন্মোচিত হবে। যে যাকাতের সাথে অর্থ মূল্যমানের কোন সম্পর্ক নাই। শিয়া মাজহাবের লোকসকল এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আলী রা.কে নামাযের একাগ্রতার খেলাফি বানাচ্ছেন। যা কোন ইমানদার বান্দা এবং আহলে বায়াতের প্রকৃত ভক্তগন মেনে নিতে পারেন না। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাটিতেও ১২ ইমামের প্রধান ইমাম মওলা আলী আ. মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। মওলা আলীর প্রকৃত অনুসারীদের এই বিষয়টা চিন্তা করে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।



মন্তব্য চালু নেই