আরব আমিরাতের কল্যাণে মুসলমানরাই সবার আগে মঙ্গলে বসতি করবে!

মঙ্গল নিয়ে চিন্তা ভাবনা আর মঙ্গলে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন মানুষের অনেক পুরনো। অনেক আগে বিজ্ঞানী মহলের কেউ কেউ দাবি করতেন মঙ্গলে আছে প্রবহমান এক মহানদী। মঙ্গলে বুদ্ধিমান প্রাণী আছে এই ধারণায় অনেক সাইন্স ফিকশন লেখা হয়েছে। হয়েছে সিনেমা। তবে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে সেসব এখন অলীক গল্প।

তবে মঙ্গল নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা আর গবেষণা থেমে নেই। পাথ ফাইন্ডার মঙ্গেলে নেমেছে অনেক বছর হয়ে গেছে। মঙ্গল নিয়ে জানা গেছে নিত্য নতুন তথ্য। তারই আলোকে গড়ে উঠছে বাস্তবভিত্তিক নয়া ধ্যান-ধারণা।

সর্বশেষ হলিউডি মুভি মার্শিয়ান (মঙ্গলবাসী)-এ দেখানো হয়েছে, আলু ফলছে মঙ্গলের মাটিতে। ছবির গল্পে দেখা যায় মঙ্গল অভিযানে গিয়ে গ্রহটির প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে নায়ক মার্ক ওয়াটনিকে সেখানে ফেলে চলে আসে সঙ্গী নভোচারীরা। তিনি নিজের বেঁচে থাকার তাগিদে সেখানে আলুর চাষ করেন বিশেষ পদ্ধতিতে। অতি সম্প্রতি বিশেষ ব্যবস্থায় পৃথিবীতেই মঙ্গলের আবহ তৈরি করে সেখানে আলু ফলিয়ে দেখিয়েছেও মানুষ- অর্থাৎ বিষয়টি একেবারে অসম্ভব নয়।

এখন নতুন করে অনেকেই বলছেন, পৃথিবীর যমজ বোন হিসেবে খ্যাত লালগ্রহ মঙ্গলেই ভবিষ্যতে হয়তো মানুষ উপনিবেশ গড়বে। এদিকে, ইউরোপ-আমেরিকা-রাশিয়া-চীন-ভারতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের ধনীদেশ আরব আমিরাতও চিন্তা করছে মঙ্গল অভিযান আয়োজনের। এর পেছনের কারণটা শুধুই আর্থিক সঙ্গতি না, অভিজ্ঞতাটাকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে তারা। কারণ, এরই মধ্যে দুনিয়ার অন্যতম উষ্ণ আর ঊষর এক অঞ্চল আমিরাতে একের পর এক বাসযোগ্য অত্যাধুনিক নগরের পত্তন করেছে দেশটির শাসকরা।

তাদের যুক্তি হচ্ছে, মঙ্গলের আবহাওয়া অনেকটাই তাদের দেশের সঙ্গে তুলনীয়। তাই, তারা উচ্চাভিলাষী এক মিশন হাতে নিয়েছে- ২১১৭ সালে অর্থাৎ আগামী ১০০ বছর সময়ের মধ্যে

মঙ্গলে একটি উপনিবেশ গড়ে তুলবে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মার্স ২১১৭’। পরিকল্পনা মোতাবেক, ওই সময়ের মধ্যে ৬ লাখ মানুষের এক বসতি গড়ে তোলা হবে মঙ্গলে যার সঙ্গে থাকবে তাদের জন্য খাদ্য, অক্সিজেন ও পরিবহন সুবিধা। তবে সেখানে মানব বসতি শুরু হওয়ার আগে রোবট বাহিনী যাবে যারা গড়ে তুলবে মানুষের বাসউপযোগী পরিবেশ আর সুবিধাদি। মূলত আরব বিজ্ঞানীরাই এই উদ্যোগে কুশীলব হিসেবে কাজ করবেন- তবে তারা সহযোগিতা নিচ্ছে ফ্রান্স ও ব্রিটিশ মহাকাশ সংস্থার।

