আমাজনের আদিবাসী ‘বউ’ বাঙালি তরুণী!

বিশ্ব থেকে এখনও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন আমাজনের আদিবাসী গোষ্ঠিগুলো সম্পর্কে একটা ভয় জাগানিয়া ধারণা রয়েছে অনেকের মনেই, আর সেখানেই ‘স্বামী’ বেছে নিলেন সারাহ বেগম।

ইকুয়েডরের হুয়ারোনি আদিবাসীদের নিয়ে ২৬ বছর বয়সী ব্রিটিশ এই চলচ্চিত্র নির্মাতার একটি তথ্যচিত্র গত বছরই কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।

আর ২১ বছর বয়সে এই তথ্যচিত্র তৈরিতে সারাহ’র আমাজনে গিয়ে হুয়ারোনি আদিবাসীদের আস্থা অর্জনে ওই গোষ্ঠীর একজনকে বিয়ের তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল।

আর বাংলা পাঠকদের কাছে এর সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হতে পারে এটা যে এই তরুণীর শিকড় বাংলাদেশে এবং এদেশে ঘুরেও গেছেন তিনি।

আমাজনের ইকুয়েডরের বনভূমিতে বাইরের জগতের দৃষ্টিতে ‘ভয়ঙ্কর’ হুয়ারোনি গোত্রের মাত্র ৩ হাজার সদস্য এখন টিকে আছেন, যাদের জীবন সেলুলয়েডে ধারণ করে বিশ্ববাসীর সামনে আনাই সারাহকে সেখানে যাওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিল।

১৯০৫ সালে একবার যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন যাজক ওই গোত্রের কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের‘স্বামী’র সঙ্গে সারাহ কেউ আর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেননি।

১৪ বছর বয়সে একবার দাদা-দাদীর সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসে ছিলেন সারাহ। দুই সপ্তাহের সেই সফর শেষমেষ ১৬ মাসে গিয়ে ঠেকেছিল। প্রকৃতিপ্রেমী এই তরুণী মজেছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃতিতে।

প্রকৃতির প্রতি সেই টানেই ছুটে গিয়েছিলেন আমাজানের গহীন জঙ্গলেও, পাঁচ বছর আগে লন্ডন থেকে দুই সপ্তাহের জন্য উড়ে গিয়েছিলেন তিনি।

ডেইলি মিরর লিখেছে, তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য হুয়ারোনিদের বিশ্বাস অর্জনের প্রয়োজনেই সারাহ সেখানে বিয়ে করেছিলেন ওই গোত্রের সেরা শিকারী হিসাবে পরিচিত গিংটোকে, যার বয়স সারাহর দ্বিগুণের বেশি।

সারাহ জানান, এর আগে তাকে বিয়ের যোগ্যতাও অর্জন করতে হয়েছে। শিখতে হয়েছে কিভাবে বড় বড় ঘাস বুনতে হয় আর ব্লোপাইপ থেকে বিষাক্ত তীর ছুড়ে শিকার করতে হয়।

হুয়ারোনি গোত্রের ‘বউ’ হওয়ার ঘটনাটিও যে মজার ছিল, তাও হুয়ারোনি নারীর সঙ্গে সারাহউঠে আসে এই তথ্যচিত্র নির্মাতার বর্ণনায়।

“আমাকে বয়স্করা বেশ পছন্দ করেছিল। কিন্তু কী ঘটতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমাকে একটা কুঁড়েঘরে ডেকে নেওয়া হয়, সেখানে যারা ছিল, তারা সবাই নগ্ন ছিল।”

“আমাকে বলা হল, তাদের মতো করে কাপড় পরতে হবে, যা এক টুকরো গাছের ছাল দিয়ে তৈরি এবং শুধু কোমরে পেঁচিয়ে রাখা হয়।”

“এরপর একজন নারী আমার গায়ের কাপড় খুলে ফেলে এবং গোত্রের বয়ষ্করা আনন্দে তাদের ভাষায় চেচাঁতে থাকেন।”

এরপর সারাহ দেখতে পান, হুয়ারোনিরা তাদের নিজেরা পানীয়, যার নাম চিচা, এবং ম্যাকাও পাখির পালক দিয়ে মুকুট তৈরি করা হচ্ছে।

“আমাকে জানানো হল, তারা আমাকে তাদের রানি বানাতে যাচ্ছে। তারা আমাকে একটি নামও দেয়- ‘ইমিকা’, যার অর্থ হচ্ছে শেষ নাম। তখন বুঝতে পারলাম, এটা একটা বিয়ের আয়োজন।”

তবে শেষ পর্যন্ত সারাহ জানতে পারেন, এটা চিরাচরিত বিয়ে নয়, শুধুই একটা ‘সম্মানজনক’ সম্পর্ক।

ওই গোত্রের মানুষগুলো এখন সারাহর খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। আমাজন ছেড়ে এলেও তাদের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন সারাহ।

“তাদের দেখতে সেখানে আবার যেতে চাইব আমি,” বলেন সারাহ।

হুয়ারোনি গোত্রের জীবন নিয়ে তৈরি আধা ঘণ্টার তথ্যচিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের পাশাপাশি শেফিল্ড চলচ্চিত্র উৎসব এবং অ্যাডভেঞ্চার ট্রাভেল ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছে। এটা সারাহকে এনে দিয়েছে রয়াল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির ফেলোশিপও।

২০১০ সালে সারের কিংসটন ইউনিভার্সিটি থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন সারাহ।

ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত প্রকৃতির সারাহ বাংলাদেশেও তার অ্যাডভেঞ্চার অভিযান চালিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে, শ্রীমঙ্গলের চা বাগান থেকে শুরু করে নদী, পাহাড়, দুর্গম নানা এলাকা চষে বেড়িয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই