রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি________________

‘আমি ভিক্ষা চাইনা, আমার প্রাপ্য ক্ষতি পূরণ চাই’

টিপু সুলতান (রবিন), সাভার থেকে : আজ ২৪ এপ্রিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ভবন ধ্বসের ঘটনা ঘটে এই দিন। সাভার বাজার স্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা ৫টি পোশাক কারখানা ও কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে এইদিনে ধ্বসে পড়ে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী ধ্বসস্তুপে নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান প্রায় ১১’শ ৩৪ জন শ্রমিক আর আহত হয় আরও দুই হাজার চার’শ আটত্রিশ জন শ্রমিক। ভবন ধ্বসের ৩ তিন বছর পার হলেও এখনও অনেক আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা পায়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। এছাড়া আহত অনেক শ্রমিক আর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পেরে আজও ফিরতে পারেনি স্বাভাবিক জিবনে।

হালীমা বেগম তিনিও আটতলায় নিউওয়েব ষ্টাইল লিঃ অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন ভবন ধ্বসের তিন ঘন্টা পরে উদ্ধার হন তিনি।তার নাকের হাড়, বামহাত, ডান পা মাথাসহ শরিরের বিভিন্ন অংশে আঘাতপান।

নিলুফার পিঃ২_1

ভবন ধ্বসের পরে কিছুটাকা অনুদানপেলেও অন্য আহতদের চাইতে খুবইকম বলে তার অভিযোগ।অনুদানের টাকার চাইতে কয়েকগুন বেশী টাকা তার চিকিৎসার জন্য ব্যয়করা হয়েছে এখন পর্যন্ত তার চিকিৎসা করতে হচ্ছে বলে জানায়।অন্য আহতদের মতো অনুদান নাপেলেও তার কোন আক্ষেপ নেই মনে।আরসে কারো কাছে থেকে কিছুনিতেও নারাজ সিআরপির দেয়া সত্তর হাজার টাকা অনুদানে ভাড়া নেয়া নিজের ছোট্ট মুদি দোকানের আয়ে চলছে তার সুস্থ্য হয়ে ওঠা আর বেঁচে থাকার সংগ্রাম। তার একটাই চাওয়া কবে সরকার তার প্রাপ্য ক্ষতিপুরনটা দিবে ।ক্ষতিপূরন পেলে সে চিকিৎসা করে সুস্থহয়ে কাজ করতে চায়।তিনি বলেন আমি ভিক্ষাচাই না আমি রানাপ্লাজায় কাজ করার সময় আমার শরিরের যে ক্ষতি হয়েছে আমি তার ক্ষতি পূরণ চাই।

হালীমা বেগম পিঃ৩_2

নিলুফার বেগম কাজ করতেন রানাপ্লাজার পাঁচ তলার ফ্যান্টম এ্যাপারেলসে কাজ করতেন পোশাক কর্মি নিলুফার বেগম।বিমের নিচ থেকে প্রায় সাড়ে নয় ঘন্টা পর উদ্ধার হলেও হারিয়েছেন পা। চিকিৎসকরা পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিলেও এখন টাকার অভাবে সে চিকিৎসাও করতে পারছেননা তিনি। এর মধ্যে মাথা, কিডনীসহ নানা সমস্যায় ভূগছেন বলে জানান। নিলুফা বেগম বলেন আগে কত লোক খেজখবর নিতো এখন আর কেও আমাদের খোজ খবর নেয় না কতলোক আমার ছবি, ভোটার আডি, না , ঠিকানা নিলো খালি নিয়াই গেল আর কে ফিরা আইয়া খোজ ও নিলনা।তারও ও দাবী ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আর কারও সাহায্য বা করূনা সে চায়না । ক্ষতিপূরন পেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে উঠবেন এমন আশা এখনও তার।

রানাপ্লাজার চার তলায় ফ্যান্টম এ্যাপারেলসএ অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন হেলেনা পারভিন। ভবন ধসে পড়ার দেড় ঘন্টা পর উদ্ধার হন তিনি।শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হলেও বাহির দেখে বোঝার উপায় নেই সে আঘাত তিন বছর পরেও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।সহায়তা হিসেবে মানুষের কাছ থেকে কিছু টাকা পেলেও সে টাকায় নিজের চিকিৎসাও শেষ করতে পারিননি তিনি। সহায়তার আশ্বাস নয় জীবনের বাকি সময়টুকু শান্তিতে বেঁচে থাকতে ন্যায্য ক্ষতিপূরনের দাবী জানান তিনি।

