‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত তুরাগ তীর

ইহকালে শান্তি ও পরকালে মাগফেরাত কামনা এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, সংহতি কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। রোববার সকাল ১১ টায় ইজতেমা ময়দানে লাখ লাখ মুসুল্লির অংশগ্রহণে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে বহির্বিশ্বের প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি মুসল্লিসহ লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অশগ্রহণ করেন।

গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হওয়া প্রথম পর্বের তিনদিনব্যাপী ইজতেমার আজ ছিল শেষ দিন।

এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার পরিবারসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে বসে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকায় গণভবনে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি তার বাসভবনে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে বসে মোনাজাতে শরিক হন।

এছাড়া মন্ত্রী ও এমপিসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনৈতিক মিশনের সদস্য এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ লাখ লাখ মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধির আশায় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজধানীর উপকণ্ঠের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীর। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত ও হেদায়েত প্রার্থনা করেন। এসময় মহান আল্লাহ পাকের অশেষ মহিমায় আবেগাপ্লুত হন লাখো মুসল্লি। অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে পড়েন তারা।

প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী এ মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামাতের দিল্লিস্থ মারকাজের শুরা সদস্য, ইসলামি চিন্তাবিদ বিশ্ব মাওলানা সাদ কান্ধলভী। আখেরি মোনাজাতকালে গোটা ইজতেমা ময়দানে যেন এক পুণ্যময় ভূমিতে পরিণত হয়। সকাল ১১টা ১৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয় এবং শেষ হয় ১১টা ৪৮ মিনিটে।

মোনাজাতের আগে মাওলানা সাদ ঈমান ও আমলের ওপর বিভিন্ন হেদায়েতী বয়ানে বলেন, ‘দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের প্রতি আমাদের বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে। দুনিয়ার জিন্দেগির চেয়ে আখেরাতের জিন্দেগি হলো স্থায়ী। তাই আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে আখেরাতের জিন্দেগির দিকে ধাবিত হতে হবে। আল্লাহর কাছে কান্না-কাটি করে ক্ষমা চেয়ে পাপমুক্ত হতে হবে। মোনাজাতের সময় গোটা টঙ্গী এলাকা আল্লাহ-আল্লাহ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।’

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফায় তিনদিনব্যাপী বৃহত্তম এ জমায়েতের শেষ দিনে রোববার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজতেমা ময়দানে আসেন।

ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, কার এবং নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এছাড়া আজ ভোর থেকেই রাজধানীর খিলক্ষেতস্থ বিশ্বরোড থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলে যানবাহনের অভাবে সকাল থেকেই দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে কাফেলার পর কাফেলা। তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জমিতে স্বেচ্ছাশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করা হয় মুসুল্লিদের জন্য।

সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ইজতেমার অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে বিপুল সংখ্যক র্যাব, পুলিশ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

দেশি-বিদেশি লাখো মুসল্লির নিরাপত্তায় ইজতেমা মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি, বোম ডিস্পোজাল এবং ডগ স্কোয়াড ইউনিট মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি ইজতেমা মাঠে এবং মাঠের কয়েকটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ওয়াচ টাওয়ার বসিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পুরো ইজতেমা ময়দানের প্রতিটি মোড়ে বসানো হয় চারমুখী সিসি ক্যামেরা।

যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ এবং র্যাবের একাধিক টিমকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা ছিল। তুরাগ নদীতে র্যাবের দুটি স্পিড বোট ও ইজতেমা মাঠের আকাশে হেলিকপ্টারে টহল দেয় র্যাব।

উল্লেখ্য, গত বছর হতে শুরু হয় দেশের ৬৪ জেলাকে চার ভাগ করে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন। মোট ৩২টি করে জেলা নিয়ে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা।

প্রথম পর্বে অংশ নেয় ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলার মুসুল্লিরা। স্থান সঙ্কুলান ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এ পরিবর্তন আনা হয়। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বিরা ইজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেন।

চারদিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবে বাকি ১৫ জেলার তাবলিগ অনুসারীরা। তবে বিদেশি মুসল্লিরা প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে। ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।



মন্তব্য চালু নেই