আমাকে বাজারে যেতে দেয় না: তামিম

ক্রিকেটার হিসেবে দুনিয়া জুড়ে মানুষ তাকে ‘বড়’ ক্রিকেটার মনে করে। কিন্তু খান পরিবারের ছোট ছেলে তামিম ইকবাল চট্টগ্রামে এখনও বাচ্চাদের দলের একজন। হাটে গেলে বড় গরু কেনার বায়না করেন বলে, তাকে হাটে নেওয়া হয় না! আনন্দ মেশানো এই অনুযোগে শুরু হয় সাক্ষাত্কার। ক্রিকেট, ইনজুরি, ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের আসন্ন সফর নিয়েও কথা বললেন।

ঈদ কোথায় করছেন?

তামিম ইকবাল : অবশ্যই চট্টগ্রাম। আমি অলরেডি চট্টগ্রাম চলে এসেছি।

গরু কিনেছেন?

তামিম ইকবাল : এখনও কেনা হয়নি। তবে আমার মনে হয় হাটে গিয়ে কেনা হবে না।

কেনো? আপনি নিজে গরু কিনতে যান না?

তামিম ইকবাল : আমি তো যেতে চাই। খুব চাই। এই ঈদের তো সবচেয়ে বড় আনন্দই গরু কিনে আনা। কিন্তু আমাকে তো হাটে নিতে চায় না। বাসার সবাই বলে, তোমার যাওয়ার দরকার নেই।

সে কী! আপনি এমন বঞ্চনার শিকার?

তামিম ইকবাল : আর বলবেন না ভাই। আমি হাটে গেলে নাকি বড় গরু ছাড়া দেখতে পাই না। বলেন, ছোট গরু কিনে কী আনন্দ আছে? আমি চাই হাটের সবচেয়ে বড় গরুটা কিনতে। আর বাসার লোকজন বলে, একটা বড় গরু না কিনে কয়েকটা মাঝারি গরু কিনতে।

আপনি তাহলে এই ব্যাপারে একা?

তামিম ইকবাল : নাহ। বাচ্চারা সব আমার সাথে আছে। চাচাদের ছেলেরা। ওরাও চায় বড় গরু কেনা হোক। ওরা তো চাচাদের বলতে সাহস পায় না। আমাকে এসে বলে। এখন সমস্যা হলো, আমাকে তো নিতেই চায় না। আমি ছোটদের দলে পড়ে গেছি। আবার আমাকে নিলে নাকি গরুর দামও বেশি পড়ে।

সেটা কেমন? আপনাকে নিলে দাম বাড়বে কেনো!

তামিম ইকবাল : আমিও তো এটা জানি না। আমার তো ধারণা, আমি

গেলে সৌজন্য করে দাম একটু কমিয়ে নেবে। কিন্তু বাসার সবাই বলে, আমাকে দেখে ব্যাপারিরা দাম বাড়িয়ে ফেলে। আমার জন্য নাকি খরচ বেশি হয়ে যায়। কী আর করা।

গরুর হাটে গেলে আপনাকে ঘিরে ভিড় জমে যায় না?

তামিম ইকবাল : তা তো একটু হয়। শেষ যেবার গেছি, বছর দুই আগে মনে হয়, বেশ ভিড় হয়েছিলো।

ইনজুরির কী অবস্থা?

তামিম ইকবাল : অবস্থা তো বলা কঠিন। এখনও তো ব্যান্ডেজ করা আছে। ছুটির পর খুলবে। তখন বুঝতে পারবো। তবে ভালো দিক হচ্ছে, ব্যথা নেই। আমার ধারণা আমি ২৫ সেপ্টেম্বর খেলে ফেলবো।

আফগানিস্তানের বিপক্ষেই!

তামিম ইকবাল : হ্যাঁ। অনুমতি পেলে খেলবো। আমি চাই খেলতে। এই সিরিজটা খেলা দরকার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার আগে ম্যাচে ফেরা দরকার।

এই কারণে তো দলের জন্যও আফগানিস্তান সিরিজটা গুরুত্বপূর্ণ?

তামিম ইকবাল : হ্যাঁ, আমরা তো অনেকদিন ইন্টারন্যাশনাল খেলি না। ফলে একটু রাস্টি হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। ফলে ইংল্যান্ড সিরিজের আগে এই সিরিজটা খুব দরকার ছিলো। এখানে আমরা নিজেদের ক্রিকেটটা খেলতে পারলে, মানে গত বছর যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছি, সেটা ফিরাতে পারলে আমরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ করবো। আমাদের ছন্দটা ফিরে পাওয়া দরকার। এ ছাড়া আমি আলাদা করে আফগানিস্তানকেও বেশ ভালো রেট করছি।

আফগানিস্তান কী আসলে ভালো রেট করার মতো দল?

তামিম ইকবাল : অবশ্যই। ওরা খুব দ্রুত উন্নতি করছে। এক সময় আমরা ওইরকম অবস্থায় ছিলাম। বড় দলগুলোকে সারপ্রাইজ করতে পারে। আর উপমহাদেশের এই কন্ডিশনটা ওরা চেনে। ফলে কখনো কখনো ওরা বাইরের বড় দলের চেয়ে বেশি থ্রেট।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার একটা বাড়তি চাপের কথা বলছিলেন বিশ্বকাপের আগে।

তামিম ইকবাল : হ্যাঁ, সেটা তো আছেই। সবাই ভাবে, ওদের বিপক্ষে আমরা জিতবোই। পুরো বাংলাদেশ এটা ভাবে। ধরেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলে কোনো বাড়তি কৃতিত্ব কেউ মনে করবে না। ফলে ফোকাস নড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। আবার হারলে খুব নিন্দা হবে। সেই নিন্দার ভয়ে নার্ভাস হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তবে কথা হচ্ছে, বড় দল সবাইকে এই চাপ নিয়ে ছোট দলের সাথে খেলতে হয়। আমার ধারণা আমরা এটা এখন ভালো হ্যান্ডেল করতে শিখে গেছি।

এরপর তো ইংল্যান্ড। এই দলটার সাথে খেলার কথা এলেই সেই লর্ডস-ম্যানচেস্টারের সেঞ্চুরির কথা চলে আসে।

তামিম ইকবাল : আসে। ইতিমধ্যে আমাকে অনেকবার এই কথার উত্তর দিতে হয়েছে। আমি এই মনে করাটা খুব পছন্দ করছি তা নয়। হ্যাঁ, ওটা তো ভালো স্মৃতি, অনুপ্রেরণা দেবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে হিস্ট্রি আমার হয়ে খেলবে না। আমি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো করেছি বলে এখনও ভালো করবো, এমন গ্যারান্টি নেই। আবার কেউ একজন সেই ২০১০ সালে খারাপ করেছিলো বলে এখনও খারাপ করবে, তা নয়। আসলে সবাই নতুন করে খেলবে।

গত কয়েক বছর ধরে তো দলের সেরা ব্যাটসম্যানও আপনি, আছেনও ভালো ফর্মে। ফলে আপনার তো ভালো করার চাপ থাকবেই।

তামিম ইকবাল : এই চাপটাকে আমি দেখি সুযোগ হিসেবে। ভালো ফর্মে আছি, সময়টা কাজে লাগাতে হবে। তবে আমাকে কিন্তু ভালো করতে গেলে দ্বিগুণ ভালো করতে হবে। আগের চেয়ে ওরা আমাকে নিয়ে অনেক বেশি প্রস্তুতি নিয়ে আসবে। আমি এই চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই।-ইত্তেফাক



মন্তব্য চালু নেই