আ’লীগে বিলীনের পথে ১৪ দলের শরিকরা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিলীনের পথে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে অন্তত ১১টি দল। নিজস্ব কর্মসূচিহীনতা আর সাংগঠনিক দুর্বলতায় দলগুলো এখন ‘প্যাড সর্বস্ব’ হয়ে পড়েছে।
১৪ দলের দুই দল— তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নিজস্ব কিছু কর্মসূচি আছে। কিন্তু অতীতের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বকীয়তা হারিয়েছে দল দু’টি। যার কারণে, বিগত ৬ বছরে দল দু’টির কর্মী সংগ্রহেও ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারাই।
এ ছাড়া জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে নিজস্ব প্রতীক বাদ রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
জাসদের সমর্থন কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় সিটি নির্বাচনে। জাসদের সমর্থন নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন নাদের চৌধুরী। তিনি মাত্র এক হাজার ৪১২ ভোট পেয়েছেন। উপরন্তু দলে বিভাজন হতে হতে গত ৫ বছরে তিন দফা ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে দলটিতে।
এ বিষয়ে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আসলে দলের সাংগঠনিক মূল্যায়ন একেক জনের কাছে একেক রকম। আমরা যে প্রয়োজনে ১৪ দল গঠন করেছিলাম সেই প্রয়োজন এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ’
সিটি নির্বাচনে জাসদ প্রার্থীর হাজার খানেক ভোটপ্রাপ্তির বিষয়ে জাসদের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এবার নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, নির্বাচন কমিশনও দৃঢ়তার সঙ্গে নির্বাচন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেনি। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমাদের ভাল করার সুযোগ ছিল।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সক্ষমতা মাপার কোনো মাপকাঠি নেই। আমরা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪ দল গঠন করেছিলাম। সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি হয়নি সেটা পরের বিষয়। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো নিজেদের দলীয় কর্মসূচিও রাখছি। কিন্তু ১৪ দলের কিছু শরিক রয়েছে তাদের নিজেদেরই অস্তিত্ব নেই। তারা শুধু আওয়ামী লীগের গুণগান করেন। তাই এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বামপন্থী ১১ দল, জাসদ ও ন্যাপের যৌথ সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল ১৪ দল। ২০০৫ সালের শেষের দিকে জাতীয় পার্টি ও ধর্মভিত্তিক কিছু দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্যের কারণে ১১ দল থেকে গণফোরাম, সিপিবি ও বাসদ বেরিয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও পুনর্গঠিত হয় ১১ দল।
বর্তমানে ১৪ দলের শরিক দলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল একাংশ (দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন), এ্যাডভোকেট এস কে শিকদারের নেতৃত্বাধীন গণ-আজাদী লীগ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির একাংশ (জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন), ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী পার্টি, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের একাংশ (সৈয়দ রেজাউর রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন), ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম ও অসীত বরুণ রায়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট কেন্দ্র, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ছৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। সংখ্যার হিসেবেও এ জোটে ১৪টি দল নেই। রয়েছে ১২টি রাজনৈতিক দল।
শরিক দলগুলোর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি অফিসে ১৪ দলের বৈঠকে যাওয়া ছাড়া এই দলগুলোর আর কোনো কার্যক্রম নেই। নেই নিজস্ব কর্মসূচি কিংবা কর্মকাণ্ড। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেস ক্লাবের সামনেও সর্বশেষ শরিক দলগুলোর মধ্যে অন্তত ১১টি দল কবে মানববন্ধন বা কর্মসূচি পালন করেছেন তাও জানেন না দলগুলোর নেতারা।
এমনকি ১৪ দলের শরিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর), ও ন্যাপের নেই কোনো অফিসভিত্তিক কার্যক্রম। সাম্যবাদী দলের পল্টন অফিসে সোমবার খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দলের কোনো স্তরের নেতারই খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাকি দলগুলোর কোনো অফিসেরই হদিস পাওয়া যায়নি।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের তো নিয়মিতই কর্মসূচি থাকছে। আপনারা না দেখলে আমাদের কী করার আছে! সেদিনও তো সিরডাপ মিলনায়তনে আলোচনা সভা করলাম। ’
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমাদের দলের কার্যক্রম আছে। আমরা নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছি। জেলা সফর করছেন আমাদের দলের নেতারা। এর সুফল আগামী নির্বাচনে আপনারা দেখতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়। আমরা এখনও একসঙ্গে লড়ছি। একটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক অবস্থা, জনসমর্থন নির্ভর করে তার কর্মসূচির ওপর। ১৪ দলের মধ্যে কোন দলের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন তা তারা নিজেরা বুঝবে। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই