আল্লামা শফী গোয়েন্দা নজরদারিতে

চট্রগ্রাম থেকে অনেকটা গোপনেই ঢাকায় এসেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তবে এ সফরে তিনি হেফাজতের কোনো অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। তারপরও তাকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, আল্লামা শফী মূলত এ সফরে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন মাদরাসায় খতমে বুখারি ও দোয়া অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দিতে এসেছেন।
শুক্রবার তিনি ঢাকায় আসেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি কওমি মাদরাসা বোর্ডের মজলিসে শুরা বৈঠকেও যোগ দেবেন।

আলোচিত এই নেতার আকস্মিক সফরের বিষয়ে খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। প্রায় ১০ দিনের এই সফরে তিনি কখন কোথায় যাবেন তাও বাইরে প্রকাশ করা হচ্ছে না। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ সময় রাজধানীতে হেফাজতের ব্যানারে কোনো কর্মসূচিতেও তিনি অংশ নেবেন না। তার তৎপরতা সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনের মাথায় শনিবার সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আল্লামা শফী। সকালে বমি ও ডায়রিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে মালিবাগ খিদমাহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বলে হেফাজত নেতা আল্লামা রফিকুল ইসলাম মাদানী জানিয়েছেন।

তবে বেকাকের এক কর্মকর্তা জানান, আল্লামা শফীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারডেমে ভর্তি করা হতে পারে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার সফরসূচি বিঘ্নিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে বিমানযোগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন আল্লামা শফী। সেখান থেকে তিনি গাজীপুর বাসন সড়ক এলাকায় খালিকিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানা সফর করেন। সেখানে মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে আসরের নামাজ আদায়ের পর ছাত্র, শিক্ষক ও উপস্থিত আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং মোনাজাত করেন। এ সময় হেফাজত ইসলামের গাজীপুর শাখার সভাপতি মাওলানা মাসুদুল করিম, সেক্রেটারি মাওলানা ফজলুর রহমান, মুফতি লেহাজ উদ্দিন ভুঁইয়া, মুফতি আব্দুল মান্নান, ডা. রমজান আলী, মাওলানা ফয়জুল্লা উপস্থিত ছিলেন। হেফাজত আমীরের সফরসঙ্গী ছিলেন সংগঠনের মদিনা শাখার আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, ঢাকা মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শাখাওয়াত হোসেন ও একজন খাদেম। গাজীপুর থেকে সন্ধ্যায় সূত্রাপুরের ফরিদাবাদ মাদরাসায় গিয়ে রাত্রিযাপন করেন হেফাজত আমির।

আল্লামা শফীর সফর প্রসঙ্গে হেফাজতের গাজীপুর জেলা সেক্রেটারি ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন মাদরাসার খতমে বুখারি ও দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি ঢাকায় এসেছেন। এটি তার নিয়মিত ও পূর্ব নির্ধারিত সফর। তার সফরের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতিও নেয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে হেফাজতের ব্যানারে কোনো কর্মসূচিতে তিনি যোগ দেবেন না।’ একটানা প্রায় ১০ দিন তিনি ঢাকা অবস্থান করবেন বলেও তিনি জানান।

ঢাকা মহানগর হেফাজতের প্রচার শাখার সদস্য অলিউল্লাহ আরমান বলেন, ‘ঢাকায় এক সপ্তাহ থাকার প্রোগ্রাম আছে আল্লামা শফীর। তবে এ সময়ে হেফাজতের কোনো প্রোগ্রামের শিডিউল নেই।’

আল্লামা শফীর সফরের ব্যাপারে প্রচারণা করায় রাজধানীর উত্তরখান ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও সহ কয়েকটি মাদরাসার কর্মসূচি প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কওমি মাদরাসা বোর্ডের (বেফাক) মিডিয়া কর্মকর্তা মাওলানা আশরাফ জানান, ১৩ মে রাজধানীর কাজলায় বেফাকের মজলিসে শুরা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আল্লামা শফী। তিনি এই বোর্ডের চেয়ারম্যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক নেতা বলেন, ‘রাজধানীতে হেফাজতের ব্যানারে কর্মসূচি না থাকলেও গত বছর ৫ মে পরবর্তী আল্লামা শফীর এই সফরকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। সময় সুযোগ মতো তিনি হেফাজত নেতাদের দিক নির্দেশনা দেবেন।’

তবে তার সফরকে ঘিরে প্রশাসনের তৎপরতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার গাজীপুরের কর্মসূচিতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিলো।’

সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, বিভিন্ন মাদরাসার খতমে বুখারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আল্লামা শফী ঢাকায় এসেছেন। তবে তার এই সফরের বিষয়ে তারা নজরদারি করছেন।

হেফাজতের আরেকটি সূত্রমতে, হেফাজতের কোনো কর্মকাণ্ড ও প্রকাশ্যে কোনো সমাবেশ না করার সরকারি শর্তেই তিনি ঢাকায় এসেছেন।



মন্তব্য চালু নেই