হৃদয় পিঃ

গীতারানী কাজ করতেন রানাপ্লাজার চতুর্থ তলায় উদ্ধার হন প্রায় বার ঘন্টা পর। এনাম মেডিকেল কলেজ, গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ অতপর রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও এখন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারেননি তিনি।সেদিনের বিভিষিকা ভুলতে কাজ করছেন  রানাপ্লাজার শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে ওঠা পোশাক কারখানা অপরাজেয়তে অপেক্ষা করছেন হাতের উন্নত চিকিৎসার জন্য।

মিনু আক্তার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন রানাপ্লাজার চার তলার ফ্যান্টম এ্যাপারেলসে। ভবন ধসের তিনদিন পর উদ্ধার হন তিনি।সেদিনের ভবন ধসে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার পাশাপাশি মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পান তিনি।তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারেননি তিনি।সহায়তা পেলেও সুষ্টু ক্ষতিপূরনের দাবী তারও।

রানা প্লাজার আটতালায় নিউওয়েব ষ্টাইল লিঃ এ কোয়ালিটি কন্টোলার (qc) হিসেবে কাজ করতেন মাহমুদুল হাসান হৃদয়। তিনি ভবন ধ্বসের ১৯ ঘন্টাপর উদ্ধার হন।

নিলুফার পিঃ১

বুকেরপাজর,মেরুদন্ড, ডানপা সহ সর্বাঙ্গে আঘাতপায় সে। তিন বছর পার হবারপর সে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে । তিনি জানান কিছুদিন আগেও রানাপ্লাজার বিচারের কথা শুনাযেত এখন তিনি আর কোন খরব শুনতে পাননা আদও কি রানাপ্লাজার ধ্বসের কোন বিচার হবেকিনা  তানিয়ে তার মনে প্রশ্ন।

অন্যদিকে রানাপ্লাজা ধ্বসের তিন বছর পারহয়ে গেলেও এখনও ভবন মালিক, র্গামেন্টর্স মালিক সহ ভবন ধ্বসের সাথে জড়িতদের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ। যেখানে সিলেটে এক শিশু রাজন হত্যামামলা দ্রুতবিচার ট্রাইবুনালে হলো সেখানে ১১’শ ৩৪ জন নিহতও ২৪’শ ৩৮জন আহত শ্রমিকের জন্য

rana plaza 3

দায়ী আসামীদের কেন বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের ব্যবস্থা করছেনা সরকার এমনটাই প্রশ্ন গার্মেন্টর্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু।তিনি আওয়ার নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাতে জানান হাই কোর্টে রানাপ্লাজায় আহত শ্রমিকরা কত টাকা পাবে আর নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা কত টাকা করে ক্ষতি পূরণ পাবে তানিয়ে একটি একটি পূর্নাঙ্গ আদেশ হওয়ার কথাও ছিল কিন্তু কোন অদৃশ্য কারনে তা থেমে আছে।হাই কোর্টের এই আদেশটি আর বিলম্ব নাকরে কার উচিৎ তাহলেই সকল আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা একটা নিদিষ্ট পরিমানে ক্ষতি পূরণ পেয়ে যারা আহত তারা সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিতে পারবে আর নিহতের স্বজনেরা পরিবারে নিহত ব্যক্তির জায়গাটা কিছুটা হলেও পূরন করা সম্ভব বলে মনেকরেন তিনি।

rana plaza-1

ভবন ধ্বসের ৩ বছরে এসে হতভাগা শ্রমিকদের এখন একটাই প্রাণের দাবি আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ সরকার বা বিজেএমই’র পক্ষ থেকে যেন তাদের জন্য পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে ভবন ধ্বসের ঘটনায় প্রধান আসামী ভবন মালিকসহ সকল দোষীদের অবিলম্বে বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের দাবি জানান।



মন্তব্য চালু নেই