দেশটি এখন মঙ্গল অভিযানে মুসলমানদের প্রথম উদ্যোগ হিসেবে ‘মার্স ২১১৭’ নিয়ে বিরাট স্বপ্ন দেখছে। তারা মনে করছে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে প্রথমবারের মতো আরব ও মুসলিম এই উদ্যোগ দুনিয়াকে আবার মনে করিয়ে দেবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে তাদের একসময়কার শ্রেষ্ঠত্ব। এই প্রকল্পের দ্বারা আরব আমিরাত আশা করছে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে মানবতার সেবা করতে- এমন কথা বলেছেন আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ ও আবু ধাবি রাজ্যের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। মনে রাখা দরকার যে মাত্র চার দশক আগেও আরব আমিরাত ছিল সমুদ্রোপকূলবর্তী একটি অনুন্নত অবহেলিত জেলেপল্লী, যার আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন। তেলসম্পদের আশীর্বাদে সেই অঞ্চলকে তারা দুনিয়ার অন্যতম শীর্ষ আর উন্নত জনপদে পরিণত করেছে। এই বাস্তবতা তাদের মঙ্গল অভিযানে বিশেষভাবে উৎসাহী করে তুলেছে।

এদিকে, ‘মার্স ২১১৭’ প্রকল্পের অধীনে ২০২০ সালে দেশটি মঙ্গল অভিযানের প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে মনুষ্যবিহীন নভোযান ‘হোপ’। এটা জাপান থেকে উৎক্ষেপন করা হবে। তো মঙ্গল নিয়ে যখন এত কথা, আসুন এ সম্পর্কিত কিছু জানা-অজানা তথ্য দেখে নেওয়া যাক-

এখন পর্যন্ত মঙ্গল অভিযান সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার মুখই বেশি দেখেছে। এ যাবত চালানো মোট ৫৫টি বিভিন্ন ধরনের অভিযানের মধ্যে সফল হয়েছে মাত্র ২২টি। সাম্প্রতিক সময়ে সংগৃহীত তথ্য সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, সুদূর অতীতে মঙ্গলেও ছিল প্রবহমান জলধারা। মঙ্গলে পাওয়া গেছে প্রাণীজ (প্রাণীর সূত্রে সৃষ্ট) মিথেন গ্যাস- তবে এর উৎস এখনো অজ্ঞাত রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে।

বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর পরে মঙ্গলই একেমাত্র গ্রহ যেখানে পৃথিবীর মতো প্রাণ টিকে থাকতে পারে। এর তাপমাত্রা পৃথিবীর চেয়ে চরমভাবাপন্ন হলেও তুলনামূলক ভারসাম্যপূর্ণ। গরমকালে সর্বোচ্চ ২০ ডিগ্রি আর শীতকালে সর্বনিম্ন মাইনাস ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে সূর্য থেকে দূরত্বের হিসেবে হিসেবে পৃথিবীর পরের অবস্থানে থাকা মঙ্গলের তাপমাত্রা। শিল্পীর ‍দৃষ্টিতে মঙ্গলের আকাশে আরব আমিরাতের পরিকল্পিত নভোযান। সে তুলনায় আমাদের উপগ্রহ চাঁদে প্রাণের টিকে থাকা অসম্ভব। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের তাপমাত্রা রাতে থাকে থাকে সর্বনিম্ন -২৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবার দিনে তা হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩২ ডিগ্রি।

এমনসব বাস্তবতার নিরিখে উচ্চাভিলাসী মানুষ চিন্তা করছে ভবিষ্যতে মঙ্গলে গড়ে তুলবে এক নয়া সভ্যতা। এ ক্ষেত্রে নয়া উদ্যোক্তা হিসেবে এরই মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে আরব আমিরাত। তারা বলছে, এতদসংক্রান্ত অর্জিত জ্ঞান বিশ্বের দুই শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিয়মিত আদান-প্রদান করা হবে।

তবে আরবের মুসলমানদের মঙ্গল প্রকল্প যদি সফল হয়ও, তবে তা দেখে যাওয়ার ভাগ্য এখনকার পাঠকদের কারও ভাগ্য হবে কি না বলা মুশকিল। অবশ্য আপনার নাতি-নাতনিদের বা তাদের সন্তান-সন্ততিদের কেউ হয়তো মঙ্গলে গিয়ে বসবাসের ‘সৌভাগ্য’ অর্জন করতে পারেন- এমন আশা করতেই পারেন।-এমিরেটস২৪৭, নিউইয়র্কপোস্ট,এমিরেটসমার্সমিশন.এই



মন্তব্য চালু নেই